টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভাগ্যে কী আছে? এই বছরই সেটি হওয়ার সম্ভাবনা দিন গড়ানোর সঙ্গে কমছে বলে মনে হচ্ছে। কাল আইসিসির সদস্যদেশগুলোর টেলিকনফারেন্সে টুর্নামেন্টের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। নির্ধারিত হবে আইপিএলের ভাগ্যও।
তবে টেলিকনফারেন্স একদিন পরে হলেও কী কী সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে, তার একটা ধারণা এখনই পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের সংবাদসংস্থা পিটিআইকে আইসিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এ বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে পিছিয়ে হতে পারে ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে। আর এ বছরে বিশ্বকাপের জন্য যে সময়টা বরাদ্দ ছিল, সে সময়ে হবে ভারতের অর্থকরী ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএল।
'বড় সম্ভাবনা এই যে বৃহস্পতিবারের বোর্ডসভায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে কি না, সেটা অবশ্য একটা প্রশ্ন' – নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিটিআইকে বলেছেন আইসিসির এক বোর্ড সদস্য।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এক মহাযজ্ঞ, আর করোনাভাইরাসের কারণে সেটির প্রস্তুতিতে পড়েছে ভাটা। তারওপর করোনা এখনো বিদায় না নেওয়ায় টুর্নামেন্টটা এখন আয়োজন করা মানে দর্শকখরার শঙ্কা। ব্যর্থ একটি টুর্নামেন্ট কেন চাইবে আইসিসি? আইসিসির ওই বোর্ড কর্মকর্তার কণ্ঠেও একই সুর, 'এই পরিস্থিতিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই। আমার মনে হয় না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড) বা কূলীন অন্য বোর্ডগুলো এতে আপত্তি করবে।'
গত ১৫ মে পিটিআই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, আইসিসির ইভেন্টস কমিটি বৃহস্পতিবারের বোর্ড সভায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কখন আয়োজন করা যায়, এ নিয়ে বেশ কিছু বিকল্প প্রস্তাব দেবে। এর মধ্যে যে প্রস্তাবটি সবচেয়ে বেশি বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনা, সেটি ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বর। এর মধ্যে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অবশ্য ভারতে যথাসময়েই, অর্থাৎ আগামী বছরের অক্টোবর-নভেম্বরেই আয়োজিত হবে।
বিশ্বকাপ না হলেও বছরের শেষদিকে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই আসার কথা। কারণ, করোনার কারণে আর্থিক ক্ষতির শিকার বোর্ডগুলো দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই এখন জোর দেবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিসির ওই বোর্ডসদস্য এ-ও বলেছেন, এখানে শুধু সদস্যদেশগুলোর কথাই ভাবা হবে না, ভাবা হবে সম্প্রচারক সংস্থা স্টার স্পোর্টসের কথা। যারা এই মুহুর্তে আইসিসির ইভেন্টের পাশাপাশি ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিসিসিআই) সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ। আইপিএলের সম্প্রচারসত্ত্বও স্টার স্পোর্টসেরই।
সম্প্রচার চুক্তির ব্যাপারে জানাশোনা আছে, বিসিসিআইয়ের এমন একজন কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেছেন, 'কিছু প্রশ্ন থেকে যায় এখানে। যেমন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে) আয়োজনের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কেমন হবে, সেটি। তার আগে এই বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে আইপিএল হবে, আগামী বছরের মার্চ-মে মাসে আবার আরেকটি আইপিএল আছে। তার মানে, ছয় মাসের মধ্যে তিনটি আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট! অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, তাতে এমন কিছু করা খুবই বাজে হবে।'
সমাধান? আইপিএল দুটি হয়তো ছয় মাসের মধ্যেই হবে, তবে বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাবে। আইপিএল আয়োজন মানে যে শুধু টিভি সত্ত্ব থেকেই কোটি কোটি রূপি আয়! বিসিসিআইয়ের ওই কর্মকর্তা এ-ও জানিয়েছেন, ভারত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ঠিকই খেলতে যাবে।
'ভারত অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। ইংল্যান্ড ভারতে আসবে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলার জন্য। আর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজের কথা বললে, দেখা যাক ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড) এ ক্ষেত্রে আইসিসির নির্দেশনার সঙ্গে কতটা একমত হয়। ক্রিস নেনজানি (ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার সভাপতি) আছেন তো, বিসিসিআই আশা করছে তিনি একমত হবেন' – পিটিআইকে বলেছেন ওই বিসিসিআই কর্মকর্তা।
আইপিএল নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন আছে। ভারতের অর্থকরী এই টুর্নামেন্টটি কীভাবে হবে, কখন হবে, সেটি নির্ভর করবে ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর। ভারত সরকার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরিকল্পনা করছে, সে ক্ষেত্রে আইপিএল পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে টুর্নামেন্টটা দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে, নাকি স্বল্পসংখ্যক দর্শক মাঠে আনা হবে – সে ব্যাপারে আইসিসির নির্দেশনা মেনে চলবে বিসিসিআই।
করোনাভাইরাসের কারণে আগামী দিনের ক্রিকেট হতে পারে স্বল্প সংখ্যক ভেন্যুতে। পাশাপাশি এমন ব্যবস্থাও রাখা হবে, যাতে বিদেশি ক্রিকেটাররা সফরে এসে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারেন।