বইয়ের কাটতি কীভাবে বাড়াতে হয়, তার প্রকৃত উদাহরণ শহীদ আফ্রিদির ‘গেম চেঞ্জার’। নিজের আত্মজীবনীতে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। নিজের জন্মতারিখ নিয়ে ওঠা প্রশ্ন দূর করতে গিয়ে আবার দ্বিধায় ফেলেছেন। মন্টি প্যানেসারও সম্ভবত সে পথেই হাঁটছেন।
ইংলিশ এই বাঁহাতি স্পিনার ২০০৯ অ্যাশেজ জেতার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু আত্মজীবনী ‘দ্য ফুল মন্টি’তে যে দাবি করেছেন, তাতে শুধু ওই অ্যাশেজ নয়, পুরো এক দশকে ইংল্যান্ডের সব টেস্ট–সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। প্যানেসারের দাবি, তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ড যেভাবে বলকে ব্যবহার করত, সেটা আইনসিদ্ধ কি না, সেটা তাঁর জানা নেই।
বল টেম্পারিং ক্রিকেটে খুবই বিতর্কিত এক বিষয়। এ আইন নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে এখনো এবং পুরোনো বলকে উজ্জ্বল রাখার জন্য কোন পদ্ধতিটা আইনসিদ্ধ আর কোনটি বল টেম্পারিং, সে–সংক্রান্ত আইনের এদিক-ওদিক করা খুবই সহজ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটের মতো সিরিশ কাগজ দিয়ে বল ঘষার ঘটনাটি অবশ্য সব ধরনের সীমাই ছাড়িয়েছিল। এর দায়ে কঠিন শাস্তিও পেয়েছেন এই তিনজন। এ নিয়ে স্মিথ ও ওয়ার্নারকে বিশেষ অভ্যর্থনা জানানোর ব্যবস্থা করে রেখেছে ইংলিশ সমর্থকেরা। এমন সময় প্যানেসারের বল টেম্পারিংয়ের দাবি তোলাটা ইংলিশদের মনে হতাশা সৃষ্টি করবে নিশ্চিত।
২০০৬ সালে অভিষিক্ত প্যানেসার ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫০টি টেস্ট খেলেছেন। ইংল্যান্ড দলের হয়ে শুধু বল করাই তাঁর দায়িত্ব ছিল না। বলটা পেসার বিশেষ করে জেমস অ্যান্ডারসনের জন্য প্রস্তুত করাও তাঁর দায়িত্ব ছিল। নতুন ও পুরোনো বলে ভয়ংকর সুইং করানোর জন্য বিখ্যাত অ্যান্ডারসনকে অস্ত্র তৈরি করে দেওয়া ছিল প্যানেসারের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনের কতটা বৈধ ছিল, সেটা নিয়ে বইয়ে প্রশ্ন রেখেছেন প্যানেসার, ‘আমরা আবিষ্কার করেছিলাম মিন্ট এবং সানস্ক্রিন মুখের লালার ওপর প্রভাব ফেলে এবং সেটা বল রিভার্স সুইং করতে সাহায্য করে।’
ডেইলি মেইলে দ্য ফুল মন্টির যে অংশটা প্রকাশ পেয়েছে, সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘আমি হয়তো “দুর্ঘটনাক্রমে” ট্রাউজারের জিপারের মাথা দিয়ে বল ঘষেছিলাম। আমরা আইন ভেঙেছিলাম কি না, সেটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে দেখছেন সেটা। হয়তো খেলার চেতনার মাঝে সূক্ষ্ম একটা চিড় ধরিয়েছিলাম আমরা। যদিও ক্রিকেটের আইনে বলা আছে, আমরা আমাদের জার্সি ব্যবহার করতে পারব।’
প্যানেসারের এমন দ্বিধার কথা অবশ্য দূর করে দেবে ফাফ ডু প্লেসির উদাহরণ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুখের লালার জন্য মিন্ট ব্যবহার করে শাস্তি পেয়েছিলেন ডু প্লেসি। এমসিসির আইনেও বলা হয়েছে, একজন ফিল্ডার বল পরিষ্কার করতে কোনো বাধা নেই যতক্ষণ কৃত্রিম কিছু ব্যবহার করা না হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্যানেসাররা অবশ্যই আইন ভেঙেছেন। এ ছাড়া জিপারের যে ঘটনা নিয়ে প্যানেসার বলছে, তারা ইউনিফর্ম ব্যবহারের বৈধতা দেওয়া হয়েছে, সেটাও ভুল। ২০১৩ সালে ওই ডু প্লেসিই পাকিস্তানের বিপক্ষে ট্রাউজারের জিপারে বল ঘষে শাস্তি পেয়েছিলেন।
প্যানেসারের বইয়ের কাটতি বাড়ুক আর না বাড়ুক, বোম ফাটাতে ব্যর্থ হয়নি!