জয়ের জন্য শেষ ওভারে চিটাগং ভাইকিংসের দরকার ১৯ রান। কিন্তু ফ্রাইলিংক ও নাঈম ইসলাম মিলে নিতে পারলেন ১৮। ম্যাচ টাই! কিন্তু নাটকীয়, অবিশ্বাস্য ও উত্তেজনায় ভরা এই ম্যাচের গিঁট তো খুলতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী খেলা তাই গড়ায় সুপার ওভারে। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম সুপার ওভার। আর এক ওভারের এই যুদ্ধে খুলনাকে ১ রানে হারিয়েছে চিটাগং। ওদিকে টানা চার ম্যাচেই জয়শূন্য রইল খুলনা টাইটানস।
সুপার ওভারে আগে ব্যাটিং করে ১ উইকেটে ১১ রান তুলেছে চিটাগং। ক্যামেরন ডেলপোর্ট ও ফ্রাইলিংক নেমেছিলেন ব্যাটিংয়ে। প্রথম তিন বলে ৯ রান তোলার পর ফ্রাইলিংক জুনায়েদ খানের বলে আউট হওয়ার পর নেমেছেন মুশফিক। খুলনা এই রান তাড়া করতে পারেনি। ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন কার্লোস ব্রাফেট ও ডেভিড মালান। ফ্রাইলিংকের করা এক ওভারের প্রথম ৩ বলে এক চারসহ ৭ রান নেন ব্রাফেট ও মালান। শেষ ৩ বলে দরকার ছিল ৫ রান। চতুর্থ বলে রান আউট হন ব্রাফেট। পঞ্চম বলে ২ রান নেন মালান ও পল স্টার্লিং। অর্থাৎ শেষ বলে দরকার ৩ রান। মাঠে দুই দলের খেলোয়াড়েরাই তখন স্নায়ুচাপে পিষ্ট। কিন্তু শেষ বলে মালান ও স্টার্লিং মাত্র ১ রান নিতে পারায় হারের ব্যথায় চুপসে যেতে হয়েছে খুলনাকে।
ম্যাচটা শুরুর সময় অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইয়াসির আলীকে গুঞ্জন চলেছে। ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটে আবাহনীর হয়ে খেলা ইয়াসিরকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণ মোহাম্মদ আশরাফুল। চিটাগংয়ের আগের দুটি ম্যাচে হাসেনি আশরাফুলের ব্যাট। চিটাগংয়ের প্রথম ম্যাচে আশরাফুল মাত্র ৩ রান করলেও দল জেতায় কেউ তা মনে রাখেনি। কিন্তু পরের ম্যাচে আশরাফুলের ২৩ বলে ২২ রানের ইনিংস প্রয়োজনের মুহূর্তে দলকে আরও পেছনে ঠেলে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত হারতেও হয় চিটাগংকে। সেখান থেকে চিটাগং শিক্ষা নিতেই বোধ হয় আজ আশরাফুলের জায়গায় ইয়াসির।
২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান অবশ্য ব্যাটিং দিয়েই আলোচনার খোরাক জুগিয়েছেন। ২ ছক্কা ২ চারে ৩৪ বলে খেলেছেন ৪১ রানের ইনিংস। টি-টোয়েন্টি বিচারে খুব মারমুখো ইনিংস নয় তবে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন ইয়াসির। দলকে ৪৫ বলে ৬৬ রানের দূরত্বে রেখে আউট হন তিনি। উইকেটের এক প্রান্তে তখন মুশফিকুর রহিম ১৫ বলে ১৫ রানে অপরাজিত। ‘সেট’ হয়ে গেছেন বলাই যায়। অথচ, মুশফিক তো মুশফিক, সিকান্দার রাজা, মোসাদ্দেক হোসেনরা এই ম্যাচ বের করতে পারলেন না! শেষ পর্যন্ত ফ্রাইলিংক ও মেহেদীর তিন ছক্কা শেষ ওভারে ১৯ রানের সমীকরণ প্রায় মিলিয়েই ফেলেছিল।
জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ৩২ রান দরকার ছিল চিটাগংয়ের। কার্লোস ব্রাফেটের করা ১৮তম ওভারে মুশফিক স্রেফ আত্মহত্যা করেছেন। দ্বিতীয় বলে স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট ফাইন লেগে। চিটাগংয়ের রান দরকার ছিল তা ঠিক তবে মুশফিকের শটটি তার চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। মুশফিক আউট হওয়ার পরও ম্যাচ জিততে পারত চিটাগং। সেটি পারতেন ফ্রাইলিংক। শেষ ১২ বলে ২৩ রানের সমীকরণ ছিল এই প্রোটিয়ার সামনে। কিন্তু ১৯তম ওভারে জুনায়েদ খান মাত্র ৪ রান দিয়ে ভীষণ চাপে ফেলে দেন ফ্রাইলিংক ও উইকেটের অন্য প্রান্তে থাকা নাঈম হাসানকে।
শেষ ১৯ রানের সমীকরণ মেলানোর চ্যালেঞ্জ ছিল চিটাগংয়ের। আর প্রথম জয়ের দেখা পেতে খুলনার দরকার ছিল এর আগেই চিটাগংকে বেঁধে ফেলা। শেষ ওভারে আরিফুল হকের হাতে বল তুলে দিয়ে বেশ চমকেই দিয়েছিলেন খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। সেটি বোধ হয় স্ট্রাইকে নাঈম হাসান থাকার জন্য। আরিফুলের প্রথম বল নাঈম ব্যাটে লাগাতে না পারলেও পরের বলটি বাতাসে ভাসিয়ে পাঠিয়ে দেন সীমানার বাইরে। ছক্কা! কিছুটা জমে ওঠে ম্যাচ। কিন্তু তৃতীয় বলেই নাঈমকে তুলে নেন আরিফুল। নাটকের তখনো বাকি ছিল। চতুর্থ বলে ফ্রাইলিংক ছক্কা মারলে ম্যাচ নেমে আসে ২ বলে ৭ রানের সমীকরণে।
আরিফুলের পঞ্চম বলেও মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মারেন ফ্রাইলিংক। গ্যালারিতে তখন চিটাগং সমর্থকদের সে কী উল্লাস! কিন্তু তাঁরা যদি ঘুণাক্ষরেও জানতেন আরিফুলের শেষ বলটা ফ্রাইলিংক ব্যাটেই লাগাতে পারবেন না! সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বল ব্যাটে না লাগলেও ফ্রাইলিংক শুরুতে দৌড়ানোর চেষ্টাটুকু পর্যন্ত করেননি! পরিণামে হতে হয়েছে রান আউট। খুলনার ৬ উইকেটে ১৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে চিটাগংকে থামতে হয় ৮ উইকেটে ১৫১ রানে।