>২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবসে চামিন্ডা ভাস মোটেও প্রেমময় আচরণ করেননি বাংলাদেশের সঙ্গে। বিশ্বকাপের ম্যাচে প্রথম ওভারেই ৪ উইকেট (প্রথম তিন বলে তিন উইকেট, পঞ্চম বলে আরেকটি) নিয়ে শুরুতেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। অনূর্ধ্ব–১৯ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা দলের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চামিন্ডা ভাসের সঙ্গে বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলাপ হলো ইকরামুল হকের।
প্রশ্ন: ‘চামিন্ডা ভাস’ নামটা শুনলেই বাংলাদেশের মানুষের মনে পড়ে এক ‘দানবকে’! ২০০৩ বিশ্বকাপে প্রথম তিন বলে...
ভাস: (হেসে) হ্যাঁ, সেটাই তো স্বাভাবিক। তাই না? তবে আমার বিশ্বাস, এখন বাংলাদেশের মানুষ আর আমাকে শত্রু ভাবে না। বাংলাদেশের কোনো বোলার এক ম্যাচের এক ওভারে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট ফেলে দিলে নিশ্চয়ই আমার দেশেও একই ‘সমাদর’ পেত! (আবার হাসি)। দারুণ একটা স্মৃতি ওটা। কখনো ভুলব না। আসলে একজন পেসারের জীবনে এমন সুযোগ তো আর বারবার আসে না।
প্রশ্ন: যে তিন ব্যাটসম্যানকে প্রথম তিন বলে আউট করে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সেদিন, তাঁদের কথা মনে আছে?
ভাস: মোহাম্মদ আশরাফুল ছিল, এটুকু মনে আছে। বাকিদের কথা ঠিক মনে পড়ছে না। তবে আমাকে নিশ্চয়ই ওরা মনে রেখেছে।
প্রশ্ন: প্রথম বলে যাঁকে আউট করেছিলেন সেই হান্নান সরকার কিন্তু বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যানেজার...
ভাস: তাই নাকি? ওর সঙ্গে তো তাহলে দেখা করতে হবে। একটু পুরোনো দিনের কথা বলা যাবে।
প্রশ্ন: ২০০৩ বিশ্বকাপের স্মৃতিই যখন টাটকা, ফিরে যাওয়া যাক ২০০১ সালে। ১৯ রানে জিম্বাবুয়ের ৮ উইকেট নেওয়ার কথাও নিশ্চয়ই আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে আছে?
ভাস: ওটা তো এখনো ওয়ানডে রেকর্ড তাই না? কীভাবে ভুলি! তবে কথা হলো, রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। যেদিন ওয়ানডের সেরা বোলিং বিশ্লেষণ অন্য কারও কাছে যাবে, সেদিন আমিই সবচেয়ে খুশি হব। আমিই তাঁকে সবার আগে অভিনন্দন জানাব। তবে রেকর্ডটা কোনো পেসার ভাঙলেই বোধ হয় একটু বেশি খুশি হব। (হাসি)
প্রশ্ন: মুত্তিয়া মুরালিধরনের যুগে জন্মে, তাঁর সঙ্গে বোলিংয়ে জুটি বেঁধে লঙ্কান বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুরালির বিশালত্বের নিচে নিজেকে আলাদা করে চেনানোর কাজটা কঠিন ছিল না? উইকেটও তো তখন মুরালির কথা ভেবেই বানানো হতো।
ভাস: মুত্তিয়ার সঙ্গে খেলাটা আমার জন্য বিশাল গৌরবের। অনেকে হয়তো দ্বিমত করতে পারেন। কিন্তু ও শুধু সময়ের সেরা ছিল না, আমার কাছে সর্বকালের সেরা। আর আমার কথা যদি বলেন, আমি শ্রীলঙ্কার জার্সিতে খেলতে পেরেছি, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু ছিল না। আমি চেয়েছি দলের জন্য, দেশের জন্য কিছু করতে। সেটা করতেই প্রতিনিয়ত বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছি বোলিংয়ে। ফিট রাখার চেষ্টা করেছি নিজেকে। নিজেকে চেনাতে পেরেছি কি পারিনি সেটার চেয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি, সেটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।
প্রশ্ন: বৈচিত্র্য বাড়াতে শেষের দিকে বোলিংয়ে রিভার্স সুইং যোগ করেছিলেন। অফ কাটার-সুইং তো ছিলই। বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানকে দেখেছেন?
ভাস: হ্যাঁ, দেখেছি। ছেলেটা (মোস্তাফিজ) দারুণ প্রতিভাবান। কিন্তু ওকে আরও বেশি পরিচর্যার দরকার। সেটা নিজেকেই করতে হবে। প্রথমত, ফিটনেসটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শতভাগ ফিট থাকলে পারফরম্যান্সে উন্নতি হবেই। এবার এশিয়া কাপেই কিন্তু সেটা ওর মধ্যে দেখলাম। মনে হলো নিজেকে ফিরে পাচ্ছে। মাঝের সময়টা হয়তো একটু সমস্যা হচ্ছিল। তবে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছু দেবে সে।
প্রশ্ন: আর অন্যান্য পেসার...
ভাস: মাশরাফির সঙ্গে তো আমি নিজেই খেলেছি। এখনো কী নিয়ন্ত্রণ ওর বোলিংয়ে। আরও অনেক বড় পেসার হতে পারত ও। এত চোটের পরও এখনো যেভাবে খেলে যাচ্ছে, বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। আর শেষ কয়েক বছরে তো ওর অধিনায়কত্বও দেখছি। দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী। বাংলাদেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, প্রশংসা না করাটা অন্যায় হবে।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে কেমন দেখলেন?
ভাস: দুর্দান্ত! আসলে বাংলাদেশ গত ১০-১২ বছরে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। এই সময়ের আগে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যেখানে ছিল, সেখান থেকে এত দূর আসাটা মুখের কথা নয়। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটে সম্মানজনক একটা জায়গা আদায় করে নিয়েছে। এই যে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলল, সেটা তো এমনি এমনি হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো শিরোপাও জিততে শুরু করবে। আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের দারুণ ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।
প্রশ্ন: দেখছিলাম, যুব দলের পেসারদের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ক্লান্তিহীনভাবে। নিজে থেকে টেকনিক দেখিয়ে দিচ্ছেন। কেমন লাগে কোচিং?
ভাস: আমি প্রচণ্ড উপভোগ করি ব্যাপারটা। যখন নিজে খেলেছি তখন দেশের জন্য একভাবে অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। এখন আরেকভাবে চেষ্টা করছি। আর যুব দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। কারণ এখানে হাতে ধরে একজন পেসারকে গড়ে তোলা যায়। সেটা অনেক বেশি তৃপ্তির। কারণ, এই তরুণেরাই একদিন জাতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কার হয়ে গৌরব বয়ে আনবে। আমি জানব, ওদের বেড়ে ওঠায় আমারও খানিকটা অবদান ছিল।
প্রশ্ন: জাতীয় দলের সঙ্গেও তো কাজ করেছেন। আবার ফিরতে চান সেখানে?
ভাস: জাতীয় দলে পেস বোলিং কোচের কাজ করতে পারা অনেক গৌরবের। আমি তো প্রস্তুত। আমাকে ডাকলেই হাজির হয়ে যাব। আমার খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যদি জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করতে পারি, তার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে।