ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল অনুশীলন করে গেছে সকালে। বাংলাদেশ দল ক্লনটার্ফে এল দুপুরে। আর এই দুই দলের মাঝখানে অনুশীলন সেরে নিলেন আলিম দার। আম্পায়ার মানুষ। মধ্যবর্তী স্থানে থাকাই ভালো কিনা!
কাল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দিয়ে দারও একটা মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছেন। পেশাদার ক্রিকেটে কখনো ৫০ ছুঁতে পারেননি। কাল তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে ডাবল সেঞ্চুরি! এ নিয়ে ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচে দাঁড়াবেন এই পাকিস্তানি। তাঁর আগে যে কীর্তি ছিল মাত্র দুই আম্পায়ারের—রুডি কোয়ের্তজেন ও বিলি বাওডেনের। নিউজিল্যান্ডের বাওডেন ২০০ ওয়ানডের পরই অবসরে গেছেন। প্রোটিয়া আম্পায়ার কোয়ের্তজেন দাঁড়িয়েছেন ২০৯ ওয়ানডেতে। দারের চোখ কোথায় নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।
টেস্টের রেকর্ডটাও খুব বেশি দূরত্বে নেই। স্টিভ বাকনরের ১২৮ ম্যাচ, দারের ১২৫। টি-টোয়েন্টির রেকর্ডটা তাঁরই। তিন সংস্করণ মিলিয়ে রেকর্ডটাও তাঁর। ৩৬৭ ম্যাচ। আলাদা করে ওয়ানডে আর টেস্টের কীর্তিটাও দারের নামের পাশে লেখা হবে, তা মোটামুটি নিশ্চিত।
টেস্টে মাঠে ৬ ঘণ্টা দাঁড়ালেই চলে। ওয়ানডেতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ৮ ঘণ্টা। ফলে ম্যাচের আগের দিন আম্পায়াররাও হালকা অনুশীলন করেন। কিছুটা জগিং, স্ট্রেচিং। ক্লনটার্ফে দার দুলকি চালেই অনুশীলন করে নিলেন। এর মধ্যে পাকিস্তানি এক ওয়েবসাইটের জন্য উর্দুতে একটা ভিডিও সাক্ষাৎকারও দিয়ে ফেললেন। কী বললেন কে জানে! ‘দুয়া’ চাইলেন, তা অবশ্য বোঝা গেল।
প্রযুক্তির এই যুগে আম্পায়ারদের কাজটা কত কঠিন হয়ে গেছে, এমন একটা প্রশ্ন করার অপেক্ষা থাকাটাই সার হলো। পাকিস্তানি ওই দুই তরুণ সাংবাদিক কিংবা ভক্তকে ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েই মাঠের ভেতরে যে ঢুকে যাবেন, তা তো আর বোঝা যায়নি। আলিম ভাই আলিম ভাই বলে পেছন থেকে ডেকেও আর সাড়া পাওয়া গেল না।
৩৬৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করা মানে দীর্ঘ এক যাত্রা। দারের অভিষেকও হয়েছিল ২০০০ সালে। মানে ১৯ বছর ধরে আছেন এই দায়িত্বে। এর মধ্যে টেস্টে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে। টানা তিন বছর আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ার নির্বাচিত হওয়া দারের নির্ভুল সিদ্ধান্তের সুখ্যাতি তুঙ্গে পৌঁছেছিল ২০১১ বিশ্বকাপে। যখন তাঁর বিপক্ষে আবেদন করা ১৫ রিভিউয়ের প্রত্যেকটিতেই দার সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন।
ইদানীং অবশ্য আগের সেই ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন। ৫১ বছর বয়স, কম তো নয়। রেকর্ডগুলো সব নিজের নামে লেখা শেষ হয়ে গেলেই হয়তো অবসরের কথা ভাববেন। মাত্র ৩২ বছর বয়সে ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন বলে দীর্ঘ পথ পেরোনোর সুযোগও পেয়েছেন।
আরও অনেক ক্রিকেটার থেকে আম্পায়ার বনে যাওয়াদের মতো তাঁর গল্পটাও একই রকম। ক্রিকেটার হিসেবে ভবিষ্যৎ নেই বুঝতে পেরেই দ্রুত আম্পায়ারিংয়ে নেমে যাওয়া। তবে ক্রিকেট খেলার নেশাটা কাটাতে বেশ সময় লেগেছে। একটা গল্প তো বেশ বিখ্যাতই হয়ে আছে। ২০০৪ সালে মুম্বাই টেস্টে আম্পায়ারিং করার পরদিনই একটা ম্যাচ খেলতে ছুটে গিয়েছিলেন। ওই ম্যাচে ৮২ রানের ইনিংসও খেলেছিলেন দার!
খেলাটার প্রতি এই পাগলামি না হলে এত দীর্ঘ সময় ধরে আম্পায়ারিং করাও তো কঠিন। ক্রিকেটারদের চেয়েও যাযাবর জীবন আম্পায়ারদের। ক্রিকেটাররা সিরিজ শেষে ঘরে ফেরে। আম্পায়ারদের অনেক সময়ই যেতে হয় অন্য এক দেশে।
ক্রিকেট আমারে আপন করেছে ভুলেছি নিজের ঘর, আমি এক যাযাবর!
আম্পায়ার | ম্যাচ | টিভি আম্পায়ার | মোট |
রুডি কোয়ের্তজেন | ২০৯ | ৪১ | ২৫০ |
বিলি বাওডেন | ২০০ | ৫৯ | ২৫৯ |
আলিম দার | ১৯৯ | ৬১ | ২৬০ |
স্টিভ বাকনর | ১৮১ | ২৬ | ২০৭ |
ড্যারেল হার্পার | ১৭৪ | ৪৫ | ২১৯ |
সাইমন টফেল | ১৭৪ | ৪৬ | ২২০ |