তখন ছিলেন ২০ বছরের এক তরুণ। কী আশ্চর্য, নামের পাশেও ছিল মোটে ২০টি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা। সেই সাকিব আল হাসান এবার চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। সব ঠিক থাকলে এবারই বিশ্বকাপে তাঁর ম্যাচ খেলার সংখ্যা হয়ে যাবে ৩০টি। এতগুলো বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও একটা বড় অর্জন হবে সন্দেহ নেই। খুব বেশি খেলোয়াড় নিজের ক্যারিয়ারকে এত দীর্ঘায়িত করতে পারে না। ব্যাটে বা বলে সেই তেজ থাকতে হয়।
চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন—এই তথ্য আরও একটি কথা মনে করিয়ে দেয়। মেঘে মেঘে বেলা বেড়েছে। মাত্র কদিন আগে ৩২ বছর পূর্ণ করেছেন। সাকিব কি আরও একটি বিশ্বকাপ খেলবেন? খেলতেই পারেন। ৫টি বিশ্বকাপ খেলার কীর্তি আছে ১৮ জনের। প্রত্যেকটা নামই একেকটা নক্ষত্র।
সাকিবও যে নক্ষত্র, তাতে সন্দেহ নেই। ২০০৭ বিশ্বকাপে উদীয়মান ছিলেন। পরে হয়েছেন বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। যেকোনো ক্ষেত্রেই খুব কম বাংলাদেশি বৈশ্বিক পর্যায়ে এক নম্বরে গেছে। সাকিব পেরেছেন। সাকিব পারেন। আর সাকিব পারলে পারে বাংলাদেশও। তাঁর মতো অলরাউন্ডার যেকোনো দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা সময় পেলেই মনে করিয়ে দেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
সাকিবও জানেন, এবার সেমিফাইনালে যাওয়ার যে লক্ষ্য বাংলাদেশ স্থির করেছে, সেই কঠিন পথ পাড়ি দিতে হলে তাঁকে জ্বলে উঠতে হবে। বিশ্বকাপ বিশ্বকাপই, সেটা চার বছরে একবার আসে। কত কত ক্রিকেটার এসেছে, কিন্তু বিশ্বকাপে ৩০ ম্যাচ খেলতে পেরেছে এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা মাত্র ২৫।
বিশ্বকাপকে মাথায় রেখেই কি না, নিজেকে একেবারে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছেন সাকিব। ওজন কমিয়েছেন। মুখে বয়সের চর্বিও উধাও। সাকিবকে দেখে সেই প্রথম বিশ্বকাপের তরুণটাকেই মনে হতে পারে।
সাকিবের চেহারার মধ্যে সেই মাগুরার কৈশোরের প্রতিচ্ছবি ফিরে এসেছে বলে, প্রথম দেখায় প্রায় সবারই প্রশ্ন থাকছে কী করে ওজন কমালেন! বিশ্বজুড়েই এখন মানুষের একটা চাওয়া, কত কম পরিশ্রমে; সম্ভব হলে বিনা পরিশ্রমে ওজন কমানোর টিপস। সাকিব কী করে এতে ওজন কমালেন, সেই রহস্য ভাঙলেন না। শুধু বললেন, নিজের ভেতর থেকে শরীরটাকে ফিট করার একটা তাগিদ অনুভব করেছিলেন, ‘ফিট থাকলে দেখবেন সব ভালো লাগবে। শরীর ফিট থাকলে আত্মবিশ্বাসও ভালো থাকে। ঝরঝরে লাগে।’
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড সফরে যাননি। চোট ভোগাচ্ছিল বলে। জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন প্রায় ৬ মাস। দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে শরীরে একটা আলস্যের মেদ জমে। অনেক সময় চোটও খেলোয়াড়দের ওজন বাড়িয়ে দেয়। তবে সাকিব তা হতে দেননি। নিজেই জানালেন, ওজন কমিয়েছেন প্রায় ৬ কেজি। যদিও দেখে আরও অনেক কম মনে হয়।
সাকিবের এই পরিবর্তনটা এত কম সময়ের মধ্যে যে, পার্থক্য চোখে লাগেই। এত দ্রুত ওজন কমানোর একটাই পথ—কঠিন ডায়েট চার্ট আর জিমে হাড়ভাঙা খাটুনি। আইপিএলে গিয়ে উন্নত জিম পেয়ে সেখানে শুধু মেদ ঝরিয়েছেন।
বদলে যাওয়া সাকিবের ব্যাট-বলের ধারও বেড়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই মাঠে সবচেয়ে চনমনে খেলোয়াড়টি মনে হচ্ছে তাঁকে। আর মাঠে যেদিন সাকিব মুডে থাকেন, বাংলাদেশের জন্যও কাজটা সহজ হয়ে যায়।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ মাথায় রেখেই যে এই বদলে যাওয়া, সেটিও বললেন সাকিব, ‘সামনে বিশ্বকাপ। প্রস্তুতি নেওয়ার একটা ভালো সুযোগ ছিল। তাই চেষ্টা করেছি আমি যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে সেরা অবস্থায় থেকে এই টুর্নামেন্টটা শুরু করতে পারি।’