টেস্ট ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্য গত জানুয়ারির নিউজিল্যান্ড সফরেই দেখিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক জয়ে তরুণ এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন ২২৮ বল খেলে। উইকেটে পড়ে থেকে প্রথাগত টেস্ট মেজাজে খেলায় মাহমুদুলের যে দক্ষতা, সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল বোল্ট-সাউদিদের নিউজিল্যান্ড।
সেই ৭৮ রানের পরের ইনিংসেই কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেললেন মাহমুদুল। আজ ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের ক্লান্ত করে মাঠ ছাড়ার আগে মাহমুদুলের ব্যাট থেকে এসেছে ৩২৬ বলে ১৩৭ রান। ৪৪২ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৫টি চার ও ২টি ছক্কায় মাহমুদুল বুনেছেন তাঁর প্রথম টেস্ট শতক, যা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশেরও প্রথম।
টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ইনিংসেই ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠা মাহমুদুলকে দেখে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স তো রীতিমতো মুগ্ধ। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দুই প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এই অস্ট্রেলীয় কোচের। মাহমুদুলের মতো নিশ্ছিদ্র ব্যাটসম্যান নাকি তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে খুব কমই দেখেছেন।
ম্যাচ শেষে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সিডন্স বলছিলেন, ‘আমরা সবাই ওর পারফরম্যান্সে গর্বিত। পুরো ইনিংসটিই ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিশেষ কিছু। আমার মনে হয় না এর চেয়ে ভালো টেস্ট ইনিংস খুব বেশি আছে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। ওর ধৈর্যটা আমার চোখে পড়েছে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই ধৈর্যটা তেমন দেখা যায় না। সব সময়ই আলগা ব্যাটিং দেখা যায়।’
মাহমুদুলের ব্যাটিং মস্তিষ্কও মুগ্ধ করেছে সিডন্সকে। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন, ‘জয় (মাহমুদুল) ওদের ফিল্ডারদের নিয়ে খেলেছে। সে ওভার দ্য টপে খেলেছে। তাকে তুলে মারতে দেখে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ফিল্ডার পেছনে নিয়েছে, তখন সে বল ঠেলে এক রান নিয়েছে। ফিল্ডিং নিয়ে খেলা, ধৈর্য নিয়ে বাজে বলের অপেক্ষা করা এবং নিজের ওপর ছয় ঘণ্টা ব্যাটিং করার বিশ্বাস রাখা—এটাই সব তরুণকে বলছি। জয়ের ইনিংসের পর আমরা এখন ওদের কাছ থেকে আরও বড় বড় ইনিংস প্রত্যাশা করতে পারি।’
মাহমুদুলকে নিয়ে সিডন্সকে আশাবাদী মনে হলেও ডারবান টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করলেন না। ৭৫ রানে পিছিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করা বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ ইনিংসের বড় চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে। এই টেস্ট জিততে হলে চতুর্থ দিন সকালের সেশনটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি বুঝিয়ে দিলেন সিডন্স নিজেই, ‘আমরা কিছুটা পিছিয়ে। আমাদের কিছু রান বেশি করতে হতো অথবা কম দিতে হতো। এই উইকেট সাড়ে তিন শর উইকেট না। ২৮০-৩০০ রান হলে ঠিক ছিল। ওদের ৬০ রান বেশি দিয়ে দিয়েছি। আমাদের এখন আগামীকাল সকালে দ্রুত উইকেট নিতে হবে। ওরা যদি এক সেশনে ৮০-৯০ রান করে ফেলে, তাহলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাব। তখন আমাদের আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।’