অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে দ্বিশক করতে দিলেন না নাঈম হাসান
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে দ্বিশক করতে দিলেন না নাঈম হাসান

বুদ্ধির ঝিলিকে নাঈমের ৬

সকালের সেশনে নাঈম হাসান বোলিংয়ে আসার এক ওভার আগে বল করেন সাকিব আল হাসান। সে ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস সাকিবের একটি বল খেলতে গিয়ে ব্যাপারটি লক্ষ করেন। ভালো জায়গা থেকে বলটা উঠেছে। অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দিনেশ চান্দিমালকে হাতের ইশারায় তা বোঝান ম্যাথুস। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকও নিশ্চয়ই তা দেখেছেন। নইলে এক ওভার পরই নাঈমের হাতে বল তুলে দেওয়ার খুব কাছাকাছি কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

কেন? সে প্রশ্নের উত্তরটা মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে একটি টিভি চ্যানেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন। শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘...পৃথিবীর সব নিয়মেরই ব্যতিক্রম আছে, দুই প্রান্তে ডানহাতি ব্যাটসম্যান দেখে অধিনায়ক যে প্রথা ভেঙে নাঈমকে আক্রমণে এনেছেন, সেটি প্রশংসার দাবিদার।’ ক্রিজে দুজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে বোলিংয়ে বাংলাদেশের কোনো ডানহাতি অফ স্পিনারকে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া যে দেখা যায় না।

নাঈমের নিজেকে প্রমাণ করার উল্লাস

মুমিনুলেরও তখন দরকার পড়েছিল। তাই দ্বিতীয় দিনে সকালের সেশনে খেলার ১৯ ওভার পেরিয়ে যাওয়ার পর বল তুলে দেন আগের দিনের সেরা বোলারকে। মাঝে এ সময়ে ম্যাথুস–চান্দিমাল দুজনেই ডানহাতি হওয়ায় বাংলাদেশ অধিনায়ক হয়তো প্রথা মেনেই নাঈমকে ডাকেননি। শরীফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদের কয়েক ওভার ছাড়া ধারাবাহিকভাবে সাকিব–তাইজুল জুটি চলেছে—দুই বাঁহাতি স্পিনার। এর মধ্যে ডানহাতি নাঈমকে নিয়ে আসার কারণ হতে পারে, উচ্চতার কারণে বল একটু তুলতে পারেন এবং এর সঙ্গে সাকিব–তাইজুলের চেয়ে বেশি বাঁক, যেটা আজ দেখা গেল নাঈমের কাছ থেকে। কিন্তু আজ তাঁর ইনিংসে ৬ উইকেট পাওয়ার পেছনে এর সরাসরি অবদান কমই।

ম্যাথুস–চান্দিমালের ১৩৬ রানের জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলার পথে ছিল, এ অবস্থায় খানিকটা বুদ্ধি খাটিয়ে চান্দিমালকে তুলে নেন নাঈম। অফ সাইডে ফিল্ডার কমিয়ে লেগে সাজিয়ে চান্দিমালকে প্রলুব্ধ করেন রিভার্স সুইপ খেলতে। ফাঁদে পা–ও দেন চান্দিমাল। এর পর থেকেই তো শ্রীলঙ্কার পতন শুরু? ৩১৯ রানে নাঈম পঞ্চম উইকেট ফেলার পর শ্রীলঙ্কা তুলতে পেরেছে ৭৮। এই ৫ উইকেটের মধ্যে ৩টিই নাঈমের। সব মিলিয়ে তাঁর বোলিং বিশ্লেষণ ৩০–৪–১০৫–৬। মাত্র ৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে তাঁর সেরা বোলিং।

মধ্যাহ্নভোজন বিরতির দুই ওভার আগেই শ্রীলঙ্কার ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজটা শুরু করেন নাঈম। (১১৪) চান্দিমালকে আউট করার ওভারেই পঞ্চম বলে নিরোশান ডিকভেলা তাঁকে স্রেফ উইকেটটি ‘উপহার’ দেন। অফ স্পিনার হয়েও বল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের একটু ভেতরে ঢুকিয়েছেন, নিচু হয়ে বোল্ড।

চট্টগ্রামে নিজের ঘরের মাঠেই ‘কামব্যাক’ নাঈমের

পরের সেশনে বিশ্ব ফার্নান্দো–ম্যাথুসের জুটি ভাঙতে চেষ্টা কম করেননি নাঈম। বল একটু তুলে বাঁক খাওয়ালেও দশে নামা বিশ্ব ফার্নান্দোও তাঁকে দেখেশুনে সহজে খেলেছেন। অতএব বিশ্রাম, কিন্তু দরকারের সময় আবারও নাঈমকে ডেকে ফল পেয়েছেন মুমিনুল। এগারোয় নামা আসিতা ফার্নান্দো ১৭ বল খেলে বিশ্ব ফার্নান্দোর মতো জমাট হয়ে উঠছিলেন। ডাক পড়ে নাঈমের। নিজের তৃতীয় ওভারে গিয়ে সেই বাঁকে ভরসা রেখেই পেলেন সাফল্য—আসিতা বোল্ড! হয়ে যায় তাঁর ৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে ইনিংসে তৃতীয়বারের মতো ৫ উইকেট। ষষ্ঠ উইকেটটি ম্যাথুসের ‘উপহার’ হলেও গোটা দিন ভালো জায়গায় বল ফেলার পুরস্কারই পেয়েছেন নাঈম।

নাঈমের টেস্ট অভিষেক ২০১৮ সালে। ২০২০ এবং এ বছর বাদে প্রতি বছর একটি করে টেস্ট খেলেছেন নাঈম। ২২ বছর বয়সী এ স্পিনার জহুর আহমেদ চৌধুরীর পাটা উইকেটে যেভাবে দরকারের সময় সাড়া দিয়ে উইকেট নিলেন, তাতে টেস্ট দলে জায়গা পাকার দাবিটা আরও বড় হলো।