পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন ইরফান পাঠান। যে নামটি যে কোনো ভারতীয়র মুখে হাসি ফোটায়। যে হাসি কিছুক্ষণ পরই রূপ নেয় দীর্ঘশ্বাসে। ৩৫ বছর বয়সে এসে পেশাদার ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন বটে, কিন্তু ভারত যে ইরফানকে ভুলে গেছে আরও বহু বছর আগেই। যে বয়সে একজন পেস বোলার তাঁর চূড়ান্ত ফর্মে দেখা দেন, সে বয়সেই কিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছিটকে গেছেন ইরফান।
২০১২ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে ইরফানকে। টেস্ট খেলেছেন তো সেই কবে ২০০৮ সালে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলেও যে গুরুত্ব হারিয়েছেন সেটা তো ২০১১ বিশ্বকাপ দলে জায়গা হারিয়েই বুঝে গিয়েছিলেন। বিদায় বেলায় নিজের প্রতিভার অপচয়টাই সবচেয়ে দুঃখ দিচ্ছে ইরফানকে, ‘মানুষ ২৭-২৮ বছরের দিকে সেরা খেলাটা খেলে এবং ৩৫ পর্যন্ত খেলে যায়। আমার বয়স যখন ২৭ ছিল তখনই আমি ৩০১ আন্তর্জাতিক উইকেট পেয়েছি, এবং এখানেই থেমে রইলাম। এটাই আমার দুঃখ, আমি যদি এটা ৫০০ থেকে ৬০০ উইকেটে নিতে পারতাম এবং আরও কিছু রান করতাম। কিন্তু সেটা হয়নি।’
২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত ইরফান ২৯ টেস্ট, ১২০ ওয়ানডে ও ২৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেই থেমে গেছেন। অথচ কতটা আলো জেনেই না শুরু হয়েছিল তাঁর। স্টিভ ওয়াহর বিদায়ী সিরিজে অভিষিক্ত ইরফান ১৯ বছর বয়সেই রিভার্স সুইং দিয়ে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন সবাইকে। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম কোনো বোলার হিসেবে টেস্টের প্রথম ওভারতেই হ্যাটট্রিক করেছেন। ওই পাকিস্তানের বিপক্ষেই ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানো এক স্পেলে ফাইনাল সেরা হয়েছেন। ২০০৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরিও পেয়েছিলেন। ফলে ইরফানের জাতীয় দলে ফেরার আসায় ছিলেন অনেকেই। বয়সটা যে সব সময় তাঁর অনুকূলে ছিল।
কিন্তু ইরফান জানতেন তাঁর পক্ষে এটা সম্ভব হবে না, ‘২০১৬ সালেই আমি বুঝে গিয়েছি আমার আর ফেরা হবে না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সৈয়দ মুশতাক আলীতে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছিলাম, সেরা অলরাউন্ডারও ছিলাম। তবু আমাকে ডাকা হয়নি। আমাকে জানানো হয়েছে, নির্বাচকেরা আমার বোলিং নিয়ে খুশি ছিল না। ২০১৬তেই জেনেছিলাম, আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে।’
২০০৩ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ১৬ রানে ৯ উইকেট পেয়ে প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন ইরফান। সে বছরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরামের মতো কিংবদন্তিদের। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সেই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়াই বলছে, সবাইকে হতাশই করেছেন ইরফান।