বাবরের সোনালি দুঃখ আর পাকিস্তানের ঘুমপাড়ানি ক্রিকেট

প্রথম গোল্ডেন ডাক পেলেন বাবর।
ছবি: টুইটার

আজহার আলী আউট হয়েছেন ৬ বল আগে। ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ায় বাবর আজম স্ট্রাইক পেলেন না। পরের ওভারের ছয়টি বলই খেললেন ইমরান বাট। স্ট্রাইক পেতে পেতে বাবরকে তাই ডোনাল্ড তিরিপানোর জন্যই অপেক্ষা করতে হলো।

আগের বলেই আজহারকে আউট করা তিরিপানোর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকার কথা। তবে আত্মবিশ্বাসের ছাপ বোলিংয়ে দেখা যায়নি। টেস্টে ফুল লেংথে বল করাটা উইকেট পাওয়ার আশা দেখায় না। বরং ড্রাইভ করতে পারা ব্যাটসম্যানের সামনে পড়লে চার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ইদানীং ক্রিকেটে কাভার ড্রাইভে পাকিস্তান অধিনায়কের তুলনা নেই বললেই চলে।

বাবর সে বলটা মিড অন দিয়ে ঠেলে দিতে চাইলেন। কিন্তু প্রথম বল খেলছেন বলেই কিনা ভুল গেলেন শর্ট মিড অনে এই শটের জন্যই ফাঁদ পাতা। রয় কাইয়া উপহারটা লুফে নিতে ভুল করলেন না। ব্যস, ওতেই না পাওয়া এক স্বাদের আক্ষেপ ঘুচে গেল বাবরের। টেস্টে নিজের প্রথম গোল্ডেন ডাক নিয়ে ফিরলেন বাবর।

অধিনায়কের এমন হতাশার দিনটায় হারারে টেস্টে অবশ্য জেঁকে বসেছে পাকিস্তান। ঘুমপাড়ানি দিনটা তারা শেষ করেছে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রান তুলে। দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ১৯৮ রানে এগিয়ে সফরকারীরা।

দারুণ এক রেকর্ড গড়লেন বাবর।

বাবরের এমন দুঃখের কথা আগে বলা হলেও দ্বিতীয় দিনটা ফাওয়াদ আলমের। গতকালের হতাশা ভুলে জিম্বাবুয়ের বোলার আজ নিজেদের ফিরে পেয়েছেন। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের রান আটকে রেখে উইকেট দিতে বাধ্য করেছেন। এর মধ্যেও সফরকারীদের লিড বাড়িয়ে নেওয়ার দায়িত্বটা বুঝে নিয়েছেন ফাওয়াদ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পেয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

সেই সেঞ্চুরিতে একটি ভুলে যাওয়া রেকর্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ফাওয়াদ। ২০০৯ সালে থমকে যাওয়ার আগে তিন টেস্টের ক্যারিয়ারে একটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ১১ বছর পর গত বছরের আগস্টে আবার টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাব হয় ফাওয়াদের। প্রত্যাবর্তনের পর এটি তাঁর সপ্তম টেস্ট এই ৭ টেস্টের ১২ ইনিংসেই আরও তিনটি সেঞ্চুরি হয়ে গেল তাঁর। মজার ব্যাপার, এই সেঞ্চুরির পাশে নেই কোনো ফিফটি। গত ৫৫ বছরে এমন কিছু কেউ দেখেনি। সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে ইংলিশ ব্যাটসম্যান জন এডরিচ তাঁর প্রথম চার ফিফটিকেই সেঞ্চুরি বানিয়েছিলেন।

এসব রেকর্ডকে বাদ দিলে, আজ হারারেতে দলের পারফরম্যান্স পাকিস্তান কোচকে খুশি করার কথা নয়। জিম্বাবুয়ের ১৭৬ রানের জবাবে গতকালই বিনা উইকেটে ১০৩ রান তুলেছিল পাকিস্তান। গতকাল ওভারপ্রতি ৩–এর বেশি রান তোলা পাকিস্তানের রানের গতি আজ আরও বাড়বে বলেই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পুরো ৯০ ওভার খেলে ৬ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭১ রান তুলেছে পাকিস্তান। সেটাও শেষ দিকে হাসান আলীর ১৮ রানে অপরাজিত ২১ রানের সুবাদে।

তিরিপানো দারুণ বোলিং করেছেন।

দিনের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তান। গতকালই ফিফটি তুলে নেওয়া আবিদ আলী আজ আর মাত্র ৪ রান যোগ করেই ফিরেছেন। ১১৫ রানে ৬০ রান করা আবিদের ফেরার পরও আরেকটি জুটি জমাট বেঁধে গিয়েছিল। ৬১ রান তোলা সে জুটিকে থামান তিরিপানো। ৬ বলের মধ্যে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের মূল দুই অস্ত্র আজহার (৩৬) ও বাবরকে ফিরিয়ে দেন এই পেসার। ৪৪ রান পর আবার উইকেট পতন। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির আশায় থাকা ইমরান বাট ফিরলেন প্রথম নার্ভাস নাইন্টিজের স্বাদ নিয়ে (৯১)।

ফাওয়াদ আলম এরপর লড়াই শুরু করলেন মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে। জিম্বাবুয়ের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং সহজে রান তুলতে দেয়নি পাকিস্তানকে। শেষ সেশনেই রানের গতি বেড়েছে একটু। ফাওয়াদ দ্রুতগতিতে রান তুললেও রিজওয়ান তাল মেলাতে পারছিলেন না। আর সেটা করতে গিয়েই বিদায় নিয়েছেন রিজওয়ান। ১০৭ রানের জুটিটা থামিয়েছেন মুজারাবানি। পরের ওভারেই আবার ধাক্কা। ফাহিম আশরাফকে শূন্য হাতে ফিরিয়েছেন ওই তিরিপানো।

৩৩৪ রানের মধ্যে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে অলআউট করার আশা করছিল। কিন্তু হাসান আলীকে সঙ্গে নিয়ে লিডটা আরও বড় করে নিয়েছেন ফাওয়াদ। ১৫৫ বলে ১৬ চারে ১০৮ রান করে অপরাজিত আছেন ফাওয়াদ।