ম্যাককালামের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে মাত্র একটা ম্যাচ জিতবে। আর তা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। জ্যোতিষী হিসেবে ম্যাককালামের ভবিষ্যৎ নেই! তবে এটা আমরা ধরেই নিয়েছিলাম যে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলে বাংলাদেশ দুইটা পূর্ণ পয়েন্ট পাবে। মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। হায়, বৃষ্টি তুমি তো ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ খেলার দিনেও আসতে পারতে!
এবার বিশ্বকাপে এ নিয়ে তিনটা ম্যাচ ভেসে গেল। এটাও একটা রেকর্ড। এর আগে বিশ্বকাপে কখনো দুটোর বেশি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ম্যাচ বৃষ্টির কারণে বাতিল হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ চুল ছিঁড়বে; শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচ ধুয়ে যাওয়ায় মাথা আছড়াবে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ।
সৈয়দ শামসুল হকের চমৎকার একটা কবিতা আছে, ‘বুনোবৃষ্টির গান’:
‘ইচ্ছা আসে মেঘের মতো অন্ধ সীমানায়
একলা এক জানালা খোলা বাংলাবাড়ির ঘর:
একলা এই রংগপুরে হঠাৎ কি যে হয়!
পাবো না জানি তোমাকে পেলে হৃদয় দেয়া যায়;
বৃষ্টি এসে ভেজায় আবার সেই দুরাশার মাঠ।’
এই কবিতাটা আমার এই মুহূর্তের দশার সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। আমি বোস্টনে বন্ধুর বাংলোবাড়িতে খোলা জানালার পাশে বসে আছি। এখানকার সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় খেলা শুরুর কথা ছিল। খেলা যে আর হবে না, তা বুঝতেই পারছিলাম। ক্রিকইনফোতে কিশোর কুমারের গানের কলি উৎকলিত হয়েছে, রিমঝিম গিরে শাওন...
আমার অবস্থা সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার মতো... পাবো না জানি তোমাকে পেলে হৃদয় দেয়া যায়...বৃষ্টি এসে ভেজায় আবার সেই দুরাশার মাঠ...
এমন দিনেই বলা যায়: এত বিশাল একটা আয়োজন, তাহলে বৃষ্টির কথা আয়োজকদের কি মাথায় ছিল না! এমন দিনেই বলা যায় যে খেলাটা শেষ পর্যন্ত খেলাই। বৃষ্টির কারণে খেলা না হওয়ায় পয়েন্ট ভাগ করে দেওয়া হলো। এই নিয়মটাই বলে দিচ্ছে, খেলা ব্যাপারটাকে বেশি সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। এর মূল উদ্দেশ্য আনন্দ, শরীরচর্চা, বন্ধুত্ব।
বৃষ্টির জন্য ১৯৯২ সালে পাকিস্তান পরের ধাপে যেতে পেরেছিল এবং হতে পেরেছিল চ্যাম্পিয়ন। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ হতে পারেনি বৃষ্টির কারণে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে পেরেছিল। এসবই খেলার অংশ। খেলা তাই জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন নয়। খেলায় হেরে যাওয়া মানে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়।
বৃষ্টি এসে ভেজায় আবার সেই দুরাশার মাঠ। বাংলাদেশ যদি এবারের ২০১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যেতে চায়, তাকে যেতে হবে বীরের মতো। বড় বড় দলকে হারাতে পারতে হবে! সেমিতে যাব, কিন্তু বড় ম্যাচ জিতব না, তা তো আর হয় না। আচ্ছা আচ্ছা, সেমিফাইনালে বাংলাদেশ যাবে কি যাবে না, সেটা পরের কথা, প্রতিটা ম্যাচে যেন বাংলাদেশ নাছোড় লড়াই করে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, আবার ক্রিকেট সাহসীদেরও খেলা। জিগীষা, জয়ের ইচ্ছা ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না।
আমার একটা বই আছে—সফল যদি হতে চাও (প্রথমা প্রকাশন)। তরুণদের উদ্দেশে সে বইয়ে আমি লিখেছি, প্রচুর খেলো, খেলাধুলায় বেশি বেশি করে অংশগ্রহণ করো। খেলা শুধু জয়ের জন্য নয়, পরাজয় সুন্দরভাবে মেনে নেওয়া শেখার জন্যও। জীবনে শুধু জয়ের মুহূর্ত আসে না, অনেক হতাশাক্লিষ্ট রাতও আসে। আমরা যদি হাসিমুখে জয়-পরাজয় মেনে নিতে পারি, আমাদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যায়।
বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত, এই খবর ভেসে উঠল হতাশার মতো! কিন্তু আমাদের হতাশ হলে চলবে না। খেলা যে খেলা মাত্র, খেলা যে খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়!