অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন রবি কুমার। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন থুবড়ে পড়েছিল এই স্পেলে। ভারতীয় যুবা এই পেসার এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা বোলার। সেমিফাইনালে ২টি আর ফাইনালে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের আরও একটি যুব বিশ্বকাপ জয়ের নায়কদের অন্যতম এই রবি।
এমন পারফরম্যান্সের পর রবিকে নিয়ে চর্চা হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাঁর বাবা রাজেন্দ্র কুমার ভারতের আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের একজন জওয়ান (সৈনিক)। অল্প আয়ে চলে তাঁদের সংসার। তবে ছেলে ক্রিকেটপাগল দেখে বাবার গর্বের শেষ নেই। তিনি নিজের সীমিত রোজগার থেকেই টাকা বাঁচিয়ে স্বপ্ন পূরণ করে গেছেন রবির। বাবার নিরন্তর উৎসাহ আর প্রেরণাতেই তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠা।
একসময় কাশ্মীরের শ্রীনগর ছিল রাজেন্দ্র কুমারের কর্মস্থল। ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সেই এলাকায় সিআরপিএফের চাকরিটা মোটেও নিরাপদ ছিল না। ২০০৬ সালেই এক ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন রাজেন্দ্র কুমার। রবি কুমার তখন শিশু। পরিবার পাছে চিন্তিত হয়, তাই শ্রীনগরের গ্রেনেড আক্রমণে মারাত্মক আহত হয়েও পরিবারকে কিছুই জানাননি তিনি। তাঁর আহত হওয়ার খবর সবাই জানতে পারে টেলিভিশন সংবাদে।
সেই গ্রেনেড হামলা কেন, নিজের কোনো সমস্যার কথাই পরিবারকে বলতে চান না রাজেন্দ্র কুমার, ‘আমি নিজের কষ্ট কখনোই পরিবারকে বলে ওদের শান্তি নষ্ট করি না। আমি সব সময়ই চাই ওরা ভালো থাকুক, তাই গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েও ওদের জানাইনি।’
ছেলে রবিকে নিয়ে অনেক গর্ব বাবার, ‘আমি সীমান্তে দেশকে বাঁচাতে গুলি করি আর আমার ছেলে দেশকে সম্মানিত করতে বল ছোড়ে। দুটিই দেশের সেবা। আমি আগে জানতে পারিনি যে রবি এত ভালো ক্রিকেট খেলে। মাঝেমধ্যে ছুটিতে বাড়ি এসে দেখতাম ও ক্রিকেট নিয়েই পড়ে আছে। পড়াশোনা নিয়ে আমি কখনোই ওকে কিছু বলিনি। এ কারণেই হয়তো ও এখন দেশকে গর্বিত করেছে।’
রবি যখন কৈশোরে পা দিয়েছে, তখনই বাবা ছেলের ক্রিকেট প্রতিভার কথা জানতে পারেন, ‘রবির বয়স যখন ১৩ থেকে ১৪, তখনই আমি ক্রিকেটের প্রতি ওর ভালোবাসার কথা জানতে পারি। আমি আসলে ওর জন্য কিছুই করতে পারিনি। কেবল ক্রিকেটের সরঞ্জামাদি কিনে দিয়েছি। বাকি সবটাই সে করেছে, নিজে নিজে। আশা করি, সে সামনে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবে।’