>মোসাদ্দেক হোসেনের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে প্রথমবারের মতো কাল ফাইনাল জিতেছে বাংলাদেশ। তবে জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। অসাধারণ এক সিরিজ কাটানো বাঁহাতি ওপেনারের চোখ এখন বিশ্বকাপে
ঘুমাচ্ছিলেন। রাতে অনেক উদ্যাপন হয়েছে, সেটিও নয়। মাঠ থেকে এসেই ঘুম। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে সকাল ৯টা। মুঠোফোনের এ প্রান্তে হাইয়ের শব্দও শোনা গেল। হাই তুলতে তুলতে সৌম্য সরকার বললেন, ‘না, তেমন উদ্যাপন কই? এসেই তো ঘুমিয়েছি।’
দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে কাল ফাইনালের নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু জয়ের ভিত্তিটা তো গড়ে দিয়েছিলেন সৌম্যই। ২৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ২১০ রান। কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নামে তামিম-সৌম্যর জুটি ৫ ওভারের পাওয়ার প্লেতেই এনে দেয় ৫১। এমন একটা শুরুই আসলে দরকার ছিল! দুর্দান্ত এ শুরুতে বড় অবদান সৌম্যর। তামিম শুধু প্রান্ত বদল করে দিচ্ছিলেন। সৌম্যর রান তখন ৩৯, তামিমের ১০।
সৌম্য যখন ছয়–চার আর দুই ছক্কা মেরেছেন, তামিম তখনো বাউন্ডারির খাতা খোলেননি। ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটির ৪২-ই এল বাউন্ডারি থেকে। ৯ চার আর ৩ ছক্কায় ৪১ বলে ৬৬ রানের দুরন্ত সাহসী এক ইনিংস খেলে সৌম্য সতীর্থদের পথটা দেখিয়ে এলেন, সেই পথ ধরে এগিয়ে মোসাদ্দেক ম্যাচটা শেষ করে এসেছেন। ডাবলিন থেকে মুঠোফোনে সৌম্য জানালেন, কী পরিকল্পনায় এগিয়েছেন, ‘স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। স্বাভাবিক ক্রিকেট বলতে পজিটিভ থাকা। ডট বলের সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে পজিটিভ থাকা। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে শুরুটা ভালো বা দ্রুত রান তুলতে পারলে পরে জেতা সহজ হয়। প্রথমেই যদি রানের চাপে পড়ে যাই, পরে পেরে ওঠা কঠিন হয়ে যায়। এ পরিকল্পনায় পাওয়ার প্লে ভালোভাবে কাজে লাগাতে চেয়েছি। ভেবেছি পরে যারা থাকবে, তারা যেন কাজটা করে আসতে পারে।’
পরের ব্যাটসম্যানরা, আরও নির্দিষ্ট করে বললে মোসাদ্দেক-মাহমুদউল্লাহ সেটা করে আসতে পেরেছেন। কিন্তু জয়ের ভিত্তিটা যিনি গড়েছেন তাঁকে বড় ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ম্যাচ শেষে সৌম্যকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে কানে কানে কী যেন বললেন অধিনায়ক। ‘ও কিছু না! জেতার পর এমনি জড়িয়ে ধরেছে, ভাই খুব খুশি’—সৌম্যর হাসিটা বেশ টের পাওয়া যায় এই শত–সহস্র মাইল দূরেও। শুধু তাঁর ‘ভাই’ খুশি নন, খুশি পুরো দেশ। প্রথমবারের মতো ফাইনাল জয়ের আনন্দ নিয়ে যে কাল ঘুমাতে গিয়েছে বাংলাদেশ। ঘুমিয়েছেন সৌম্যও।
শুধু কালই নয়, গত কিছুদিন সৌম্যর খুব ভালো ঘুম হওয়ার কথা। ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক মিলিয়ে তাঁর সবশেষ পাঁচটি ইনিংস—১০৬, ২০৮*, ৭৩, ৫৪ ও ৬৬। একজন ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ছন্দে থাকা বুঝি একেই বলে। টগবগে আত্মবিশ্বাস নিয়ে উইকেটে যাচ্ছেন, দলকে দারুণ শুরু এনে দিচ্ছেন। সৌম্য যেন ফিরিয়ে আনছেন ২০১৫ সালকে। সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো এক বছরই কেটেছিল তাঁর। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভালো খেললেন। দেশে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ রাঙালেন। ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করলেন। মাঝে একটু ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখার পর যে সৌম্যকে দেখা গিয়েছিল, তিনি কি আবার ফিরে এসেছেন? বাঁহাতি ওপেনার আবারও হাসলেন, ‘জানি না ঠিক। খেলছি, খেলতে থাকি। চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো কিছু করার, এ ছাড়া কিছু না। আগে যেভাবে আউট হয়েছি, এসব নিয়ে চিন্তা করি।’
টানা পাঁচটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন, সৌম্যর ক্যারিয়ারেই এটি ব্যতিক্রম। তবে দুঃসময় ভুলে যাচ্ছেন না এ ভালো সময়ে, ‘এই প্রিমিয়ার লিগে কিন্তু টানা অনেকগুলো ম্যাচে রান করিনি। একটানা রান করিনি, এখন ব্যাটে-বলে খুব ভালো হচ্ছে। যখন রান করিনি, সে দিনগুলোও মনে করার চেষ্টা করছি। যখন রান করিনি তখন কেমন লাগত, সেটি অনুভব করছি। সুযোগ এসেছে, ব্যাটে-বলে হচ্ছে। পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
এই ত্রিদেশীয় সিরিজটা কাটল সৌম্যর মনে রাখার মতোই। তবে একটা আফসোস নিয়ে দলের সঙ্গে আজ আয়ারল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডের উড়ান ধরছেন সৌম্য—সিরিজে ৩ ফিফটির একটিও যে দিতে পারেননি তিন অঙ্কে রূপ। সৌম্য কথা দিচ্ছেন, বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে চেষ্টা করবেন এ আফসোস দূর করতে, ‘একটু ভুল হচ্ছে। আরও বেশি মনোযোগী হলে, আরও সতর্ক থাকলে সেঞ্চুরি হতে পারত। যেভাবে সুযোগ পেয়েছিলাম, কালও যদি থাকতাম (অপরাজিত) সেঞ্চুরি তো হতোই। ২০১৯ বিশ্বকাপ সামনে, চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগানোর।’
বড় মঞ্চে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে নিশ্চিত সৌম্য নিজেকে নিয়ে যেতে পারবেন আরেকটা ধাপে।