পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের নিজেদের একটা আলোচনা সভায় বসার সময় বোধ হয় হয়ে এল। পাকিস্তান ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানের বেশ খরা যাচ্ছে এখন। টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডেতে তবু কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছে দলটি। কিন্তু তিন সংস্করণেই আস্থা রাখা যায়, দলে এমন ব্যাটসম্যান মাত্র একজন—বাবর আজম। দলটিতে বিশ্বমানের ব্যাটিং শুধু অধিনায়কের কাছ থেকেই পাওয়া যায়।
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা দুদিন পরপরই তাই বাবরের হয়ে ঢোল পেটান। এ কারণে শীর্ষে থাকা ব্যাটসম্যানের সঙ্গে তুলনা করে বাবর কত ভালো, সেটা প্রমাণের চেষ্টায় নামেন। ফুটবলে যেমন নতুন কোনো তারকা এলেই লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে তুলনা করে অবস্থা বোঝানো হয়। ক্রিকেটেও এখন ব্যাটসম্যান মানেই কোহলি সেটির মানদণ্ড।
এর মধ্যেই আকিব জাভেদ দুদিন আগে বেশ চমকে দিয়েছিলেন। কোহলিকে বলেছিলেন, বাবরের কাছ থেকে ব্যাটিং টেকনিক শিখতে! দুদিনও পার হতে পারেনি, এবার আরেক সাবেক উল্টো কথা বললেন। পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার বলেছেন, বাবরের উচিত কোহলি কীভাবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলেন, সেটা দেখা।
গতকাল ওয়ান্ডারার্সে অদ্ভুত এক ম্যাচ হয়ে গেল। টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল পাকিস্তান। উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য কিছু আছে ভেবে নেওয়া সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে। প্রথম বলেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ২০১৭ সালে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জুটেছিল শারজিল খানের। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বিতর্কিতভাবে তাঁর নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে নেয়। ফিটনেস নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলার পরও তাঁকে টি-টোয়েন্টি দলে ডেকেছে পাকিস্তান। গতকাল তিনি খেলেছেনও। দলের এমন অগাধ আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি এই ওপেনার। ১২ বলে ৮ রান করে ফিরে গেছেন।
১০ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তান এরপর এগিয়েছে ধীরগতিতে। বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ ৮ ওভারে ৫৮ রান তুলেছেন। ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ৩২ রান করা মোহাম্মদ হাফিজ আউট হয়ে গেলে আরও খোলসে ঢুকে পড়েন বাবর। অন্য প্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারানোয় শুধু টিকে থাকায় মন দিয়েছিলেন। ৫০ বলে ঠিক ৫০ রান করে বিদায় নেন বাবর। পাকিস্তানও মাত্র ১৪০ রান তোলে ৯ উইকেট হারিয়ে।
উইকেট যে এমন কোনো মাইনফিল্ড ছিল না, সেটা দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসে টের পাওয়া গেছে। ১৪১ রানের লক্ষ্য ১৪ ওভারেই পেরিয়ে গেছে স্বাগতিক দল। বাবরদের ব্যাটিং দেখে তাই মহাবিরক্ত হয়েছেন শোয়েব আখতার।
পিটিভি স্পোর্টসের সঙ্গে কথোপকথনে শোয়েব আখতার টি-টোয়েন্টি সংস্করণের সেরাদের সঙ্গে বাবরের তুলনা টেনে হতাশা প্রকাশ করেছেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের ভাবতে হবে তাদের ব্যাটিংয়ের ধরন ও স্ট্রাইক রেট এই ফরম্যাটের জন্য যথেষ্ট কি না। আপনি যদি ক্রিস গেইল, বিরাট কোহলি বা এইডেন মার্করামকে ৫০ বল দেন, তারা কী করবে? আর বাবর কী করল?’
টি-টোয়েন্টিতে একজন ব্যাটসম্যান দলের প্রায় অর্ধেক বল খেললে দলের রানের গতি বাড়ানোর দায়িত্বটা তাঁরই থাকে। সেখানে বাবর কাল রান তুলেছেন ১০০ স্ট্রাইক রেটে। অন্য প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়াকে কারণ দেখাতে পারতেন বাবর। কিন্তু শোয়েবের কাছে সেটা অজুহাত বলেই মনে হবে,‘বাবর দারুণ খেলোয়াড়, কিন্তু ৫০ বলে ৫০ রান যথেষ্ট নয়। অন্য প্রান্তে উইকেট পড়লেই খোলসে ঢুকে পড়লে চলবে না। বাবর চাইলে এইডান মার্করামের সঙ্গে ইনিংসের তুলনা করতে পারে। মার্করাম যখন ব্যাট করছিল, তখনো উইকেট পড়ছিল, কিন্তু সে ঠিকই তাঁর আক্রমণাত্মক খেলা চালিয়ে গেছে এবং ৩০ বলে ৫৪ রান করেছে। বাবর তারকা খেলোয়াড়, তাই ওকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে।’
দুদিন আগেই আকিব জাভেদ বাবরের প্রশংসায় ভেসে গিয়েছিলেন। কোহলির চেয়েও বাবরকে এগিয়ে রাখছিলেন পাক প্যাশনের সঙ্গে কথোপকথনে। বলেছিলেন, ‘বাবর আজমের চেয়ে বিরাট কোহলির হাতে শট বেশি আছে। কিন্তু ওর একটা দুর্বলতা আছে। যখন বল সুইং করে, তখন অফ স্টাম্পে সে আটকে পড়ে। ইংল্যান্ডে জেমস অ্যান্ডারসনের বিপক্ষে যেমন হয়েছিল। বাবরের দিকে তাকালে আপনি এমন কোনো দুর্বলতা খুঁজে পাবেন না। শচীন টেন্ডুলকারের মতোই কোনো দুর্বলতা নেই ওর। বাবর টেকনিকের দিক থেকে বেশি (কোহলির তুলনায়) নিরাপদ। সে যদি কোহলির ফিটনেসের কাজ অনুসরণ করে, তাহলে সে আরও ভালো ব্যাটসম্যান হবে। আর কোহলি নিজের টেকনিকে উন্নতি করতে পারবে যদি সে বাবরের ব্যাটিং দেখে।’
এদিকে শোয়েব আখতার বলছেন, কোহলির ব্যাটিং ধরন থেকে বাবরের শেখা উচিত। কে কার কাছ থেকে শিখবেন, সেটা আকিব জাভেদ ও শোয়েব আখতার একটা আলোচনা সভা করে প্রথমে ঠিক করে নিলেই হয়তো সবার সুবিধা হবে!