ব্যাট কথা বলেছে মুশফিকের।
ব্যাট কথা বলেছে মুশফিকের।

বোলারদের টুর্নামেন্টেও চেনা মুশফিক

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সতীর্থদের জটলা থেকে একটু বেরিয়ে এলেন। ফাঁকা জায়গায় টুর্নামেন্টসেরার ডামি চেকটাকে ব্যাট বানিয়ে বেশ কবার শ্যাডো করলেন। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে সর্বোচ্চ রান করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন। তবুও মুশফিকুর রহিমের রানক্ষুধা যেন মেটেনি!

প্রেসিডেন্টস কাপে ব্যাটসম্যানদের জন্য রান করা কতটা কঠিন ছিল, সে তো দেখাই গেছে। বেশির ভাগ তারকা ব্যাটসম্যানই ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতি আর তীব্র চাপে যদি ধারাবাহিক ব্যর্থই হবেন, তিনি মুশফিকুর রহিম কেন! নাজমুল একাদশের হয়ে শুরুটা অবশ্য তাঁরও ভালো ছিল না। মাহমুদউল্লাহ একাদশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১ রানে বোল্ড হওয়ার পর প্রশ্ন উঠল তাঁর ফর্ম নিয়ে। দুটি দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ আর বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের প্রথম ম্যাচ-টানা তিনটিতে বোল্ড হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠল। নির্বাচক হাবিবুল বাশার এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘মুশফিক প্রমাণিত খেলোয়াড়, সময়মতোই সে রান করবেই।’

বেশি সময় নেননি মুশফিক। পরের ম্যাচেই করেছেন ১০৩ রান। এরপর ৫২ ও ৫১ রানের আরও দুটি ঝলমলে ইনিংস। ফাইনালে করেছেন ১২ রান। এরপরও তাঁকে টপকে যেতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। ৫ ম্যাচে ৪৩.৮০ গড়ে ২১৯ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। দলের টপ অর্ডার নিয়মিত ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিটি ম্যাচে তাঁকে খেলতে হয়েছে ২-৩ উইকেট হারানোর চাপ নিয়ে। কিন্তু মুশফিক ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন।

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে মুশফিকের ব্যাটিং গড় ৪৩।

মাঠের চারপাশে খেলেই রান করেছেন মুশফিক। সবচেয়ে সফল ছিলেন স্কয়ার লেগ অঞ্চলে। এই পজিশনে ৩২ বলে তুলেছেন ৫৩ রান, স্ট্রাইকরেট ১৬৬। চাপের মধ্যে খেলতে হয়েছে বলে পয়েন্ট, থার্ড ম্যান, ফাইন লেগে স্ট্রাইকরেট খুব বেশি নয়। এই তিন অঞ্চলে ১২৫ বলে ৪১.৬ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ৫২ রান। শক্তির জায়গা কাজে লাগিয়ে অন সাইডে ৮৭.২ স্ট্রাইকরেটে তুলেছেন ৬০ শতাংশ (১৩০) রান।

উদ্ভাবনী শট খেলতে পছন্দ করেন মুশফিক। স্কুপ, রিভার্স স্কুপ, স্লগ সুইপ, রিভার্স সুইপের মতো শট যেমন খেলেছেন; ব্যাকরণ মেনে ড্রাইভ, পুল, কাট শটও নিয়মিত দেখা গেছে তাঁর ব্যাটে। তামিম একাদশের বিপক্ষে ৫১ রানের ইনিংস দেখে তাঁর দলের কোচ টবি র্যাডফোর্ড (বর্তমানে এইচপিরও কোচ) টুইট করেছেন, ‘শরীরের শক্তি কীভাবে শটে রূপান্তর করতে হয় দেখুন। সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ, শক্তি আর টাইমিং-অসাধারণ এক উদাহরণ...।’ অবশ্য কখনো কখনো প্রিয় স্কুপ খেলতে গিয়ে উইকেটও দিয়ে আসতে হয়েছে। তবে এতে নেতিবাচক কিছু দেখেন না নির্বাচক হাবিবুল বাশার, ‘সব ব্যাটসম্যানের কিছু পছন্দের শট থাকে। সেটাতে যেমন রান আসে, আবার আউটও হয়। চরিত্রের বাইরে গেলে বরং রান কমে যেতে পারে। সে তার খেলাটা খুব ভালো বোঝে, এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

মুশফিক দেখিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের মানদণ্ডটা কেমন হওয়া উচিত।

মুশফিক ধারাবাহিকভাবে ভালো করছেন, এটি হাবিবুলের কাছে নতুন নয়। এরপরও এবার মুশফিকের ছন্দ দেখে মুগ্ধ হাবিবুল, ‘সিরিজটা ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। বোলাররা সবাই একসঙ্গে ভালো করছে, সাধারণত এটা দেখা যায় না। আবহাওয়া-কন্ডিশনের কারণে মিরপুরের উইকেটে এবার ধারাবাহিক রান করা খুবই কঠিন ছিল। এই সময়ে নিজের দৃঢ়তা দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুশফিক সেটিই দেখিয়েছে।’

ভালো খেলে টুর্নামেন্টসেরা হলেও দল জিততে না পারায় ফাইনাল শেষে মুশফিকের মুখে খুব একটা হাসি দেখা যায়নি। পুরস্কার নিতে গিয়ে নিজেই বলেছেন, ‘সতীর্থদের বলতে চাই, দুঃখিত। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার কিছুই না, যদি শিরোপা না জিততে পারি। তবে আমাদের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফরা অনেক চেষ্টা করেছে।’

নিজের দল ফাইনালে হারলেও মুশফিক তৃপ্ত পুরো টুর্নামেন্টে তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে, ‘সত্যি খুবই গর্বিত, যেভাবে তরুণ খেলোয়াড়েরা খেলেছে। এটাই আমাদের মানদণ্ড হওয়া উচিত, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যদি ধারাবাহিক ভালো খেলতে চাই, তাহলে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগাতে হবে। যে প্রতিভা আছে আমাদের, এই সিরিজে যারা আমাদের সঙ্গে খেলল, আশাবাদী হওয়ার মতোই।’