ভারত দলে মহেন্দ্র সিং ধোনির অবদান নিয়ে বরাবরই উচ্চকণ্ঠ বিরাট কোহলি ও রবি শাস্ত্রী। এক বছর আগেই বিশ্বকাপে ধোনির জায়গা পাকা—বলে দিয়েছেন এ দুজন। মাঝে ভয়ংকর বাজে ফর্মের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন ধোনি, তবু তাঁকে ছাড়া ভারত দলের কথা কল্পনা করা যায়নি। এতে অনেকেই কোহলির আচরণে মুগ্ধ হয়েছেন, সাবেক অধিনায়কের প্রতি বর্তমান অধিনায়কের এভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া তো দেখা যায় না খুব একটা। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, সহযোগিতা আসলে কে কাকে করেছেন? নাকি অধিনায়ক হিসেবে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নন কোহলি!
ভারতের অধিনায়ক হিসেবে দারুণ আগ্রাসী কোহলি। মাঝেমধ্যেই এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেন, যাতে খেলার ধরনটাই বদলে যায়। কিন্তু সে অধিনায়ক যখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দায়িত্ব নেন, তাঁকে আর চেনা যায় না। দলের ছন্নছাড়া অবস্থা, মাঠেও নেই কোনো বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত। কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে আইপিএলের শুরুতেই তাই প্রশ্ন তুলেছিলেন সাবেক ভারত ওপেনার গৌতম গম্ভীর, ‘তাকে (কোহলি) বিচক্ষণ অধিনায়ক বলে মনে হয় না। তেমন কুশলী অধিনায়ক ও নয়। আর সে আইপিএলও জেতেনি। অধিনায়ক কতটা ভালো, তা বলে দেয় রেকর্ড। আইপিএলে তিনবার শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়ও আছে—এম এস ধোনি ও রোহিত শর্মা। তাই আমার মনে হয়, এখনো তাকে (কোহলি) অনেক দূর যেতে হবে। রোহিত কিংবা ধোনির মতো কারও সঙ্গে এখন অন্তত তার তুলনা চলে না।’
আরসিবিকে এ নিয়ে আটবার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোহলি। এখন পর্যন্ত ৪৪টি ম্যাচে জিতেছে দলটি, হেরেছে ৫২ বার! এ মৌসুমে টানা পাঁচ হারের আগেই অবশ্য আরসিবিতে কোহলির অবদান নিয়ে প্রশ্ন করেছেন গম্ভীর, ‘সে আরসিবির অংশ। সাত-আট বছর ধরে অধিনায়কত্ব করছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে তার ধন্যবাদ জানানো উচিত, কারণ এখনো তার ওপর ভরসা করে আছে। কারণ, কোনো টুর্নামেন্ট না জিতেও এত সময় থাকার সুযোগ খুব বেশি অধিনায়কের হয় না।’
গতকাল ২০৫ রান তুলেও হেরেছে আরসিবি। শেষ ৩ ওভারে ৫৩ রানের লক্ষ্যটা ৫ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এর পেছনে আন্দ্রে রাসেলের তাণ্ডবের অবদানই ৯৯ ভাগ। বিরাট কোহলি ম্যাচ শেষে নিজের বোলারদের আচ্ছামতো ঝেড়েছেন, ‘চার ওভারে যদি ৭৫ রানকে (৬৬ রান) রক্ষা করতে না পারেন, ১০০ রানও পারবেন না। কী ভুল হয়েছে—আমরা এ নিয়ে কথা বলতে পারি। এর বাইরে আর বলার কিছু নেই। আমার মনে হয় না বেশি কথা সব সময় কাজে দেয়।’
কাল ম্যাচের পরিস্থিতি কিন্তু কোহলির ভুলই বেশি দেখাচ্ছে। আরসিবির ইনিংসে কলকাতার স্পিনাররা ১৪ ওভারে ১১৫ রান দিয়েছিলেন, আর পেসাররা ৬ ওভারেই দিয়েছিলেন ৯০ রান। এ থেকেই শিক্ষা নেওয়া যেত, এ উইকেটে স্পিনাররা পেসারদের চেয়ে কার্যকর। প্রথম ইনিংস শেষে এ নিয়ে কম টুইট হয়নি। কিন্তু কোহলি সেদিকে নজর দিলে তো! তাঁর দুই স্পিনার ৭.১ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেওয়ার ঘটনাও দাগ কাটেনি কোহলির মনে। ১২ ওভার করিয়েছেন পেসারদের দিয়ে। ১৫৯ রান দিয়ে তাঁরা এনে দিয়েছেন ২ উইকেট। এর ফাঁকে চোখে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে অন্য আরেকটি তথ্য। দলে থাকা আরেক স্পিনার মঈন আলীকে একবারও বল তুলে দেননি। এবার আইপিএলে মাত্র ১ উইকেট পেলেও ওভারপ্রতি ৮.৩৩ রান দিয়েছেন মঈন। কাল ওভারপ্রতি ১৩ রান করে দেওয়া পেসারদের বদলে মঈনের হাতে দুই বা তিন ওভার বল গেলেই হয়তো রাসেলের পক্ষেও ম্যাচের ফল বদলানো সম্ভব হতো না।
বিশ্বকাপের আগে আইপিএল নিয়ে অনেক আলোচনাই হয়েছে। ক্লান্তি ও চোটই ছিল সে আলোচনার মুখ্য বিষয়। কিন্তু কোহলির অধিনায়কত্ব এভাবে আলোচনায় আসবে, সেটা কে জানত? অথচ মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতেছে ভারত। সে কথাও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভুলে যেতে পারে কিছুদিনের মধ্যেই। অন্তত বেঙ্গালুরুর পারফরম্যান্সে যদি কোনো উন্নতি না ঘটে।