ফরচুন বরিশাল দলের অনুশীলনে তামিম ইকবাল।
ফরচুন বরিশাল দলের অনুশীলনে তামিম ইকবাল।

বরিশালের ভাষা শেখার চেষ্টা করবেন তামিম

খেলা বা বিনোদন—যে জগতের তারকাই হোন না কেন, বাংলাদেশে আসার আগে অল্প কয়েকটা বাংলা শব্দ শিখে আসেন অনেকেই। বলিউডের মহাতারকা শাহরুখ খানের কথাই ধরুন, বাংলাদেশে এসে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’ বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে বাংলাদেশে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতে আসা খেলোয়াড়ও কিছু বাংলা শব্দ শিখে নেন। এতে দলের সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের বন্ধনটা দৃঢ় হয়। যেটা খুব দরকার।

বিদেশি খেলোয়াড়দের মতোই এবার ‘ভাষা শিক্ষা’য় নামতে হচ্ছে বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবালকে। তা–ও আবার নিজের দেশের একটি টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে। সামনেই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে কোনো বিদেশি খেলোয়াড়ও নেই। তাহলে তামিমকে কেন নতুন করে ভাষা শিখতে হবে? তিনি যে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক! আর বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাটা একদমই পারেন না চট্টগ্রামের ছেলে তামিম।

বরিশালের অধিনায়ক হিসেবে দলটির সমর্থকদের সঙ্গে একটা বন্ধন তামিমকে অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। আর সেটি করতে হলে সমর্থকদের আনন্দ দিতেও বরিশাল অঞ্চলের ভাষাটা টুকটাক শিখে, সেই ভাষায় কথা বলাটা প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আগে আজ সংবাদ সম্মেলনে তাই বাংলাদেশের ওপেনার বলেছেন, ‘বরিশালের ভাষা শেখার চেষ্টা করব। আমি বরিশালের ভাষায় কথা বলতে পারি না।’

বরিশাল দলের খেলোয়াড়দের অনুশীলন।

বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বরিশাল এর আগেও খেলেছে। সেটা ছিল বিপিএলে। তবে তামিম কখনো বরিশালের হয়ে বিপিএলে খেলেননি। এই প্রথমবার বরিশালের হয়ে খেলতে এসে শুরুতেই হয়তো দলটির সমর্থকদের মন জয় করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তামিম। এ কারণেই হয়তো বলেছেন, ‘এটা ভালো যে বরিশাল আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছে। গত দু-তিন মৌসুম তো বিপিএলে ছিল না তারা। দলটির অনেক ভক্ত-সমর্থক আছে। চেষ্টা করব তাদের কিছু আনন্দ উপহার দিতে।’

সমর্থকদের মন জয় করে নেওয়ার চেষ্টার সঙ্গে একটি কঠিন বিষয়ও মনে করিয়ে দিয়েছেন তামিম। শিরোপা জয় বা ভালো কিছু করতে হলে সবার আগে গোছানো একটা দল দরকার। সেটার অভাব বোধ করছেন বরিশালের অধিনায়ক, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা খেলোয়াড় ড্রাফটে কিছু ভুল করেছি।’ দলের এই দুর্বল দিক দেখিয়ে দেওয়ার সঙ্গে একটি আশার কথাও আবার শুনিয়েছেন তামিম, ‘তবে এটাও ঠিক যে ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে যেকোনো কিছুই হতে পারে।’

ফরচুন বরিশালের অনুশীলনে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন।

তারকা তকমাহীন খেলোয়াড়েরাও যে কখনো কখনো বড় কিছু করে ফেলতে পারেন, সেটা তামিম ভালো করেই জানেন। কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্টস কাপেও যে এমন কিছু ঘটনা ছিল, সবাইকে সেদিকে তাকাতে বললেন তামিম, ‘আমরা হয়তো অনেকের ক্ষেত্রেই ভালো করবে বলে মনে করি না। এরাই কিন্তু দুর্দান্ত কিছু করে ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্টস কাপেও এমন দু-একটা ঘটনা ছিল। আমরা যাদের কথা ভাবিওনি, তাদের কয়েকজন বেশ ভালো করেছে। টুর্নামেন্ট শেষে তাদের নিয়েই আলোচনা বেশি হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে বরিশালের ক্ষেত্রেও এমন কিছু হবে বলেই মনে করেন তামিম, ‘যারা পাদপ্রদীপের আলো বা আলোচনায় নেই, তারা তেমন কিছু পারফরম্যান্স করবে। দলকে যতটুকু দেওয়া দরকার, তার চেয়ে বেশি দেবে। আমরা যে দল পেয়েছি, তাতে সফল হতে হলে চমকে দেওয়ার মতো ক্রিকেট খেলতে হবে। প্রথাগত ক্রিকেট খেলে আমাদের জন্য জেতাটা কঠিন হবে। অপ্রথাগত ক্রিকেট খেলে অন্য দলকে চমকে দিতে পারলেই আমাদের সাফল্য পাওয়া সম্ভব।’

বরিশালের সমর্থকদের আশার কথা শুনিয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

বরিশাল দলের ব্যাটিং লাইনআপে তামিম ইকবালের সঙ্গে আছেন ইরফান শুক্কুর, তৌহিদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন। দলকে সাফল্য পেতে হলে এই তিনজনকে ভালো করতে হবে বলে মনে করেন তামিম। দলের প্রয়োজনে তাঁদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন তামিম, ‘ইরফানের খুবই ভালো একটি টুর্নামেন্ট (প্রেসিডেন্টস কাপ) গেল। তৌহিদ হৃদয় এখানে কেমন করে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি। সে মানসম্মত এক খেলোয়াড়। সিনিয়র-জুনিয়র নেই, এই দলকে সফল হতে হলে সবাইকে সমান দায়িত্ব নিতে হবে।’

এরপর তামিম যোগ করেছেন, ‘আমি ১৩ বছর ধরে খেলছি, অন্যরা হয়তো দুই বছর ধরে খেলছে। কিন্তু এটা কোনো ব্যাপার নয়। সবাইকেই ভালো খেলতে হবে, খেলতে হবে দায়িত্ব নিয়ে। আফিফ, ইরফান, হৃদয়—তরুণ যারা আছে, তাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে খেলতে হবে।’