এ যেন লেখা ছিল। এটাই হবে। তিন বছর আগে বেঙ্গালুরুতে তিন বলে ২ রান নিতে না পারার ব্যর্থতার দায় ছিল মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের। আজ সে দায়টা মেটালেন দুজন। সেদিন প্রথমে আউট হয়েছিলেন, আজ তাই পথ দেখালেন মুশফিক। আর সেদিন যা করতে পারেননি, এবারে সেটাই করলেন মাহমুদউল্লাহ। ছক্কা মেরে এনে দিলেন ৭ উইকেটের জয়। তারপর এমন ভাবে উদ্যাপন করলেন, যেন এ ফলটাই স্বাভাবিক।
হাফ সেঞ্চুরি করে বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে বারবার আঘাত করলেন মুশফিকুর রহিম। যেন বুকের ওপর জমে থাকা পাথরটা ভাঙলেন। দেশের ক্রিকেটর ওপর দিয়ে যে ঝড়টা বয়ে গিয়েছে, ভারত সফরে তা তো অনেক ওজনের পাথর সমান বড় চাপই। আর ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুর সে ম্যাচের কথা যে ভোলেননি কেউই। ৪৩ বলে ৬০ রানের অপরাজিত এক ইনিংসে আজ সব ভুলিয়ে দিয়েছেন মুশফিক।
শেষ ২ ওভারে ২২ রান দরকার ছিল। শেষ ১০ বলে ২০। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে চার। পরের বলেও চার। ওতেই ফিফটি হলো, ৪১ বলে। তাতে উদ্যাপন দেখে মনে কু ডাকছিল একটু। এমনভাবেই টানা দুই চার মেরে আগাম উদ্যাপন করেছিলেন মুশফিক। তিন বছর আগে, সেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। আজ আর সে ভুল যেন না হয় সেটাও নিশ্চিত করলেন মুশফিক। পরের দুই বলে আরও দুই চার। শেষ ওভারকে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা বানিয়ে দিলেন। শেষ ওভারে ৪ রান নিতে কোনো অসুবিধাই হয়নি মাহমুদউল্লাহর।
দীপাবলি অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কয়েক দিন হলো। সেই রেশ তো এখনো দিল্লির আবহাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে। এরই মাঝে রংধনুর রং মেখে স্বাগতিকদের উৎসবের প্রস্তুতি ছিল পুরো মাত্রায়। বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া যেন সময়ের ব্যাপার! কিন্তু দিল্লি শাসন করে সব আলো কেড়ে নিলেন মুশফিক। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহই তো বললেন, ‘সব কৃতিত্ব মুশফিকের। সৌম্য ও নাঈমও ভালো করেছে। কিন্তু মুশফিকেরই বেশি কৃতিত্ব প্রাপ্য।’
জিততে হলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২০ ওভারে ১৪৯। ওভার প্রতি গড়ে সাত রানের একটু বেশি। টি টোয়েন্টির এই যুগে এ আর এমনকি! কিন্তু সাকিব, তামিমবিহীন বাংলাদেশের জন্য এই রান তো বড় লক্ষ্যই। কিন্তু তাদের অভাব একবারের জন্য মনে করতে দেননি মুশফিক। আজকের দিনটা ছিল দলের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারেরই। ব্যাট হাতে দিল্লি শাসন করে বাংলাদেশকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। ৪৩ বলের ইনিংসে আটটি চার ও একটি ছক্কা।
অবশেষে দুঃখ ঘুচিয়ে দেওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলার জন্য বাড়তি তাগিদ অনুভব করেন কি না। কী দারুণভাবেই না প্রশ্নটাকে এড়িয়ে দিলেন মুশফিক, ‘ক্রিকেটার হিসেবে উন্নতির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করি প্রতি ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে ভালো খেলতে পারব।’ বেঙ্গালুরুর সঙ্গে দিল্লির মুশফিকের তুলনা বলছে, চেষ্টা কাজে লাগছে তাঁর।
আরও পড়ুন :