জয়ের পর স্কটল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন নামিবিয়ার দুই ব্যাটসম্যান
জয়ের পর স্কটল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন নামিবিয়ার দুই ব্যাটসম্যান

বিশ্বকাপে নিজেদের নামটা জানিয়ে দিল নামিবিয়া

১০৯ রানের জবাবে নেমে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে। ৬টা উইকেট চলে গেছে। রীতিমতো ঘাম ছুটে গেছে। কিন্তু সম্ভবত এসবের কোনো দিকেই এখন ভ্রুক্ষেপ নেই নামিবিয়ার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের মতো মঞ্চে নেমেই জয় পাওয়ার দিনে এত কিছু কে হিসাব করতে যায়!

ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২০০৩ সালেই খেলেছে নামিবিয়া—এর আগে-পরে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে আর খেলা হয়নি। খেললেও সেবার জয়ের মুখ দেখা হয়নি নামিবিয়ার। ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই জুটেছে হার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারই প্রথম এসেছে, এসেই সুপার টুয়েলভে ওঠাই ছিল বড় অর্জন।

কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি নামিবিয়া। সুপার টুয়েলভে আজ প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেছে, আবুধাবিতে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচেই নামিবিয়া তুলে নিয়েছে জয়!

প্রথম রাউন্ডেও দুটি ম্যাচে জিতেছিল নামিবিয়া, সে দুটি জয় এসেছিল ডেভিড ভিসার সৌজন্যে। একসময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের হয়ে খেলা ভিসা বাবার জন্মসূত্রে নামিবিয়ার হয়ে খেলছেন এবার। প্রথম রাউন্ডের দুই জয়ে ব্যাটে-বলে আলোও ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু আজ ভিসা নয়, নামিবিয়ার জয়টা এসেছে মূলত তাদের তিন বাঁহাতি বোলারের সৌজন্যে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে উদ্বোধনী বোলার রুবেন ট্রাম্পলমানের সৌজন্যে।

দল জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন স্মিট
ছবি: এএফপি

প্রথম ওভার করতে এসে ইনিংসের প্রথম চার বলের মধ্যেই প্রতিপক্ষের তিন উইকেট ফেলে দেওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! ট্রাম্পলমান আজ তা-ই করেছেন। প্রথম বলে জর্জ মানসেকে ফিরিয়ে শুরু, এক বল বিরতির পর টানা দুই বলে ট্রাম্পলমান ফিরিয়ে দিলেন ক্যালাম ম্যাকলেওড ও রিচি বেরিংটনকে। ৪ বল শেষে স্কটল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ২।

এরপর ১৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারানো স্কটিশদের হয়ে পঞ্চম উইকেটে ৩৯ রানের জুটি গড়েন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ম্যাথু ক্রস ও ছয়ে নামা মাইকেল লিস্ক। ক্রস ৩৩ বলে ১৯ রান করে ফিরে গেলেও লিস্কের ব্যাটিং বেশ নজর কেড়েছে। যখন ক্রিজে এসেছেন, ততক্ষণে ১৮ রানে ৪ উইকেট নেই। কিন্তু সেখান থেকেই পাল্টা আক্রমণে ২৭ বলে ৪৪ রান করেছেন লিস্ক! ইনিংসে চার ৪টি, ছক্কা ২টি।

আউট হওয়ার আগে ষষ্ঠ উইকেটে ক্রিস গ্রিভসের সঙ্গেও ৩৬ রানের জুটি গড়েন লিস্ক। সাতে নামা গ্রিভস শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৩২ বলে করেন ২৫ রান।

ব্যাটিংয়ে অপরাজিত থাকলেও বোলিংয়ে ভালো করেন ফ্রাইলিঙ্ক

মূলত লিস্ক আর গ্রিভসের সৌজন্যেই ১০০ পার হয় স্কটল্যান্ডের ইনিংস, নামিবিয়াকে ১১০ রানের লক্ষ্য দেয় তারা। নামিবিয়ার চার বাঁহাতি পেসারের মধ্যে তিনজন ট্রাম্পলমান, ফ্রাইলিঙ্ক ও স্মিট মিলে নেন ৬ উইকেট। ট্রাম্পলমানের উইকেট ওই তিনটিই।

ম্যাচটা প্রথম ইনিংসেই বলতে গেলে জিতে যায় নামিবিয়া। এরপর দশম ওভারের প্রথম বলে দুই উইকেটেই ৫০ রান করে নামিবিয়া। কিন্তু এরপর দলীয় ৬৭ রানের মধ্যে অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাস ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ক্রেইগ উইলিয়ামও (২২ রান) ফিরে গেলে একটু চাপে পড়ে যায় নামিবিয়া। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে ডেভিড ভিসার (১৬) সঙ্গে ৩৫ রানের জুটিতে সব শঙ্কা উড়িয়ে দেন ছয়ে নামা স্মিট।

২৩ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ৩২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। জয়সূচক রানটাও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে, তা–ও আবার ছিল পয়েন্টের ওপর দিয়ে দারুণ ছক্কা!

দলের রান ১০০ পেরিয়ে যাওয়ার পর, জয়ের খুব কাছে যাওয়ার পরও যে দুটি উইকেট হারিয়েছে, এর মধ্যে একটি জয় থেকে ১ রান দূরে থাকার সময়ে, তা বোধ হয় এখন আর মনেই নেই নামিবিয়ানদের!