>ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এ ঘটনার পর বিদেশ সফরে বাংলাদেশ দলের নিরাপত্তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। দুই মাস পর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে আইসিসি
বিসিবি একাডেমি মাঠ কিংবা কার্যালয়—সবখানে একটাই আলোচনা, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলা। নৃশংস এ হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে বাংলাদেশ দল। ক্রাইস্টচার্চের যে মসজিদে হামলা হয়েছে, সেখানে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাঁদের সঙ্গে ছিল না কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। কাল থেকে তাই প্রশ্ন উঠছে, ভবিষ্যতে বিদেশ সফরে গেলে বাংলাদেশ দলের নিরাপত্তায় বিসিবির উদ্যোগ হবে কী?
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস না পেলে কোনো দেশে সফর করবে না বাংলাদেশ। আজ শনিবার বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরীও প্রায় একই কথা বললেন। দুপুরে তিনি জানালেন, কাল ঘটনার সময় কীভাবে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রেখেছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইটের সঙ্গে। নিজামউদ্দীন বললেন, এ ঘটনায় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বারবার দুঃখ প্রকাশ করেছে তাঁদের কাছে। নিউজিল্যান্ডের কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না, এমন ঘটনা ঘটতে পারে তাদের দেশে। মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা, বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া আর ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাতিল হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট নানাভাবে বিসিবিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, অনুরোধ করেছে, বাংলাদেশ যেন এই ঘটনায় নেতিবাচক ধারণা না নেয় তাদের দেশ কিংবা বোর্ড সম্পর্কে। বিসিবি মনে করে, এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুই বোর্ডের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে, ভবিষ্যতেও কঠিন সময়ে দুই বোর্ড যেন একে অপরের পাশে থাকে।
দুদিন ধরেই একটা প্রশ্ন উঠেছে, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমন কোনো দেশে সফরে গেলে সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে একটা অগ্রবর্তী দল পাঠায়। সফরের সঙ্গেও থাকে নিজস্ব নিরাপত্তা দল। ভবিষ্যতে বিসিবিও কি এটা অনুসরণ করবে? বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ এটার পক্ষে, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশকেও এটা করা উচিত। আপনি এখন কোথাও বলতে পারবেন না নিরাপদ।’
তবে বিসিবির প্রধান নির্বাহীর যুক্তি ভিন্ন, তাঁর কথা হচ্ছে, একটা দেশে গিয়েই তাদের নিরাপত্তা সমস্যা ধরে ফেলবেন দলের সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা, এটা আশা করা ঠিক নয়। নিজামউদ্দীন মনে করেন, সব সময়ই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আয়োজক বোর্ডের, ‘যখন কোনো দল বিদেশে যায়, তখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আয়োজক ক্রিকেট বোর্ডের। অন্যান্য বিষয়ও ঠিকঠাক আছে কি না, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের। এটাই প্রচলিত নিয়ম।’ তবে প্রধান নির্বাহী বিসিবি সভাপতির কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক, ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই আমরা সফর করব।’
আপাতত বাংলাদেশের ‘ভবিষ্যৎ সফর’ হচ্ছে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে। মে মাসে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপ নিয়েই এখন যত চিন্তা। নিউজিল্যান্ডে কাল প্রথম হতে পারে, ইংল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা আগেও ঘটেছে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত আইসিসির। কালকের ঘটনার পর আইসিসি অনেক সতর্ক বলেই জানালেন নিজামউদ্দীন। এরই মধ্যে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, প্রতিটি সদস্য দেশকে তাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা পাঠিয়েছে। বিসিবিও পেয়েছে। বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন প্রথম আলোকে বললেন, ‘আইসিসি সব সময়ই কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে। তারা আমাদের কাছে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা পাঠিয়েছে। সব সদস্য দেশের সঙ্গে তারা আবার কথা বলছে। এ ঘটনার পর আইসিসি এখন আরও সতর্ক হবে, আরও সচেতন হবে। আপনারা জানেন, আগে কিছু ঘটনা ইংল্যান্ডেও ঘটেছে। নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার পর আরও সতর্কতা বাড়বে। যে বোর্ডগুলো নিরাপত্তা নিয়ে একটু উদার থাকে, আয়োজক দেশের ওপর নির্ভর করে, তারাও হয়তো ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা নিয়ে আরও সতর্ক থাকবে।’