বিশ্বকাপ জয়ে অনুপ্রেরণা ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন

বিশ্বকাপ জয়ে অনুপ্রেরণা ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন
বিশ্বকাপ জয়ে অনুপ্রেরণা ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন


‘ওই দেখো ইনিয়েস্তা, ক্যাসিয়াসরা এই মিটিং রুমে বসেই বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ের পরিকল্পনা করত। তোমরাও পারবে, তোমাদের পারতেই হবে’

আলোচনা সভায় বিশ্বকাপজয়ী স্পেনের ফুটবলারদের ছবির দিকে আঙুল তুলে এভাবেই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছেও বাংলাদেশ। আকবর আলী, পারভেজ হোসেনদের বিশ্বকাপ জয়ের পথে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন স্পেনের তারকা ফুটবলার ইকার ক্যাসিয়াস, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তারা। কী, ভড়কে গেলেন! কাকতালীয়ভাবে অলক্ষ্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছে ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী স্পেন দল। কীভাবে?

২০১০ সালে প্রথম ও শেষবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবল জিতেছিল স্পেন। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে পচেফস্ট্রুমের নর্থ-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ভিলেজে তাঁবু গেড়েছিল চ্যাম্পিয়নরা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যাসিয়াসরা ছিলেন সেই ভিলেজেই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলের হার দিয়ে শুরু করলেও ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ছয় ম্যাচ জিতে বিশ্ব কাঁপিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল দেল বস্কের দল। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে পচেফস্ট্রুমের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ভিলেজেই উঠে ছিলেন আকবররা। ক্যাসিয়াসদের মতো তারাও হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। পার্থক্য বলতে ফুটবলের জায়গায় ক্রিকেট, স্পেন মূল জাতীয় দলের জায়গায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এই তো!

এতক্ষণে প্রশ্ন জাগার কথা নর্থ-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিলেজে থাকলেও আকবরদের কীভাবে অনুপ্রেরণা জোগালেন ক্যাসিয়াসরা? শুনতে হবে আকবর আলী, অভিষেক দাস, হাসান মুরাদ, তানজিম হাসানদের কথা। ভিলেজের যে কক্ষগুলোতে স্পেনের ফুটবলাররা থাকতেন, সে কক্ষগুলোতেই ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। যে মিটিং রুমে বসে হল্যান্ড-জার্মানি বধের ছক কষেছেন দেল বস্ক, সে কক্ষে বসেই ভারত-নিউজিল্যান্ডকে আটকানোর কৌশল এঁকেছেন বাংলাদেশের নাভিদ নেওয়াজ। মিটিং কক্ষে থাকে থাকে সাজানো স্পেনের ফুটবলারদের ছবির দিকে বারবার আঙুল ইশারা করে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ, ‘দেখ ক্যাসিয়াস, ইনিয়েস্তারা এই রুমে বসেই বিশ্বকাপ জয়ের পরিকল্পনা করেছে। তোমরাও পারবে।’

জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ফাইনালের ১১৬ মিনিটে বিশ্বকাপ জয় সূচক গোলটি করেছিলেন মিডফিল্ডার ইনিয়েস্তা। ভিলেজের ‘বি’ ব্লকের যে কক্ষটিতে থাকতেন ইনিয়েস্তা, সে কক্ষেই ছিলেন বাংলাদেশের বোলিং অলরাউন্ডর অভিষেক দাস। কক্ষের দরজায় ও ভেতরে টাঙানো ছবি ও স্বাক্ষর দেখেই তা জানতে পেরেছেন অভিষেক। তাঁর সঙ্গে একই কক্ষে ছিলেন মুরাদ হাসান। আর ২০১০ সালে ইনিয়েস্তার রুম মেট ছিলেন হুয়ান মাতা।

ইনিয়েস্তার মতো নায়ক হয়তো হননি, তবে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়ে জয়ের ভিত গড়ে দেওয়ার পেছনে কিছুটা অবদান তো রেখেছিলেন অভিষেক। কক্ষে ইনিয়েস্তার ছবি দেখে সেও হতে চেয়েছিলেন ফাইনালের নায়ক, ‘আমরা যে কক্ষে থাকতাম, সে রুমে ছিল ইনিয়েস্তা আর মাতা। দরজায় ও ভেতরে তাদের ছবি ছিল। রুমমেট মুরাদের সঙ্গে তাদের নিয়ে আমরা কত গল্প করেছি। আর কোচ তো প্রথম দিনে মিটিং রুমেই বলেছিলেন, “এখানে থেকেই বিশ্বকাপ জিতেছে স্পেন। তোমাদেরকেও জিততে হবে।” স্পেন দলটা আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

তিন দিন আগের ফাইনালে আরেক নায়ক হয়ে উঠেছিলেন ওপেনার পারভেজ হোসেন। পায়ের চোট নিয়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে দ্বিতীয় দফায় আবার মাঠে ফেরা। তাঁর ৭৯ বলে ৭ চারে ৪৭ রানের ইনিংসটির বড় অবদান বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জেতায়। অথচ দ্বিতীয় দফায় যখন ব্যাটিংয়ে নামছেন, ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ানো পারভেজের প্রতিটি রানই তাঁর বীরত্বের গল্প বলে। সেই পারভেজের মুখেও স্পেন অনুপ্রেরণা, ‘কোচ আমাদের প্রথম মিটিংয়েই ওই কক্ষে থাকা স্পেন দলের ছবি দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘তোমাদেরও স্পেন হতে হবে। কাউকে ইনিয়েস্তার জায়গা নিতে হবে। কাউকে হতে হবে ক্যাসিয়াস।’

কী মিল, সেবার গোলরক্ষক ক্যাসিয়াসের হাতে উঠেছিল বিশ্বকাপ। ১০ বছর পরে এসে একজন উইকেট রক্ষক আকবর আলীর হাতে উঠল বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ। দুটোই প্রথম। আকবরের ভাষ্য অনুযায়ী, সে কক্ষেই স্পেন দলের পাশে এখন থেকে শোভা পাবে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন দলের ছবিও।