প্রশ্নটা শুনে রোহিত শর্মা বেশ মজা পেলেন।
বাংলাদেশকে পেলেই কেন যেন তাঁর ব্যাটটা অস্বাভাবিক চওড়া হয়ে ওঠে। তাঁকে সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে বাংলাদেশ ছক কষে। তবু বেশির ভাগ সময় তাঁকে যে আটকানো যায় না—এর রহস্যটা কী? রোহিত হাসলেন, ‘যদি রহস্যটা বলেই দিই তাহলে তো ওরা সেটা জেনে যাবে। আমাকে আটকাতে চেষ্টা করবে। এটা কিছুতেই বলা যাবে না!’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘আমি সব প্রতিপক্ষের সঙ্গেই ভালো খেলতে পছন্দ করি। শুধু বাংলাদেশ নয়। এখানে ক্রিকেট খেলতে এসেছি। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা অনেক সম্মানের। আমি খেলাটার সবকিছুই উপভোগ করি।’
রোহিত নিজের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের রহস্য উন্মোচন করতে চাইবেন না, সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের তা করতে হবে। না হলে কী ফল—কাল মিনহাজুল আবেদীন নাগপুরে স্বচ্ছ সুনীল আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন, ‘প্রথম ম্যাচে ওকে দ্রুত ফেরানো গিয়েছিল বলেই তো ম্যাচটা আমাদের মুঠোয় চলে এসেছিল। পরের ম্যাচে পারিনি, একাই ম্যাচ হারিয়ে দিয়েছে।’
বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আজ রোহিতের আটকানোর অনেক পরিকল্পনা করেই ‘ফাইনালে’ রূপ নেওয়া সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে নামবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে পরিসংখ্যান ভীষণ উজ্জ্বল বলে ম্যাচের আগে বারবার রোহিত-প্রসঙ্গ আসছে। ভারতের বাকি ব্যাটসম্যানদেরও হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। শিখর ধাওয়ান-লোকেশ রাহুলদের কাছে যেহেতু ভারতের বড় ইনিংস পাওনা হয়ে গেছে, আজ দেখা গেল রোহিত নন; বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে জ্বলে উঠেছেন ধাওয়ান-রাহুলরা! তবে বাংলাদেশ কিছুটা খুশি নাগপুরের উইকেট দেখে। রাজকোটের মতো অন্তত ন্যাড়া, ব্যাটিংবান্ধব নয় যে চাইলেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাবেন। এই উইকেটে নাকি তিন মাস আগে নতুন মাটি ফেলা হয়েছে। বল উঠবে, তবে স্কিড করতে পারে। একটু মন্থর, বল থেমে আসে—এ ধরনের উইকেটে বাংলাদেশ খেলতে একটু বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। নাগপুরের উইকেট যদি এমন হয়, বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস উঁচুতেই থাকার কথা। উইকেট নিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক বলছেন, ‘নাগপুরে সাধারণত ভালো খেলার উইকেট হয়। বোলাররা সহায়তা পাবে, যদি ঠিক জায়গায় বোলিং করতে পারে।’
>নাগপুরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে ভালোই পরিচয় আছে এই উইকেটের সঙ্গে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নাগপুর টেস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছিল ১২৪ রানে, ম্যাচটি গড়ায়নি চতুর্থ দিনেও। ডমিঙ্গো তখন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ। সেই অভিজ্ঞতা থেকে কাল বললেন, ‘সর্বশেষ যখন নাগপুরে এসেছিলাম খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল দুই দিনেই (তিন দিন)। এখন একটু ভালো দেখাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে রাজকোটের চেয়ে নাগপুরে রান কম হয়। ওখানে গড়ে স্কোর ১৮৫, এখানে সেটি ১৫৫। আমার মনে হয়, স্পিনাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এখানে।’
দিল্লি-রাজকোটের মতো নাগপুরেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে টস। রাতে শিশিরের প্রভাব থাকায় দুই দলই টস জিতে যে আগে বোলিং নিতে চাইবে। আর ডমিঙ্গো যে বললেন, স্পিনাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, এ ভাবনায় বাংলাদেশ দলের একাদশেও আসতে পারে পরিবর্তন। একজন পেসার বসিয়ে নেওয়া হতে পারে একজন বাঁহাতি স্পিনার। কাল সকালে রানিংয়ের সময় কুঁচকিতে ব্যথা পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। মিনহাজুল কাল বিকেলেও জানিয়েছেন, তাঁরা আছেন মোসাদ্দেকের রিপোর্টের অপেক্ষায়। ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডারকে যদি না পাওয়া যায়, তাঁর জায়গায় আসতে পারেন মোহাম্মদ মিঠুন। যে একাদশই হোক, সেটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রাতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের বৈঠকের পর।
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ সিরিজ শুরুর আগে চাপ সরিয়ে রাখতে বিনা বাক্যব্যয়ে স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তাঁরা ‘আন্ডারডগ’। আজ ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচেও কি তা-ই? একটু ঘুরিয়ে প্রশ্নটা কাল মাহমুদউল্লাহকে নয়, করা হয়েছে রোহিতকে। ভারতীয় অধিনায়ক নিজেদের ফেবারিট তকমা দিয়ে বাড়তি চাপ নিতে রাজি নন, ‘আমরা ফেবারিট-তত্ত্বে বিশ্বাসী নই। আমাদের মাঠে নামতে হবে, ভালো খেলতে হবে। এভাবেই আপনি জেতেন, ফেবারিট তকমা দিয়ে নয়। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ভালো খেলে জিতেছে। পরেরটায় আমরা। নির্দিষ্ট দিনে প্রতিপক্ষের চেয়ে আমাদের ভালো খেলতে হবে, এটাই বিশ্বাস করি।’
বাংলাদেশও নিশ্চয়ই একই ভাবনায় নামবে। যদি ম্যাচটা মাহমুদউল্লাহরা জেতেন, সেটি হবে আরেক ইতিহাস। আর শেষ পর্যন্ত সিরিজ জেতা না-ও হয়, তবু প্রাপ্তির খাতাটা শূন্য থাকবে না। ডমিঙ্গো বলছেন, গত দশ দিনে বাংলাদেশ দল যে উদ্যম, স্পৃহা আর নতুন কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করেছে—জয়-পরাজয় ছাপিয়ে এটিই হবে তাঁদের বড় প্রাপ্তি।