নাজমুল পারবেন সেঞ্চুরি করতে?
নাজমুল পারবেন সেঞ্চুরি করতে?

ব্যাটিংয়ে প্রত্যয়, বড় সংগ্রহে চোখ বাংলাদেশের

পাল্লেকেলের উইকেট দেখে অনেকেই ঘাবড়ে যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ আজ ঘাবড়ায়নি। সবুজে ছাওয়া সেই উইকেটে টসে জিতে সোজা ব্যাটিংই নিয়ে নেওয়া হলো। সবুজ উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিং! সিদ্ধান্তটা একটু ‘সাহসী’ হয়ে গেল না!

দলীয় ৮ রানের মাথায় যখন সাইফ হাসান বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরলেন, তখন হয়তো কপাল কুঁচকে গিয়েছিল কারও কারও। টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়ায় টিম ম্যানেজমেন্টকে শাপ-শাপান্ত করছিলেন যারা, তাদের মুখ বন্ধ করে দিতে খুব বেশি সময় নেননি তামিম ইকবাল আর নাজমুল হোসেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এ দুজন শুরুর বিপর্যয় কিংবা ধাক্কা, যা-ই বলা হোক না, সেটি খুব ভালো ভাবে সামলালেন। ধীরে ধীরে লঙ্কান বোলারদের চোখে চোখ রেখে তামিম আর নাজমুল নিজেদের ইনিংস গড়লেন। ভিত্তি গড়লেন পাল্টা আক্রমণেরও। ২২৫ বলে ১৪৪ রানের জুটি শুরুর সব সংশয়, সব দোটানা পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে নিয়ে গেল শক্ত অবস্থানে। সেঞ্চুরির পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ১০১ বলে ৯০ রানের ইনিংসটার ‘সেঞ্চুরি’ তকমা প্রাপ্যই ছিল, কিন্তু ক্ষণিকের এক ভুল, কিংবা মনোযোগ হারানোর বলি হলো তামিমের সেঞ্চুরি-স্বপ্ন। চা বিরতির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২০০।

তামিম ফিরলেন ক্ষণিকের ভুলে

তামিম সেঞ্চুরি পাননি, তবে তাঁর সঙ্গী নাজমুল কিন্তু অনেক দিন পর নিজেকে মেলে ধরেছেন আজই। প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানের তকমা নিয়ে অনেক দিন ধরেই জাতীয় দলের অংশ হয়ে থাকা, নাজমুলকে একটা ভালো ইনিংস, একটা দায়িত্বশীল ইনিংস খেলতেই হতো। পাল্লেকেলেতে সেই দায়িত্বশীলতাই দেখা গেল নাজমুলের ব্যাটে। ধীরলয়ে নিজের ইনিংস গড়ে তিনি তাঁর সংগ্রহটাকে এমন জায়গায় দাঁড় করিয়েছেন, যেখান থেকে বড় কিছু আশা করাই যায়। চা বিরতির আগ পর্যন্ত তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭৮। ১৭২ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি ১০টি আর ছক্কা একটি।

মুমিনুল জুটি বেঁধেছেন নাজমুলের সঙ্গে।

সকালে ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের তৃতীয় ‘শূন্য’টির দেখা পান সাইফ হাসান। ফার্নান্দোর এলবির আবেদনে প্রথমে সারা দেননি আম্পায়ার। এরপর একটু ভেবেই অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেন। ফার্নান্দোর লেংথ বল সোজা সাইফের সামনের প্যাডে আঘাত করেছিল। প্রশ্ন ছিল বলটি লেগ স্টাম্পে লাগবে নাকি বেরিয়ে যাবে। রিভিউতে দেখা যায় বলটি সোজা স্টাম্পেই হিট করত। সাইফের নানাবাড়ি শ্রীলঙ্কা। আর নানাবাড়িতে এসেই কিনা ব্যর্থতাকে দীর্ঘায়িত করলেন এই তরুণ ওপেনার।

তবে তামিমের উইকেটটি কষ্ট দেবে যে কাউকেই। ম্যাচের পরিস্থিতি বিচারে ওই কাট শটটির দরকার ছিল না। তামিম দোনোমনা হয়েই শটটা খেলে বিপদ ডেকে আনেন। ফার্নান্দোর বলে কিছুটা বাউন্স ছিল। তামিমের ব্যাট ছুঁয়ে বলটি চলে যায় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা লাহিরু থিরিমান্নের হাতে। তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে এসেছেন মুমিনুল হক। তিনি ৪২ বলে ২১ রানে অপরাজিত। নাজমুলের সঙ্গে অধিনায়ক মুমিনুলের জুটিতে এখনো পর্যন্ত এসেছে ৮৭ বলে ৪৮।

সেঞ্চুরিতে চোখ নাজমুলের।

ক্যান্ডির পাল্লেকেলের উইকেটে যথেষ্ট ঘাস আছে। সে জন্যই তিন পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। রয়েছেন দুই স্পিনারও। কিন্তু টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ একটা উইকেটই পেল দল। পাঁচ বোলার নিয়ে বাংলাদেশ এ টেস্টে খেলতে নামছে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই।

দুটি সেশনই দারুণ গেছে বাংলাদেশের। দ্বিতীয় সেশনে তামিমের উইকেটটি না গেলে হয়তো আরও বেশি স্বস্তি থাকত বাংলাদেশ-শিবিরে। তবে এই মুহূর্তে দলের ব্যাটিংয়ের যে অবস্থা, তাতে বাজে কিছু না ঘটলে ৪৫০ রানের আশেপাশে সংগ্রহ আশা করাই যায়। এখনো পর্যন্ত ক্যান্ডির পাল্লেকেলে মাঠের উইকেট ঘাস নিয়ে লঙ্কান পেসারদের ভীতিকর বানাতে পারেনি, উল্টো ব্যাটসম্যানদের জন্য শট খেলার সুযোগ এনে দিয়েছে। আশ করা যায় স্পিনারদের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠার আগে এটি আরও কিছু সময় ব্যাটসম্যানদের কাজে লাগবে। সে সুযোগটা নিন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।