জয় দেখছে বাংলাদেশ

মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইমরুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে তুলেছে ২৭১ রান। জবাবে ৪০ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৮ উইকেটে ১৬৯

মাত্র কদিন আগে বাবা হয়েছেন। নিজের প্রথম সন্তানের জন্য সেরা উপহারটা আজ মাঠে দিলেন ইমরুল কায়েস। জীবনের সেরা ইনিংস তো খেললেনই, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে সেরা ইনিংসগুলোরই একটি। দুটি ব্যাটিং বিপর্যয়ে ১৪০ বলে ১৩টি ৪ ও ৬ ছক্কায় খেলা ১৪৪ রানের ইনিংসটিকে বাড়তি মাহাত্ম্য দিচ্ছে। ইমরুলের ব্যাটে দুবার ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিম্বাবুয়েকে রানের কঠিন লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। ৪০ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৮ উইকেটে ১৬৯। জয় দিয়ে সিরিশ শুরুর করার একদম প্রান্তে বাংলাদেশ।

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দুবার ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ উদ্ধার পেয়েছে তিনটি জুটিতে। আর এই তিন জুটি তো বটেই, ওপেন করতে নেমে ৪৯তম ওভার পর্যন্ত ব্যাট করা ইমরুলই বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন। জবাবে মিরাজের ৩ উইকেট, নাজমুলের জোড়া আঘাত, মোস্তাফিজের স্টাম্প উপড়ে ফেলা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ধুঁকছে জিম্বাবুয়ে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪০ বলে ৯০ রান চাই তাদের। বাংলাদেশের দরকার মাত্র দুই উইকেট।

পথ দেখাচ্ছে ইমরুলের ব্যাট। ছবি: শামসুল হক

ধুঁকছিল বাংলাদেশও। ১৫ ওভারের মধ্যে নেই ৩ ব্যাটসম্যান। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস আজ করেছেন মাত্র ৪ রান। অভিষেকেই শূন্য রানে আউট হয়েছেন ফজলে মাহমুদ। চাতারার জোড়া আঘাতে বাংলাদেশ তখন ১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। এরপর তৃতীয় উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়েন ইমরুল কায়েস ও মুশফিক। শুরুর ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিল এই জুটি। তখনই ছেড়ে দিলে ওয়াইড হয়, লেগ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে চড়াও হতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক।

৬৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেটে আরও একটি ভালো জুটি গড়ে তোলে। এই জুটি যখন চড়াও হতে শুরু করেছিল, তখনই দ্বিতীয় বিপর্যয়। ১২.২ ওভারে ৭১ রান তোলার পর মিঠুন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ২ রানের মধ্যে মিঠুনের পথ ধরেন মাহমুদউল্লাহ আর মেহেদী মিরাজও। ৩ উইকেটে ১৩৭ থেকে মুহূর্তেই বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ১৩৯! বেনেফিট অব ডাউটে সাইফউদ্দিন বেঁচে না গেলে বাংলাদেশের বিপর্যয়টা আরও বড় হতে পারত। ৬ ব্যাটসম্যানের ৫ জনই উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়েছেন, অনেক দিন পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন আক্ষরিক অর্থেই ব্যাকফুটে!

অভিষেকে শূন্য রানে ফিরলেন ফজলে। ছবি: প্রথম আলো

জিম্বাবুয়ে ভালোমতোই ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছে তখন। এরপরই সপ্তম উইকেট জুটিতে ম্যাচটা নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দিল বাংলাদেশ। ১১৫ বলে ১২৭ রান তোলা সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের এই রেকর্ড জুটির পাল্টা আঘাতে জিম্বাবুয়ে ততক্ষণে তছনছ। ইমরুল তখন ছুটছেন তামিম ইকবালের রেকর্ড ইনিংসের দিকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ করেছিলেন তামিম, যা এখনো বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংস হয়ে আছে। সেটি ভাঙা হয়নি ইমরুলের, থেমেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসে।

শুরুতে নড়বড়ে থাকলেও সাইফউদ্দিনের ৬৯ বলে ৫০ রানের ইনিংসটাকেও বাহবা দিতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই সময়ে ইমরুলকে ঠিকমতো সঙ্গ না দিলে বাংলাদেশ দুই শর নিচে আটকে পড়ার শঙ্কায় ভুগত। বাংলাদেশ যে শেষ ১০ ওভারে ৮৫ রান তুলল, তার পেছনে এই জুটির বড় ভূমিকা আছে। ২০০ থেকে ২৫০-এ বাংলাদেশ পৌঁছেছে মাত্র ২৩ বলে।