এই ধর্মঘটে যেসব খেলোয়াড় সম্পৃক্ত হয়েছে, তারা বাংলাদেশের অপরিহার্য খেলোয়াড়। এই খেলোয়াড়দের চোখে যখন বোর্ডের সমস্যাগুলো ধরা পড়েছে, তার মানে এই বোর্ডে যাঁরা আছেন, তাঁরা কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা ব্যর্থ হওয়ার কারণেই খেলোয়াড়দের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। তবে ক্রিকেটের স্বার্থে সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত। এটা একটা সমস্যা, সেটির সমাধানের জন্য খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা দুই পক্ষকে মিলেমিশেই কাজ করতে হবে।
আমাদের সামনে কিছু খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট আছে। প্রিমিয়ার লিগ আছে, ভারত সিরিজ আছে। এখন কিন্তু প্রতিটি টেস্ট, প্রতিটি ওয়ানডে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি প্রতিটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও র্যাঙ্কিংয়ে অনেক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং খেলায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, ঘরোয়া ক্রিকেটে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মাত্র কদিন হলো শুরু হলো...এই বাধাগুলো ক্রিকেটের ক্ষতি করতে পারে। তাই ক্রিকেটের ক্ষতি না করে এই বাধাগুলো যাতে পেরোতে পারি, সে রকম একটা পরিষ্কার পথ দেখা উচিত আমাদের।
আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের এই দেনদরবারের বিষয়গুলো ক্রিকেটারদের যে অ্যাসোসিয়েশন আছে—কোয়াব, তাদের দেখার কথা। এখন এটা বলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে জানি না, তবে প্রায় দশ-বারো বছর ধরে যাঁরা কোয়াবে আছেন, তাঁরা ক্রিকেট বোর্ডেও আছেন। কোয়াবের ব্যর্থতার কারণেই খেলোয়াড়েরা আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ডের কাছে যেতে পারেনি। আর এখানে যে খেলোয়াড়দের সমবেত হতে দেখলাম, তারা কোনো সংগঠনের অধীনে নেই। কিছু বর্তমান খেলোয়াড়, কিছু সাবেক খেলোয়াড় মিলে এই সমস্যাটা তুলে ধরেছে।
আমি দেশে থাকি না, তবে খবরের কাগজে যখন দেখি একটা ছেলে ওভারে ৯০ রান দিয়ে দিচ্ছে, যখন শুনি আম্পায়ারদের আম্পায়ারিং ভালো হচ্ছে না, যখন শুনি খেলার আগেই মানুষ ফল জেনে যাচ্ছে, বা শুনি বিপিএলের মাধ্যমে খেলোয়াড় বাছাই শুরু করবে...এই চিত্রগুলোই বলে দেয়, আমরা একটু নড়বড়ে অবস্থানে আছি। আমাদের যে পরিকল্পনাগুলো আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে যে টিম আছে, সেই টিম দিয়ে আমরা ঠিকভাবে সব করতে পারছি না বলে এই জায়গাগুলোতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। যে ১১টা দাবি নিয়ে খেলোয়াড়েরা দাঁড়িয়েছে, এর কিছু হয়তো ১০০ ভাগ যুক্তিযুক্ত, কোনোটি হয়তো ৭০ ভাগ, কোনোটি হয়তো ৫০ ভাগ...এই দাবিগুলোর সামনে বোর্ড নিজেদের গা বাঁচানোর আগে বোর্ডের খতিয়ে দেখা উচিত যে আসলেই এই প্রতিবাদগুলো কতটুকু সত্য, কতটুকু যুক্তিযুক্ত। আমার মনে হয়েছে যে এই অবস্থাটা বোর্ডের জন্য লজ্জাজনক, যে এ রকম একটা দাবি নিয়ে খেলোয়াড়দের সোচ্চার হতে হচ্ছে। কারণ, খেলোয়াড়দের কাজ মাঠে খেলা। কিউরেটর কত টাকা পাবে, দেশি কোচ কাকে নেওয়া হবে, ঘরোয়া ম্যাচে আম্পায়ার কে হবে—এগুলো দেখা কিন্তু খেলোয়াড়দের কাজ নয়। কিন্তু খেলোয়াড়েরা যখন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, এটা একটা বড় সংকেত যে, আসলেই এই কাজগুলো কতটুকু ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে!
বাংলাদেশের জন্য সামনে চ্যালেঞ্জিং সময়। কারণ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিটি টেস্টই গুরুত্বপূর্ণ। টি-টোয়েন্টিগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তার ওপর পরের সিরিজটা ভারতে। আমাদের এখন পুরো উদ্যমে অনুশীলন শুরু করার কথা ছিল, পুরো উদ্যমে প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল। এত বড় একটা সিরিজ! ভারতে কিন্তু আমরা খুব বেশি একটা খেলতে যাই না। সেখানে আমরা দ্বিতীয় সফরে যাচ্ছি প্রায় পূর্ণাঙ্গ একটা সিরিজ নিয়ে। একটা বড় আশার আলো দেখছিলাম সৌরভ গাঙ্গুলী বিসিসিআইয়ের সভাপতি হওয়ায়। সব মিলিয়ে একটা ভালো লাগা অনুভূতি ছিল। সেই জায়গায় এত বড় একটা সিরিজের আগে এত বড় একটা ধাক্কা। খেলোয়াড়দের মানসিক ব্যাপারটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বোর্ডের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে খেলেন না, খেলে খেলোয়াড়েরা। জিতলে খেলোয়াড়দের সুনাম হয়, হারলে খেলোয়াড়দের দুর্নাম হয়। বোর্ডের কর্মকর্তাদের তখন পাওয়া যায় না। এই সিরিজের আগে এত বড় একটা ধাক্কা আমার মনে হয় যত সহজে ও যত কম সময়ে মিটিয়ে ফেলা যায় তত ভালো।
আমিনুল ইসলাম
সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক