টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় ছিল ভারত। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে পা ফসকালেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যেত দলটির। কিন্তু সময়মতো জ্বলে উঠেছেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। দুই ওপেনারই ম্যাচের গতি ঠিক করে দিয়েছেন। রোহিত শর্মা ৪৭ বলে ৭৪ রান করেছেন, লোকেশ রাহুলও কম যাননি। ৪৮ বলে করেছেন ৬৯ রান। তাঁদের গড়ে দেওয়া ভিত্তি কাজে লাগিয়েছেন ঋষভ পন্ত ও হার্দিক পান্ডিয়া।
ব্যাটসম্যানরা ২১০ রানের পাহাড় গড়ে দলকে এনে দিয়েছেন ৬৬ রানের জয়। যে জয়ে আবার বিশ্বকাপ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ভারত। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন সমীকরণ মিলিয়ে সেমিফাইনালে যেতে পারে ভারত।
আফগানিস্তান ম্যাচ যা দিল ভারতকে:
টানা দুই ম্যাচ হেরে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছিল ভারত। দুই ম্যাচে ৪০ ওভার ব্যাট করেও মাত্র ২৬১ রান তুলতে পারায় ব্যাটসম্যানদের নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। কাল আফগান বোলারদের বাজে বোলিংয়ের সুবাদে সব সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে ভারত। ম্যাচের আগে -১.৬০৯ রান রেট ছিল ভারতের। ৬৬ রানের জয়ে সেটা ০.০৭৩ হয়ে গেছে। ফলে নামিবিয়াকে টপকে এখন গ্রুপের চতুর্থ দল হয়ে গেছে ভারত। এখন বাকি দুই ম্যাচে নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দুইয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে ভারতকে।
ভারতকে এখন যা করতে হবে:
প্রথম ধাপ:
ভারতকে নিজেদের বাকি দুই ম্যাচই জিততে হবে। এতে ভারতের পয়েন্ট হবে ৬।
দ্বিতীয় ধাপ:
ভারতকে বড় ব্যবধানে জিততে হবে। অন্তত প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডকে অন্তত ৬০ রানে হারাতে হবে বিরাট কোহলিদের।
তৃতীয় ধাপ:
নিজেদের পয়েন্ট ৬ হলেই শুধু চলছে না ভারতের, নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট যেন ৬–এর বেশি হয়ে না যায় সে আশাও করতে হবে। অর্থাৎ নামিবিয়া ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে অন্তত এক ম্যাচে হারতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।
আরেকটু নিখুঁত হিসাবে যা করতে হবে ভারতকে
অনেকেই হিসাব করে বলছেন, ভারতকে নিজেদের ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিততে হবে। ওদিকে নিউজিল্যান্ড নামিবিয়ার বিপক্ষে যেন ১০ রানের বেশি ব্যবধানে না যেতে এবং আফগানিস্তানের কাছেও হেরে যায়। তাহলেই নাকি পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে যাবে ভারত।
ভারতের বর্তমান রান রেট এখন ০.০৭৩। ওদিকে নিউজিল্যান্ডের রানরেট ০.৮১৬। ধরা যাক, ভারতের সমর্থকদের ইচ্ছাই পূরণ করল নিউজিল্যান্ড। নামিবিয়াকে ন্যূনতম ব্যবধানে অর্থাৎ ১ রানে হারাবে নিউজিল্যান্ড, ওদিকে আফগানিস্তানের কাছেও ঠিক ওই ব্যবধানে হারল নিউজিল্যান্ড। সে ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের রানরেট ০.৪৯ হয়ে যাবে।
সে ক্ষেত্রে নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতকে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। দুই ম্যাচেই মাত্র ২৫ রানের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করলেই ০.৫৪ রানরেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে টপকে যাবে ভারত।
কিন্তু এতেই নিশ্চিত হতে পারবে ভারত? না। কারণ, ওদিকে যে ৪ পয়েন্ট এবং ১.৪৮১ রানরেট নিয়ে বসে আছে আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ডকে ন্যূনতম ব্যবধানে হারাতে পারলেও দলটির পয়েন্ট শুধু ৬ পয়েন্ট হবে না, রানরেটও হয়ে যাবে ১.১৯। ফলে নিউজিল্যান্ডের হার নিয়ে ব্যস্ত থাকা ভারতকে টপকে সেমিফাইনালে চলে যাবে আফগানিস্তান।
ভারতের সেমিফাইনালে যাওয়ার কাজটা তাহলে অত সহজ হচ্ছে না। সমীকরণ নিয়ে আরেকটু ভাবতে হবে তাদের।
আর এ কারণেই, নিউজিল্যান্ডের হার আফগানিস্তান নয়, নামিবিয়ার বিপক্ষে হলেই বেশি সুবিধাজনক হবে ভারতের জন্য। সে ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড আফগানিস্তানকে যত রানে হারাবে, ভারতকে শুধু আগের হিসেবের সঙ্গে ওই বাড়তি রানটুকু করলেই হবে। যেহেতু ভারত সব সমীকরণ যেনেই ৮ নভেম্বর মাঠে নামবে, তাদের জন্য কাজটা তাই কঠিন হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু ধরা যাক নিউজিল্যান্ড নামিবিয়ার কাছে না হেরে আফগানিস্তানের কাছেই হারল। সে ক্ষেত্রে ভারতকে আসলে নিউজিল্যান্ড নয়, ভাবতে হবে আফগানিস্তানের রান রেটের দিকে। সে ক্ষেত্রে আফগানিস্তান যদি নিউজিল্যান্ডকে ন্যূনতম ব্যবধানে হারায়, সে ক্ষেত্রে দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে ৬০ রানের ব্যবধানে অর্থাৎ দুই ম্যাচ মিলিয়ে অন্তত ১২০ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জিততে হবে ভারতকে। আর নিউজিল্যান্ডকে ন্যূনতম ব্যবধানে না হারিয়ে যত বেশি রানে হারাবে আফগানরা, ভারতকেও রানের ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে হবে।
তবে, আবারও সবার শেষে ম্যাচ পাওয়ার সুবিধা পাবে ভারত। ৭ নভেম্বর হয়ে যাবে নিউজিল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচ। ৮ নভেম্বর সব হিসাবে জেনেই মাঠে নামতে পারবে ভারত। তবে নিউজিল্যান্ড যদি দুই ম্যাচ জিতে যায় তখন ভারতকে মাঠে নামতে হবে আনুষ্ঠানিকতা মেটাতে।