বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান

বিশ্বমানের মোস্তাফিজের জন্য ‘এমন কিছুই দরকার ছিল’

বঙ্গবন্ধু টি–টোয়েন্টি কাপে পারফরম্যান্সে মেহেদী হাসান মিরাজের নিজেরই সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়। উইকেট পাওয়ায় ছিল না ধারাবাহিকতা, রানও সেভাবে আটকাতে পারেননি। অথচ মিরাজের মধ্যে একসময় বড় স্পিনারের ছায়া দেখা হতো। সেই সময় বুঝি আবারও ফিরে আসছে!

অন্তত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মিরাজের বোলিং দেখে তেমন মনে হতেই পারে। নতুন কিংবা পুরোনো বলে রান আটকানোর সঙ্গে উইকেটও নিয়েছেন বাংলাদেশের এই অফ স্পিনার।

৭ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট–শিকারিও তিনি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৩–এর নিচে। স্পিনারের পারফরম্যান্স এমন হলে অধিনায়ক তো তাঁর ওপর আস্থা রাখতেই পারেন। এ কারণে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে অনেকেই মিরাজকে দেখছেন বাংলাদেশ দলে।

একাদশে সুযোগ পাবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত ওয়ানডে সিরিজে ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেয়েছেন মিরাজ। সুখবর পেয়েছেন আইসিসির কাছ থেকে—ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছেন তিনি।

৯ ধাপ এগিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনি চতুর্থ। অর্জন করেছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ার–সেরা রেটিং পয়েন্ট—৬৯৪। এমন খবরে স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে আটখানা হওয়ার কথা মিরাজের।

বিসিবির ভিডিও বার্তায় মিরাজের কথা শুনলেও সে রকমই মনে হবে। র‌্যাঙ্কিংয়ে এই বড় লাফ তাঁর কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো লাগছে। আমি আসলে চিন্তাও করতে পারিনি সেরা পাঁচে থাকতে পারব। আল্লাহর অশেষ রহমতে খুব ভালোই লাগছে, যখন খবরটা শুনেছি এবং যখন সতীর্থরা শুভেচ্ছা জানিয়েছে।’

গত মাসের ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়েও শীর্ষ দশের বাইরে ছিলেন মিরাজ। ৬২৬ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ছিলেন ১৩তম স্থানে। এই ৯ ধাপ উন্নতির রহস্য খোলাসা করার ব্যাখ্যায় মিরাজ টেনেছেন লাল বল ও সাদা বলের সংস্করণের প্রসঙ্গ।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ

২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের টেস্ট সিরিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন মিরাজ। সেই সিরিজে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল ঐতিহাসিক। অমন অভিষেক খুব কম স্পিনারের ভাগ্যেই লেখা থাকে। তবে পরের বছর সাদা বলে অভিষিক্ত মিরাজ কিন্তু নিজেকে শুধু টেস্ট স্পিনার হিসেবে বেঁধে রাখতে চাননি।

ভিডিও বার্তায় সে কথাই জানালেন জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার, ‘আমার চিন্তা ছিল আমি শুধু লাল বলেই খেলব না, সাদা বলেও খেলব। মনে মনে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। চেষ্টা করেছি ওয়ানডে খেলতে হলে কীভাবে ভালো করতে হবে এবং আমার কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে—তা বের করা। চিন্তা করেছি আমার ওভারপ্রতি রান দেওয়ার গড় ঠিক রাখতে হবে এবং দলের প্রয়োজনে উইকেট এনে দিতে হবে।’

ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে আছেন দুই বাংলাদেশি মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার।

আগের ১৯তম র‌্যাঙ্কিং থেকে ৮ম স্থানে উঠে এসেছেন মোস্তাফিজও। মিরাজ মনে করেন র‌্যাঙ্কিংয়ে মোস্তাফিজের এই উন্নতি দল এবং মোস্তাফিজের নিজের জন্যও দরকার ছিল, ‘মোস্তাফিজ বিশ্বমানের বোলার। ওর জন্য এ রকম কিছুই দরকার ছিল। অনেক দিন ও ছন্দে ছিল না, কিন্তু এই সিরিজে সে অনেক ভালো বল করেছে এবং টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রত্যেক খেলোয়াড় ওর পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট।’

বন্ধু মোস্তাফিজের সঙ্গে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলেছেন মিরাজ

চট্টগ্রামে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর আর মাঠে নামেননি মিরাজ। হোটেলেই বিশ্রামে কাটিয়েছেন এ দুটি দিন। নিজের খুব কাছের বন্ধুকে নিয়ে আইসিসির ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারায় সন্তুষ্টির কথা জানালেন তিনি, ‘মোস্তাফিজ আমার অনেক কাছের বন্ধু। আমরা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। অনূর্ধ্ব ১৬, ১৭, ১৮, ১৯—সবই খেলেছি। খুব ভালো লাগছে যে ও শীর্ষ দশের মধ্যে আছে।’