শ্রীলঙ্কার একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো আজ। অভিজ্ঞতা বলতে অবশ্যই তিক্ত অভিজ্ঞতা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগে যে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে লঙ্কানরা, কখনো হারেনি। আজ সেই শ্রীলঙ্কা পাত্তাই পেল না আফগানিস্তানের কাছে! আবুধাবিতে আফগানদের কাছে ৯১ রানে হেরে সবার আগে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দল।
‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা এভাবে ধুঁকছে...’—নিরপেক্ষ দেশের ধারাভাষ্যকর হয়েও রমিজ রাজার কণ্ঠে হতাশা। হতাশ মাঠে উপস্থিত লঙ্কান দর্শকেরাও। আজ কোনো বিভাগেই আফগানিস্তানের সঙ্গে পেরে ওঠেনি শ্রীলঙ্কা, যেমনটা তারা পারেনি বাংলাদেশের বিপক্ষে। ফিল্ডিংটা হয়েছে জঘন্য। ব্যাটিং আরও বাজে! আফগানিস্তানকে অলআউট করাটা যদি বোলিং সাফল্য হয়, তবে সেটি ম্লান হয়ে যায় এই মন্থর উইকেটে নবী-রহমতদের ২৪৯ রান করতে দেওয়ায়।
২৫০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই শ্রীলঙ্কার ধাক্কা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই কুশল মেন্ডিসকে এলবিডব্লু করে ফেরান মুজিবুর রহমান। দ্বিতীয় উইকেটে উপুল থারাঙ্গার সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়ে সেই চাপ সামলে নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু হাস্যকর এক রানআউট হয়ে ধনাঞ্জয়া (২৩) ফিরলে শ্রীলঙ্কা হারিয়ে ফেলে পথ, যেটি তারা আর খুঁজে পায়নি। ১০৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর যদিও লঙ্কানরা একটু আশা খুঁজে পেয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস-থিসারা পেরেরার ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানও সেই আশা পূরণ করতে পারেননি, দুজনের জুটি ভেঙেছে ৩৫ রান যোগ করে। ১৫ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানরা ৪১.২ ওভারে অলআউট ১৫৮ রানে।
একটা সময় যে শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং নিয়ে প্রশংসার অন্ত ছিল না, সেই শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিংই কিনা এবার এশিয়া কাপে হাসির খোরাক হয়ে উঠেছে। এবারের এশিয়া কাপে ক্যাচ ফেলার এক প্রদর্শনীই মেলে ধরেছে শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তান প্রথমে ব্যাটিং করে শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে যে ২৪৯ রান করেছে, তাতে আফগান ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্বের চেয়ে শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারদের বদান্যতা একটুও কম নয়। যেটির শুরু ম্যাচের পঞ্চম ওভারেই। পরপর দুই বলে দুবার আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন আকিলা ধনাঞ্জয়া। লাসিথ মালিঙ্গার চতুর্থ আর পঞ্চম বল দুটি ছিল একই রকম—শর্ট বল। দুবারই আপার কাট করে সেটিকে থার্ডম্যানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আফগান ওপেনার। প্রথমবার মিস করার পর হয়তো আকিলা ভাবতেও পারেননি, পরের বলেও একই সুযোগ দেবেন শাহজাদ। হয়তো অসতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন, এবার তাই আর বলের কাছেই পৌঁছাতে পারলেন না।
আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও যেন বুঝে গিয়েছিলেন, বোল্ড আর এলবিডব্লু না হলেই হলো, রান আসবেই! রহমত শাহ, ইহসানউল্লাহরা সেই সুযোগটাই নিয়েছেন। ধীরস্থির ব্যাট করে রান বাড়িয়ে নিয়েছেন স্কোরকার্ডে। আর লেজের ব্যাটসম্যানরা শেষ ৪৮ বলে আফগানরা তুলেছে ৫৬ রান। শেষ দিকে ঝড় তুলতে গিয়ে আফগানরা অবশ্য নিয়মিত উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়েছে ইনিংসের একদম শেষ বলে। আর এতে লাভবান হয়েছেন থিসারা। পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ৫ উইকেট। শুরুর দিকে ভালো না করতে পারলেও আফগানিস্তানের লেজের ব্যাটসম্যানদের তুলে নিয়েছেন অনায়াসে। শেষ ৩ ওভারে আফগানিস্তানের যে ৪ উইকেট পড়েছে, প্রতিটিই থিসারার। ৯ ওভার বোলিং করে ৫৫ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট।
২০১৪ এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল আফগানিস্তান, পরে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও। আজ এ তালিকায় যোগ হলে শ্রীলঙ্কা—আফগানদের উত্থানের চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমেই। আজ তাদের আনন্দ বেড়ে দ্বিগুণ হবে, এ জয় যে রশিদ খানদের সুপার ফোরে তুলে দিয়েছে। ওহ্, আফগানিস্তানের এই সাফল্যে খুশি হতে পারে বাংলাদেশও। ২০ সেপ্টেম্বর আবুধাবিতেই আফগানদের বিপক্ষে মাশরাফিরা খেলবেন সুপার ফোরের ওঠার চিন্তা ছাড়াই!