৫.৪ ওভারে ৩৬ রান উঠতেই জেমকন খুলনা হারিয়েছে ৪ উইকেট। এর মধ্যে আছেন দলের সবচেয়ে বড় দুই ভরসা সাকিব আল হাসান (১৫) আর মাহমুদউল্লাহ (১৭)। নাহ, প্রথম ম্যাচটার মতো এটি জমবে না, ফরচুন বরিশালের কাছে বড় ব্যবধানে হারতে যাচ্ছে কাগজে-কলমে শক্তিশালী খুলনা—এমনটা ভেবে যাঁরা ম্যাচ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁরা নিশ্চিত ম্যাচের ফল দেখে চমকেই গেছেন!
প্রথমটির মতো এই ম্যাচেও শেষ দিকে রোমাঞ্চ, নাটকীয়টায় ভরা। শেষ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ৫ বলে চারটি ছক্কা মেরে সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তন ছাপিয়ে সব আলো নিজের দিকে টেনে নিলেন আরিফুল হক। সাকিবের তাতে প্রত্যাবর্তনে জয় উপহারও দেওয়া হলো। ২৮ বছর বয়সী লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের ৩৪ বলে ৪৮ রানের ঝড়ই বরিশালের বিপক্ষে খুলনাকে এনে দিয়েছে ৪ উইকেটের দুর্দান্ত জয়।
বিকেলের ম্যাচে শেষ ওভারে রাজশাহীর বিপক্ষে ঢাকার দরকার ছিল ৯ রান। ৬ বলে কী দারুণভাবে ‘ডিফেন্ড’ করলেন রাজশাহীর মেহেদী হাসান, দল জিতেছে ২ রানে। রাতের ম্যাচে শেষ ওভারে খুলনার দরকার ছিল ৬ বলে ২২ রান। অবশ্যই কঠিন সমীকরণ। খুলনার পরাজয় নিশ্চিত করতে বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল আস্থা রেখেছিলেন তাঁর দলের মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর।
শিশিরে গ্রিপ করতে সমস্যা হবে জেনেও মিরাজের হাতে বল তুলে দেওয়ার পেছনে অধিনায়ক তামিম তাঁর আগের ৩ ওভারের বোলিংটাই হয়তো মাথায় রেখেছেন। ৩ ওভারে ১২ রানে ১ উইকেট নেওয়া মিরাজকে যে এভাবে ছাতু করবেন আরিফুল, তা কি আর বরিশাল অধিনায়ক ভেবেছিলেন! পাওয়ার হিটিংয়ে দক্ষ আরিফুল শেষ ওভারের প্রথম বলটা লং অন দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা, দ্বিতীয়টির পরিণতি একই। তৃতীয় বলে ১ রান নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি আত্মবিশ্বাসী আরিফুল। চতুর্থটি মিড উইকেট দিয়ে পার করলেন সীমানা। পঞ্চম বলে সেই একই অঞ্চল দিয়ে আবারও ছক্কা—আরিফুল-ঝড়ে খুলনা জিতে গেল কঠিন ম্যাচটা!
আরিফুল যখন দলকে জয় নিশ্চিত করে বুনো উল্লাসে মেতেছেন, মিরাজের চোখেমুখে তখন বিষাদের ছায়া। অধিনায়ক তামিম হয়তো তাঁকে বললেন, ‘এখন ভেবে আর কী হবে!’ আগের ম্যাচে এক মেহেদী ৬ বলে ৯ রান ডিফেন্ড করতে পেরেছিলেন, পরের ম্যাচে আরেক মেহেদী পারেননি ৬ বলে ২২ রান আটকাতে! এটিই বুঝি ক্রিকেটের সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্য দেখা গেল যার সৌজন্যে—আরিফুল হক, সাকিবের ফেরার ম্যাচে নায়ক তো তিনিই।
১৩ মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব। ফরচুন বরিশাল-জেমকন খুলনার লড়াই ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ফেরাটা অবশ্য খুব একটা মনে রাখার মতো হয়নি বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। আলো ছড়াতে পারেননি ব্যাটিং-বোলিংয়ে।
অগ্রহায়ণের রাতের শিশির ভাবনায় খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ টস জিতে নেন ফিল্ডিং। ইনিংসের প্রথম বলেই শফিউল ইসলামকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক নিয়ে ফিরে যান ওপেনিংয়ে নামা বরিশালের মেহেদী হাসান মিরাজ। এমন বাজে শুরুর পর পাওয়ার প্লেও কাজে লাগাতে পারেনি বরিশাল। প্রথম ৬ ওভারে উঠেছে ২ উইকেটে ৩৮ রান। দলের মূল ভরসা তামিম ইকবাল ফিরেছেন ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে ১৫ রান করে।
ঠিক এরপরই বোলিংয়ে আসেন সাকিব—যার ফেরা দেখতে এত অপেক্ষা। প্রথম ওভারে দিলেন তিন ডট, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা নিতে পারলেন মাত্র ৩ রান। নিজের পরের ওভারে ডিপ স্কয়ার লেগে ফিল্ডার রেখে ফাঁদে ফেললেন আফিফ হোসেনকে। শর্ট লেংথের বলটা একটু নিচু হয়ে এসেছিল। আফিফ হোসেনের (২) পুল শটটা জহিরুল ইসলামের ক্যাচে পরিণত হলো। ফেরার সপ্তম বলেই পেয়ে গেলেন উইকেট। প্রথম ২ ওভারে ১১ রান দিয়ে ১ উইকেট। নিজের তৃতীয় ওভারে উইকেটশূন্য থেকে দিলেন ৭ রান। ৩ ওভারে ১৮ রানে ১ উইকেট পাওয়া সাকিবের ৪ ওভারের কোটা পূরণ করতে হয়নি। বাকি ওভারটি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। চার পেসারকে দিয়ে ১৬ ওভার করিয়েছেন খুলনা অধিনায়ক। বরিশালকে ১৫২ রানে আটকে রাখতে মূল ভূমিকা তাঁরাই রেখেছেন। বরিশালের পারভেজ হোসেন করেছেন দলের সর্বোচ্চ ৫১।
১৫৩ রানের লক্ষ্য পেরোতে গিয়ে কম বেগ পেতে হয়নি খুলনার। জহুরুল ইসলামের ৩১, শামীম হোসেনের ২৬ রান সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। শেষ দিকে ম্যাচটা এক ঝটকায় খুলনা মুঠোয় নিয়েছে আরিফুলের ওই ঝড়ে!