ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে একদম দাপট দেখিয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স মাশরাফিদের।
প্রথমে বোলিংয়ের কথাই ধরুন, যখন দলের প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেই সময়েই উইকেট তুলে নিয়েছে ছেলেরা। যদিও একসময় মনে হচ্ছিল ওরা ৩৭০ থেকে ৩৮০ রান করে ফেলবে। হেটমায়ার, শাই হোপরা ভালো খেলছিল। কিন্তু বোলাররা সেটা হতে দেয়নি। মোস্তাফিজের সেই স্পেলটি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। দল হিসেবে ভালো বোলিং করেছে বাংলাদেশ, মাশরাফি, সাকিব, সাইফউদ্দিন...সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছে। নতুন বলে সাইফউদ্দিন উইকেটের দাবি মিটিয়েছে, গেইলকে আউট করে। ৩২১ রানে বেঁধে ফেলা বোলারের সাফল্যই বলতে হবে।
বড় স্কোর তাড়া করে জেতার জন্য আমাদের দরকার ছিল ব্যাটিংয়ে ভালো সূচনা, তামিম ও সৌম্য যা নিয়মিত করে আসছে। বড় জুটি হয়নি। তবে নতুন বলের ঝুঁকি পাত্তাই দেয়নি ওপেনাররা, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চাপ সরিয়ে দিয়ে গেছে তামিম-সৌম্য। ওরা রান তাড়া করার পথটা দেখিয়ে দিয়েছে। সাকিবদের বাড়ন্ত রান রেটের চাপ নিতে হয়নি।
লিটন চাপের মুখে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করেছে। যেই ইনিংসটা সে খেলল, যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচে এমন ইনিংস খেলা খুবই কঠিন। শুরুতে একটু নড়বড়ে লেগেছে। কিন্তু খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে সে। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছে বলতেই হয়। ওর শট নির্বাচন দারুণ ছিল। সময়মতো শট খেলেছে, বড় শটের জন্য আদর্শ বলের জন্য অপেক্ষা করেছে। বড় কথা, ম্যাচ শেষ করে এসেছে সে।
সাকিবের কথা কী আর বলব। প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে সাকিব। পরপর দুটি বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি, এর আগে দুটি ফিফটি। আর বোলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট উপহার দিচ্ছে দলকে। সাকিব যে বিশ্বকাপের বড় ক্রিকেটার, বলতে কারও বাধা থাকার কথা না। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায়। আশা করি সে এই ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হবে।
তামিম ভালো খেলেছে, সাকিব-লিটনের কারণে হয়তো চোখে পড়ছে না। তবে ওর ব্যাটিংটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভাগ্য খারাপ, রানআউট হয়েছে।
আর ফিল্ডিংয়ের কথা না বললেই নয়। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ফিল্ডিং দেখেই মনে হয়েছে, বাংলাদেশ এখানে বিশেষ কিছু একটা করতে এসেছে। ফিল্ডিং দেখলেই অনেক কিছু আঁচ করা যায়, ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাই অনেক কিছু বলে দেয়।
আমি এর আগের কলামে বলেছিলাম, বাংলাদেশ দলকে জিততে হলে তিন বিভাগেই ভালো পারফরম্যান্স প্রয়োজন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই বাংলাদেশ নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচ, সেখানেও তিন বিভাগে ভালো খেলতে হবে বাংলাদেশকে। পুরো দলকে প্রতি বিভাগে ভালো করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া পয়েন্ট টেবিলের ওপরের দিকের দল। তাদের দুর্বলতা খুঁজে বের করা কঠিন। কিন্তু কোনো দলই অজেয় নয়। অস্ট্রেলিয়া সব সময় আমাদের সঙ্গে ভালো বোলিং করে থাকে, এবারের বোলিং আক্রমণও অন্যদের তুলনায় ভালো। তবে নিজেদের দিনে বাংলাদেশ কী করতে পারে, সেটাও এখন সবাই দেখেছে।