>নড়াইল–২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কাল ঢাকায় ফিরেছেন। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের লক্ষ্য নিয়ে এবার মনোযোগী হতে চান ক্রিকেটে।
গত ২৩ ডিসেম্বর নড়াইলে গিয়েছিলেন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। কাল ঢাকায় ফিরলেন সাংসদ হয়ে। নিজ শহরে এবারের সফরটা সব মিলিয়ে ৯ দিনের। এর মধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা, নির্বাচন এবং সংসদ সদস্যের মুকুট পরে ফেলা।
রাজনীতিতে নেমেই বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও ক্রিকেটার পরিচয়টাই এখনো অগ্রাধিকার পাচ্ছে মাশরাফির কাছে। নির্বাচনের মাত্র দুই দিনের মধ্যে নিজ এলাকা আর ভোটারদের ছেড়ে ঢাকায় ফেরার সেটিই কারণ। ঢাকা ফেরার পথে কাল মুঠোফোনে মাশরাফি বলছিলেন, ‘কাল (আজ) থেকে বিপিএলে আমাদের অনুশীলন শুরু হওয়ার কথা। আমি চাচ্ছি অনুশীলনের শুরু থেকে দলের সঙ্গে থাকতে। খেলাটাই তো আমার পেশা।’
বিপিএলের অনুশীলনে জাতীয় দলের মতো কড়াকড়ি নেই। মাশরাফি তাতে এক-দুই দিন পর যোগ দিলেও কারও কিছু বলার ছিল না। কিন্তু খেলার মাঠে সেরাটা দিতে হলে যে অনুশীলনের বাইরেও কিছু করতে হয়! মাশরাফি যেমন এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নিজের ফিটনেসকে। তা ছাড়া একজন খেলোয়াড় মাঠ থেকে কত দিন আর দূরে থাকতে পারেন! মাশরাফির রক্তেও নির্বাচন শেষ হতেই ফুটতে শুরু করেছে ক্রিকেট, ‘আগে যেভাবে খেলেছি, অনুশীলন করেছি...এখনো সেভাবেই সময়মতো সবকিছু করব। ফিটনেসের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমার শরীরের অবস্থা তো আর সবার মতো নয়। কাজেই এটার ওপর জোর দিতেই হবে।’
ভোটের মাঠে সরাসরি উপস্থিতি কম ছিল মাশরাফির। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষে নির্বাচনে সময় দিতে পেরেছেন মাত্র সাত-আট দিন। রাজনীতিতে এত অল্প সময়ের বিনিয়োগে সংসদ সদস্য হওয়াটাকে রেকর্ডই বলতে হবে। যদিও মাশরাফি এতে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না, ‘এমন তো নয় যে আমি ভোট উপলক্ষে হঠাৎ করে নড়াইলে গেছি। নড়াইলে আমার নিয়মিত যাতায়াত আছে। মানুষের কাছেই ছিলাম।’
জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ, এরপর নির্বাচন-সব মিলিয়ে তিন-চার মাস ধরে কম চাপ যায়নি মাশরাফির ওপর দিয়ে। খেলা, অধিনায়কত্ব আর রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য রাখতে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয়েছে সতর্কভাবে। হাতে সময় কম থাকায় নির্বাচনের আগের কয়দিন নড়াইলে গিয়ে ছুটোছুটিও করতে হয়েছে অনেক বেশি। অবশ্য নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে চাপের কথা প্রায় ভুলেই গেছেন তিনি, ‘মানুষ অনেক স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। এটা দেখেই বেশি ভালো লেগেছে। এক শ বছরের এক বৃদ্ধাকে দেখলাম তার ৬০ বছর বয়সী মেয়ের কোলে চড়ে ভোট দিতে এসেছেন। ভোট শেষে অনেকে আমার সঙ্গে দেখাও করেছেন। মানুষের এ রকম ভালোবাসা পাওয়ার পর আর তো কিছু লাগে না!’
নির্বাচনের আগে মাশরাফি মাঠে নামলেই ‘নৌকা নৌকা’ স্লোগান উঠেছে গ্যালারিতে। সংসদ সদস্য হয়ে যাওয়ার পর নিশ্চয়ই মাঠে মাশরাফির ওপর চোখটা আরও বেশি থাকবে সবার। অনেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যাচাই করতে পারেন তাঁর পারফরম্যান্সও। মাশরাফিও সেটা জানেন। তবে তিনি এটাকে বলছেন ‘যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।’ তাঁর কথা, ‘কে কীভাবে ভাববে, সেটা তো আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আর এটা নতুন নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও ছিল। খেলোয়াড় হিসেবে আমার যা দায়িত্ব, মাঠে নেমে আমি তা-ই করার চেষ্টা করব।’
সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রথম মাঠে নামবেন বিপিএলে। তবে বিপিএল ভাবনার মধ্যেই ওয়ানডে অধিনায়ককে মাথায় রাখতে হচ্ছে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফর ও বিশ্বকাপের কথা। মাশরাফি আগেই আভাস দিয়েছেন, বিশ্বকাপের পর ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাববেন। তাঁর কথার সূত্র ধরে ধারণা-হয়তো ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পরই বিদায় বলবেন ক্রিকেটকে। কিন্তু এ মুহূর্তে মাশরাফির মাথায় সেসব নেই। বিপিএলের পর জাতীয় দলের নিউজিল্যান্ড সফর। এরপর আয়ারল্যান্ড হয়ে বিশ্বকাপযাত্রা। ২০১৯ সালটাকে যে সবাই বাংলাদেশ দলের জন্য চ্যালেঞ্জের বছর বলছে, মাশরাফির চোখে সেটি নিউজিল্যান্ড সফর আর বিশ্বকাপের কারণেই, ‘ঘরের মাঠে এখন আমরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে সফল হচ্ছি। আমাদের দলও আগের চেয়ে বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। চ্যালেঞ্জ বেশি দেশের বাইরে। বিদেশের মাটিতে আমরা মাঝেমধ্যে সাফল্য পাই। ২০১৯ সালে সুযোগ আছে সেটাকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার।’
নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ভালো স্মৃতি না থাকলেও মাশরাফির চোখে সেটি আলাদা কিছু নয়, ‘বিদেশে গিয়ে যেখানেই খেলবেন, চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তেই হবে। আর নিউজিল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ বললে বিশ্বকাপ কী? সেটা আরও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য থাকবে সেমিফাইনালে খেলা। বড় লক্ষ্য স্থির না করলে আসলে কিছুই করা যায় না।’
সেটা তো মাশরাফি এবার রাজনীতির মাঠেও দেখালেন!