এজবাস্টন টেস্টে ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। ভারতের ওপরের সারির ৫ ব্যাটসম্যানকে ৯৮ রানে আউট করার পর ম্যাচটায় ইংল্যান্ডের অবস্থানই দাপুটে মনে হচ্ছিল। কিন্তু ঋষভ পন্ত ও রবীন্দ্র জাদেজার জুটির পর প্রথম দিন বিকাল থেকেই ম্যাচটা ভারতের। তখন থেকেই ইংল্যান্ডকে ছুটতে হচ্ছে ভারতের পেছনে।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষেও গল্পটা এমনই। ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৫ রান করেছে, এগিয়ে গেছে ২৫৭ রানে। চেতেশ্বর পূজারা ১৩৯ বলে ৫০ রান করে অপরাজিত আছেন। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন ৪৬ বল খেলে ৩০ রান করা পন্ত।
স্কোরবোর্ডে ৫ উইকেটে ৮৫ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। এরপরের গল্পে নায়ক শুধু জনি বেয়ারস্টো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রেন্ট ব্রিজ ও হেডিংলির পর ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টনেও সেঞ্চুরি করলেন এই ডানহাতি। টানা তিন ম্যাচে তাঁড় তিন শতকের সবকটিই এসেছে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। এটি বেয়ারস্টোর ক্যারিয়ারের ১১তম টেস্ট সেঞ্চুরি।
আজ দিনের শুরু থেকেই অধিনায়ক বেন স্টোকসকে নিয়ে প্রতি-আক্রমণের পথ বেছে নেন বেয়ারস্টো। প্রতিপক্ষ দলের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি বেয়ারস্টোর সঙ্গে কথার যুদ্ধ জড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি কাজে দেয়নি। বল পুরোনো হওয়ার পর ভারতীয় বোলারদের ফুল ও শর্ট লেংথের বলগুলোকে মাঠের চারপাশে পাঠিয়েছেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
তবে সঙ্গীর অভাব ভুগিয়েছে বেয়ারস্টোকে। শার্দুল ঠাকুরের পর যশপ্রীত বুমরার হাতে দুইবার জীবন পেলেও বেন স্টোকস সেটিকে কাজে লাগাতে পারেননি। শার্দুলের বলে বুমরার অবিশ্বাস্য ক্যাচেই থামে স্টোকসের ইনিংস। ৩৬ বল খেলে ২৫ রান করেন তিনি। স্টোকসের বিদায়ে বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৬৬ রানের জুটির সমাপ্তি ঘটে।
এরপর উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান স্যাম বিলিংসকে নিয়ে আরও ৯২ রান যোগ করেন বেয়ারস্টো। মোহাম্মদ শামির বলে কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে আউট হওয়ার আগে বেয়ারস্টোর ব্যাট থেকে আসে ১৪০ বলে ১০৬ রানের ইনিংস। ১৪টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল বেয়ারস্টোর ইনিংসে।
ইংল্যান্ডের ইনিংস এরপর দীর্ঘ হয়নি। মোহাম্মদ সিরাজের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ডের লেজের সারির ব্যাটসম্যানরা। স্টুয়ার্ট ব্রড ১ রান করে আউট হন। ৫৭ বলে ৩৬ রান আসে বিলিংসের ব্যাট থেকে। অ্যান্ডারসন (৬) ও ম্যাথু পটস (১৯) ১৭ রানের জুটি গড়লে ইংল্যান্ড যায় ২৮৪ রান পর্যন্ত। ৪ উইকেট নেওয়া সিরাজ ছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার। বুমরা ৩টি ও শামি ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান করা ভারত ১৩২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। কিন্তু শুরুটা প্রত্যাশামতো হয়নি। অ্যান্ডারসনের করা ইনিংসের তৃতীয় বলেই শুবমান গিল (৪) জ্যাক ক্রলির তালুবন্দী হন। হানুমা বিহারির (১১) ইনিংসও দীর্ঘ হতে দেননি ব্রড। চারে নেমে আরেকবার ব্যর্থ কোহলি। এবার স্টোকসের ভালো লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল কোহলির গ্লাভস ছুঁয়ে উইকেটকিপার বিলিংসের গ্লাভসে যায়। কিন্তু বলটি প্রথম চেষ্টায় লুফে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো জো রুট অবশ্য সজাগ ছিলেন। বিলিংস ছেড়ে দিলেও বলটি তিনি লুফে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন। ৪০ বল খেলে ২০ রান করে হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় কোহলিকে।
তবে দিন শেষে ভারতীয়দের মুখে হাসি ফিরিয়ে এনেছেন পূজারা ও পন্ত। দুজনের ৯১ বলে ৫০ রানের অপরাজিত জুটি ভারতকে বড় লিডের আশা দেখাচ্ছে দ্বিতীয় ইনিংসেও, সঙ্গে ২০০৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়েরও।