সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচের আগেই দুঃসংবাদ শুনল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগামীকালের ম্যাচে অফ স্পিনার মহীশ তিকশানা ছাড়াই তাদের খেলতে হবে। গতকাল নেদারল্যান্ডসকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচেই পিঠের এক পাশের পেশিতে চোট পেয়েছেন তিকশানা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচ থেকেই দারুণ বোলিং করছেন তিকশানা। প্রথম দুই ম্যাচে ৪২ রানে ৬ উইকেট পেয়েছেন। গতকাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও দারুণ বোলিং করছিলেন এই রহস্য–স্পিনার। মাঠ ছাড়ার আগে এক ওভার বল করে মাত্র ৩ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট।
ম্যাচের বাকি সময় আর মাঠে নামেননি, তাঁর বদলি হিসেবে ফিল্ডিং করেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ড্রেসিংরুমে তিকশানাকে চিকিৎসাসেবা নিতেও দেখা গেছে। আগামীকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
এই অফ স্পিনারকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা কোনো ধরনের ঝুঁকি নেবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ভানুকা রাজাপক্ষে, ‘আমাদের ফিজিও জানিয়েছেন যে খুব সম্ভবত পরের ম্যাচের জন্য তাকে বিবেচনা করা হবে না। আমরা এক ম্যাচ খেলিয়ে গোটা টুর্নামেন্টের জন্য তাকে হারাতে চাই না। এই মুহূর্তে আমি এটুকুই বলতে পারি যে বাংলাদেশের বিপক্ষে সে (তিকশানা) খেলছে না। যদিও শতভাগ নিশ্চিত করে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, কিন্তু খুব সম্ভবত সে এই ম্যাচে থাকবে না এবং পরবর্তী ম্যাচগুলো থেকে আবার মাঠে নামবে।’
এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার শক্তির মূল জায়গাটি হলো তাদের বোলিং। গ্রুপ পর্বের প্রথম তিন ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষকে ৯৬, ১০১ ও ৪৪ রানে আটকে দিয়েছে। পেসার দুষ্মন্ত চামিরা ও লাহিরু কুমারা—এই দুজনের গতির সঙ্গে তিকশানা ও হাসারাঙ্গার ঘূর্ণিতে প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে অল্প রানে গুটিয়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কান বোলাররা।
স্পিনারদের দিকেই প্রথমে নজর গেলেও দলের দুই ফাস্ট বোলারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন রাজাপক্ষে, ‘আমি মনে করি, ৯০ মাইলের চেয়েও বেশি গতিতে বল করতে পারে, এমন দুজন বোলার থাকা একটি দলের জন্য খুবই উপকারী। যেকোনো ব্যাটসম্যানই ওদের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে চমকে যাবে। কারণ, ওরা প্রায় ১৪৫ কিমি বেগে বল করে এবং ক্রিজে ব্যাটসম্যানদের কোনো জায়গা দেয় না। সব সময় ওরা ভালো জায়গায় বল করে। ফলে ব্যাটসম্যানরা ওদের বল ভালোমতো খেলতে পারে না।’
স্পিনারদের প্রশংসা করতেও ভুললেন না তিনি, ‘পেসারদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্পিনাররাও অনেক ভালো বল করেছে। তারা তাদের মূল কাজগুলো ঠিকঠাক করতে পেরেছে এবং গ্রুপ পর্যায়ে আমাদের এত ভালো খেলার অন্যতম কারণ এটা।’
রাজাপক্ষে জানালেন, প্রথম পর্বের পাওয়া তিন জয় সুপার টুয়েলভ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে শ্রীলঙ্কাকে, ‘ম্যাচ জেতা সব সময়ই বিশেষ কিছু, সেটা সহযোগী দল হোক বা বড় দল। আমরা জানি, সামনে আমরা নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডস বা আয়ারল্যান্ডের তুলনায় অনেক কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলব। আইসিসির একটি সহযোগী দেশ হয়েও নামিবিয়া সুপার টুয়েলভে পা রাখতে পারায় আমি খুবই খুশি। আমি মনে করি, তারা খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছে এবং সামনের দিনগুলোতে তারা এ থেকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস পাবে।’
শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনে এবার শ্রীলঙ্কা দলের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচে আভিষ্কা ফার্নান্দোকে চারে এবং ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন করে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে পাঁচে খেলানোর বুদ্ধিটা তিনিই দিয়েছিলেন।
কিন্তু সুপার টুয়েলভের কোনো ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই দেশে ফিরছেন। শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকদের কাছে নিজের এ সিদ্ধান্তের ব্যখ্যা দিয়েছেন জয়াবর্ধনে, ‘দেখুন, এভাবে কোয়ারেন্টিন ও জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকাটা খুবই কঠিন। আমি হিসাব করে দেখলাম, প্রায় ১৩৫ দিন ধরে আমি এভাবে ভ্রমণ করছি এবং এখন আমি খুবই ক্লান্ত। কিন্তু আমি এই টুর্নামেন্টের গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারি। আমি তাদের বলেছি যে আমি প্রযুক্তির মাধ্যমে গোটা দলের সঙ্গে সংযুক্ত থাকব এবং যতটা সম্ভব তাদের সাহায্য করব। আমি আশা করি, সবাই বুঝতে পারবে যে একজন বাবা হয়ে অনেক দিন ধরে নিজের মেয়েকে দেখতে না পারা কতটা কষ্টের। ফলে আমার এখন দেশে ফেরাটা প্রয়োজন।’
রাজাপক্ষেও জয়াবর্ধনের সুরে সুর মেলান, ‘টুর্নামেন্টের বাকি সময়গুলোতে তিনি আমাদের সঙ্গে থাকলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু প্রায় ছয় মাস ধরে তিনি তাঁর মেয়েকে দেখেন না। ফলে আমি তাঁর অবস্থাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু যাওয়ার আগে তিনি আমাদের কিছু পরিকল্পনা তৈরি করে দিয়ে গেছেন, খেলা বিশ্লেষণে গতকাল ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন এবং জুম বা যেকোনোভাবেই আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারব। তাঁর উপস্থিতি দলে কেমন প্রভাব ফেলে, এ নিয়ে তো কিছুই বলার নেই। আমরা তাঁর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ এবং ভবিষ্যতেও তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
আগামীকাল বিকেল চারটায় শারজায় বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কা।