অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপের ট্রফি পাশে নিয়ে আকবর আলী। এই ট্রফি আগামীর পথে অনুপ্রেরণা জোগাবে বাংলাদেশের সেই বিশ্বজয়ী দলের সবাইকে।
অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপের ট্রফি পাশে নিয়ে আকবর আলী। এই ট্রফি আগামীর পথে অনুপ্রেরণা জোগাবে বাংলাদেশের সেই বিশ্বজয়ী দলের সবাইকে।

বিশ্বজয়ের এক বছর

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়াই সবচেয়ে বড় সাহস

এক বছর হয়ে গেল। অথচ যেন সেদিনের কথা! সেনওয়েস পার্কে আমরা যুব বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে বিজয় উদ্‌যাপন করছি। আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে ফিরে আসি দেশে। আমাদের নিয়ে কত ভালো ভালো পরিকল্পনা করল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে তার প্রায় কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্বকাপ জয়ের সেই বিকেলের কথা ভাবলে সবার আগে মনে পড়ে শিরোপা নিয়ে উদ্যাপনের স্মৃতি। সে কি পাগলাটে উদ্যাপন! একটু চুপচাপ বলে আমার নিজের মধ্যে রোমাঞ্চটা খুব বেশি কাজ করছিল না। তবে দলের অন্যদের আনন্দ দেখেই মনে হয় আমিও সেদিন উল্লাস করেছিলাম।

ম্যাচের আগে আমাদের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় ছিল না আমরা চ্যাম্পিয়নও হতে পারি। দলের সবাই খুব স্বাভাবিক ছিল। পচেফস্ট্রুমে সেই বিকেলে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি এসেছিলেন খেলা দেখতে। তাঁদের উপস্থিতিতে পরিবেশটাই পাল্টে গিয়েছিল। জানতাম বাংলাদেশিরা মাঠে থাকবেন, তবে সেটা ভারতীয় দর্শকের তুলনায় স্টেডিয়ামের ৩০ ভাগই হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু এত দর্শক হবে কল্পনাও করিনি। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারতের দর্শক ছিল প্রায় সমান।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের খুঁটিনাটি এখন ততটা মনে নেই। তবে বিশ্বকাপের পর বেশ কয়েকবার ফাইনালের ভিডিও দেখেছি। আমরা যা যা চিন্তা করে মাঠে নেমেছিলাম, সেদিন তার সবই কাজে লেগে গিয়েছিল।

ম্যাচের আগের দিন আমাদের লম্বা বৈঠক হয়েছিল। আমি, প্রধান কোচ ও দলের কম্পিউটার বিশ্লেষক সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে ম্যাচের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক। ভারতের প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্যই আমাদের আলাদা পরিকল্পনা ছিল। খেলাটা যদি আবার দেখেন, দেখবেন যে ওদের ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালের জন্য যে পরিকল্পনা করেছিলাম, আরেক ওপেনারের জন্য করেছিলাম পুরো তার উল্টো পরিকল্পনা। জয়সওয়ালকে আমরা স্টাম্পের বাইরে বল করেছি। আরেক ওপেনারকে করেছি একদম স্টাম্প বরাবর। বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হয়, তাঁরা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরার পর আমাদের জন্য যে দেশে এমন উৎসব অপেক্ষা করছে, তা চিন্তাও করিনি। পচেফস্ট্রুমের ফাইনালের পর আমরা জোহানেসবার্গ যাই। সবাই সবার মতো কেনাকাটা করে, এখানে ওখানে ঘুরতে যায়। শুনলে অবাক হবেন, খেলা নিয়ে বা আমরা যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, তা নিয়ে ম্যাচের পর দিনও আমাদের মধ্যে তেমন আলোচনা হয়নি। দেশে ফেরার আগে হাতে দুই দিন সময় ছিল। বিশ্বকাপের সময়টা কোথাও বের হতে পারিনি বলে এই দুটি দিন সবাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে কেনাকাটা করে, ঘুরেফিরে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এ চিন্তাটা মোটামুটি মাথা থেকে দূর হয়ে গিয়েছিল।

সবাই আনন্দে ভেসেছিল সেদিন।

এখন বিশ্বকাপটা নিয়ে ভাবলে মনে হয় বড় একটা টুর্নামেন্টের জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করারই ফল পেয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস, বিশ্বকাপের সাফল্য, বিশ্বকাপ জয়ের পর আমাদের মনমানসিকতায় আসা পরিবর্তন এবং বিশ্বকাপের শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে কাজে দেবে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আমাদের দলটাকে অনুপ্রেরণাদায়ী এক দল হিসেবেই মনে রাখব। পেছন ফিরে দেখলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাকে মনে হয় অনুপ্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস, ভবিষ্যতের জন্য বড় সাহস। এই সাহসটা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।

আমাদের হয়তো দুর্ভাগ্য, বিশ্বকাপ জয়ের বছরটা প্রায় ঘরে বসে কাটালাম। করোনাভাইরাস আমাদের মাঠে নামতে দেয়নি। অবশ্য খেলা তো দূরে, গোটা পৃথিবীই অচল হয়ে পড়েছিল। এখন আবার সব স্বাভাবিক হচ্ছে, মাঠে ফিরেছে খেলা। বিশ্বজয়ের সাহস আর অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরাও আবার হাঁটব এগিয়ে যাওয়ার পথে।