>ক্যারিবীয় সফরের প্রথম টেস্টে হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত সিরিজটা তারা ড্র করেছে। বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে নিয়মিত অধিনায়ককে হারিয়েও বার্বাডোজ টেস্টে শ্রীলঙ্কা যেভাবে খেলেছে, অসাধারণ! ক্যারিবীয় পেসারদের তোপ কীভাবে সামলাতে হবে, বাংলাদেশকে যেন সেই পথটিই দেখিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা।
পোর্ট অব স্পেনে ২২৬ রানের বড় হার দিয়ে ক্যারিবীয় সফর শুরু শ্রীলঙ্কার। সেন্ট লুসিয়া টেস্টের শুরুটাও ভালো হলো না। ব্যাটে-বলের লড়াই ছাপিয়ে এই টেস্ট আলোচিত হলো এক বিতর্কিত ঘটনায়। শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমালের বিরুদ্ধে উঠল বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ। বল টেম্পারিং বিতর্কে সম্মান বাঁচানোর লড়াইয়ে নামতে হলো শ্রীলঙ্কাকে। নানা ঘটনা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত টেস্টটা ড্র করে ফেলল শ্রীলঙ্কা।
ড্র কেন, একটু এদিক-ওদিক হলে সেন্ট লুসিয়া টেস্টের গল্পটা অন্য রকমও হতে পারত। তিন টেস্ট সিরিজে তবু শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে। এর মধ্যে একটা দুঃসংবাদ পেল লঙ্কানরা। বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি পেলেন চান্ডিমাল। শাস্তি হিসেবে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ককে এক টেস্ট নিষিদ্ধ করা হলো। সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে তাই নামতে হলো অধিনায়ককে ছাড়াই।
বল টেম্পারিং নিয়ে তোলপাড়, অধিনায়ক নিষিদ্ধ—এ পরিস্থিতিতে একটি দলের পক্ষে মানসিকভাবে শক্ত থাকা ভীষণ কঠিন। সেই কঠিন কাজটা শ্রীলঙ্কা কী দারুণভাবে করল বার্বাডোজ টেস্টে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে নিজেদের শুরুটা প্রথমে ভালো হয়নি। লঙ্কানরা অলআউট হয় ১৫৪ রানে। বার্বাডোজ টেস্টের তৃতীয় দিনে হলো উইকেট-বৃষ্টি। দুই দল মিলিয়ে উইকেট হারাল ২০টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজে কোনো টেস্টের একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পড়ার রেকর্ড হলো এদিন। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা পেল ১৪৪ রানের লক্ষ্য। বোলিং-বান্ধব উইকেটে ছোট লক্ষ্যটা শ্রীলঙ্কানদের সামনে কঠিন হয়ে গেল। ৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা জিতল দুই পেরেরা-দিলরুয়ান আর কুশলের দৃঢ়তায়।
বল টেম্পারিং বিতর্ক, অধিনায়ককে হারানো, শ্রীলঙ্কা যেন মাঠের বাইরের সব জবাব দেওয়ার লক্ষ্যেই নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত তারা সফলও হয়েছে। কাল সিরিজের শেষ টেস্টটা জিতে ১-১ ড্র করেছে শ্রীলঙ্কা। বার্বাডোজে শ্রীলঙ্কা জিতে যাওয়ায় ক্যারিবীয় দ্বীপের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাজে শুরু আর নানা বিতর্কিত ঘটনার পরও সিরিজ ড্র করে শ্রীলঙ্কা যেন বাংলাদেশকে পথ দেখাল। দেখাল কীভাবে ক্যারিবীয় পেসারদের তোপ সামলাতে হয়, কীভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে লড়াই করতে হয়।
শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজটা আসলে বোলারদের, আরও নির্দিষ্ট করে বললে পেসারদের। পুরো সিরিজে সেঞ্চুরি এসেছে তিনটি। পেসারদের দাপট এতটাই ছিল যে তিন টেস্টের ১২ ইনিংসে ৪০০ পেরিয়েছে মাত্র একবার।
সেটিও প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৮ উইকেটে ৪১৪)। টেস্টের ফল নির্ধারণ করেছে দুই দলের পেসাররাই। সিরিজের সেরা পাঁচ বোলার যে পেসার হবে, খুব স্বাভাবিক। ২০ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। সেন্ট লুসিয়া টেস্টেই পেয়েছেন ১৩ উইকেট, ইনিংসে ৮ উইকেট। শ্রীলঙ্কান পেসার লাহিরু কুমারা ১৭ উইকেট নিয়ে আছেন দুইয়ে। ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার পেয়েছেন ১২ উইকেট।
আগামী মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষেও যে একই অস্ত্র নিয়ে ক্যারিবীয়রা নামবে, বোঝাই যাচ্ছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জবাব দেওয়ার নির্দেশিকা সাকিব-তামিম-মুশফিকদের সামনে দেওয়াই আছে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দলে যেভাবে খেলে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে, বাংলাদেশকে শুধু একই পথ ধরে এগোতে হবে।