বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন কী হবে বলে দিলেন মাশরাফি

ব্যর্থ একটা বিশ্বকাপ কাটানোর পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন কী হবে, সেটা ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। মাশরাফি শুরুটা করেছেন এভাবে, ‘আরও একটি বিশ্বকাপ শেষ হলো। ৮ ম্যাচ খেলেছি, ২টি জয়, ৬টি হার...। প্রথমেই বলে নেই, ক্রিকেটারদের দায় কোনোভাবেই এড়ানোর উপায় নেই। বিশেষ করে, যেভাবে আমরা হেরেছি।’

এমন অবস্থায় মাহমুদউল্লাহদের পাশে দাঁড়ানো কঠিন বলে উল্লেখ করেছেন মাশরাফি। তবে একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যে ক্রিকেটারদের পাশেই আছেন সেটাও মাশরাফি বুঝিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহদের একটি পরামর্শ দিয়ে, ‘আমি বিশ্বাস করি, ওরা হয়তো খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। ঠিক এই মুহূর্তে ক্রিকেটারদের উচিত ধৈর্য ধরা ও সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা। কোনো সমালোচনার জবাব দেওয়া উচিত নয়। আশা করি, তারা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে এবং সঠিক কাজটি করবে।’

লোক দেখানোর জন্য মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন মাশরাফি

মাশরাফি এরপর তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামনের কিছুদিনের সম্ভাব্য ঘটনাপ্রবাহ, ‘কিছু ব্যাপার মেলানো প্রয়োজন। সেটা হলো, খারাপ হওয়ার প্রথম দায় অবশ্যই ক্রিকেটারদের। এরপর আর কি কারও দায় নেই? শুধু ক্রিকেটারদের ঘাড়ে চাপিয়ে যদি শেষ করেন, তাহলে মনে রাখবেন, আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। প্রমাণ তো আগেও দেখা গেছে!’ মাশরাফির লেখার শেষ এখানেই নয়। তাঁর ধারণা এখন কাউকে না কাউকে বলির পাঠা বানানোর চেষ্টা করা হবে, ‘আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও বলে দেওয়া যায়, এখন সামনে কী হবে। হয়তো কাউকে বাদ দেওয়া হবে, কারও ওপর অদৃশ্য রাগ ঝাড়া হবে, (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হবে। সমর্থকরা যে ক্রিকেটারকে পছন্দ করছে না, তার ওপর ঝাল মিটিয়ে সমর্থকদের শান্ত করা হবে। সাংবাদিক ভাইদের নানা কিছু বোঝানোর চেষ্টা করা হবে।’

নিজেদের দায় এড়াতে কর্মকর্তারা ক্রিকেটারদের বলির পাঠা বানাতে পারে বলে মনে করেন মাশরাফি

কেন কর্তৃপক্ষ এগুলো করবে তাও বলেছেন মাশরাফি, ‘আগেও দেখেছি যে, এসব করে একেকটা পক্ষ দাঁড় করানো হয় এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, সামনের বিশ্বকাপে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরাও ভাই আবেগী মানুষ, এসব দেখে সব ভুলে আশা নিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকব। এরপর বিশ্বকাপ আসবে, দেখা যাবে একই ফলের পুনরাবৃত্তি!’ বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তাদের উদ্দেশ করে এরপর মাশরাফি লিখেছেন, ‘ক্রিকেটারদের দায় দিন, ভালো কথা। সেটা তাদের প্রাপ্য। পাশাপাশি, নিজেরাও বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনারাও ব্যর্থ! কারণ, এই পুরো প্রক্রিয়ার অংশ আপনারাও।’

তবে কর্মকর্তারা যাই বলুন আর যাই করুন, দায় তাঁদেরও নিতে হবে বলে মনে করেন মাশরাফি, ‘আপনারা অন্যান্যবারের মতো বলতেই পারেন, “অমুকের জন্য পারিনি, তমুক ব্যর্থ হয়েছে, এ জন্যই পারলাম না।” সে ক্ষেত্রে তো দায়টা আপনাদেরও, কারণ উপযুক্ত বিকল্প আপনারা তৈরি করতে পারেননি। সেই দায়িত্ব তো আপনাদের কাঁধেই ছিল আপনাদের তো আগেই বোঝা উচিত ছিল! আপনারা সেটা পারেননি। তাই দয়া করে, সত্যকে আলিঙ্গন করুন এবং নতুনভাবে কাজ শুরু করুন।’

মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কিছু পরামর্শও দিয়েছেন, ‘সামনে আরেকটি বিশ্বকাপের দোহাই দিয়ে, ক্রিকেটারদের ক্ষতি না করে প্রক্রিয়াটা ঠিক করুন। দেখবেন, তখন দল আপনাআপনি ভালো খেলবে। দলকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদেরই। তাই দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে দায়িত্ব নিয়েই কথা বলা বা কাজ আমরা আশা করি। সবচেয়ে বড় শঙ্কা আমি যা দেখছি, ক্রিকেটারদের বলির পাঠা বানিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া হবে যে, “আমরা অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা সামনের বিশ্বকাপে বড় ভূমিকা রাখবে।” আসলে এতে ক্রিকেটের কোনো লাভ হবে না। ক্রিকেটার তৈরি ও গড়ে তুলতে আধুনিক ক্রিকেটে প্রক্রিয়াগুলো দেখুন এবং সেগুলো দেশের ক্রিকেটে অ্যাপ্লাই করুন। তাদের যত্ন করুন, হয়তো তারা সামনের পথচলায় আমাদের দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দেবে।’

বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ

মাশরাফি তার স্ট্যাটাস শেষ করেছেন এভাবে, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে। কারণ একজন প্রপার খেলোয়াড় তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। সবাই না বুঝলেও, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট লোকদের এসব বোঝা উচিত। তাই সময় লাগুক, কিন্তু প্রক্রিয়া নতুন করে সাজান। ত্বরিত সিদ্ধান্ত খুব বেশি কাজে দেবে না। দয়া করে এই কথা বলবেন না যে, “২০২২ বা ২০২৩ বিশ্বকাপে এদের দিয়ে হবে না, তাই সব নতুন সুযোগ দিতে হবে।” নতুনদের সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে, তবে তাদের তৈরি করে। আমরা আপনাদের সঙ্গেই আছি, কারণ আমাদের শরীরের প্রতিটি রক্ত কণিকায় শুধু ক্রিকেটই বসবাস করে।’ সব শেষে একটি অনুরোধ করেছেন মাশরাফি, ‘দয়া করে কেউ পারসোনালি নেবেন না আশা করি। দূরে থেকেও আমরা আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী । আজীবনই তা থাকব।’