>
লর্ডসে আজ বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। এ ম্যাচে টস জিতে আগে কী নেওয়া উচিত, ব্যাটিং না বোলিং?
দশবার টস জিতলে নয়বারই আগে ব্যাট করা উচিত। বাকি একবার আগে বোলিংয়ের কথা ভেবে ব্যাটিং নেওয়াই ভালো। ক্রিকেটে টস নামের ভাগ্যপরীক্ষা নিয়ে বিশ্লেষকেরা এমন কথাই বলেন। ভেন্যু যেহেতু লর্ডস, ইংল্যান্ডের সেই অমর বুড়োর অমর উক্তিটিও প্রাসঙ্গিক, ‘টসে জিতে ব্যাটিং নাও। যদি মনে কোনো দ্বিধা থাকে, তাহলে একটু ভাবতে পারো। তারপর ব্যাটিং নাও। এরপরও যদি দ্বিধা থাকে, তাহলে কোনো সতীর্থের সঙ্গে আলোচনা করতে পারো। তারপরও ব্যাটিংই নাও।’ অর্থাৎ সাধারণ হিসাব হলো টস জিতে ব্যাটিং নাও। লর্ডসে আজ বিশ্বকাপ ফাইনালে দুই দল কি এ সাধারণ হিসাবের পথে হাঁটবে?
ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা এবার বিশ্বকাপে রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছেন। আর সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লর্ডসের উইকেট আগে ব্যাটিংয়ের জন্য সেরা অবস্থায় থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই টস জিতে আগে ব্যাটিং করার কথা এউইন মরগানের দলের। রানের পাহাড় গড়তে পারলে দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই হয়তো শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে! গ্রুপ পর্বে কিউইদের বিপক্ষে ঠিক এভাবেই জিতেছে ইংল্যান্ড। টস জিতে আগে ব্যাট করে তিনশোর্ধ্ব স্কোর গড়ার পর দুই শর নিচে অলআউট করেছে কেন উইলিয়ামসনের দলকে। তা ছাড়া এবার বিশ্বকাপে লর্ডসে যে চারটি ম্যাচ গড়িয়েছে, কোনো ম্যাচেই পরে ব্যাট করা দল জিততে পারেনি।
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের জন্য টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া এত সোজা নয়। গত বিশ্বকাপের ফাইনাল স্মরণ করুন। মেলবোর্নে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখনকার কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। ইনিংসের তৃতীয় বলে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন তিনি নিজেই। ১৩ ওভারের মধ্যে নিউজিল্যান্ডও ৩ উইকেটে ৩৯। এ বিপর্যয়টুকু পরে আর পুষিয়ে নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। তাই স্বাভাবিকভাবেই আজ ফাইনালে টস জিতলে আগে ব্যাটিং করার ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিধায় ভুগতে পারেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
চার বছর আগের সে ফাইনালে আরও একটি ব্যাপার কাজ করেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। মেলবোর্নে দর্শকসংখ্যা ছিল ৯৩ হাজারের বেশি। বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক। আর কে না জানে খেলার মাঠে গ্যালারির সমর্থন অনেক সময় পার্থক্য গড়ে দেয়। অমন প্রতিকূল পরিবেশে আগে ব্যাট করে বিপর্যয়ে পড়া নিউজিল্যান্ডের আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারার পেছনে শত্রুভাবাপন্ন গ্যালারিও একটা কারণ। ভীষণ মানসিক চাপে ভুগতে হয় যে! তবে লর্ডসে কিন্তু তেমনকিছু না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি।
ত্রিশ হাজারের মতো দর্শক ধারণে সক্ষম ‘হোম অব ক্রিকেট’। আশ্চর্য হলেও সত্য, এর মধ্যে বেশির ভাগ সমর্থক ইংলিশ নাও হতে পারেন। কারণ, সংবাদমাধ্যম আগেই জানিয়েছে, বিরাট কোহলির দল ফাইনালে উঠবে ভেবে আগেভাগেই ফাইনালের বেশির ভাগ টিকিট কেটে রেখেছিলেন ভারতীয়রা। অর্থাৎ দর্শকদের তরফ থেকে নিউজিল্যান্ডের ওপর প্রত্যাশা কিংবা দুয়ো—দুই ধরনের চাপই কম থাকবে। এটা কিন্তু বেশ বড় সুবিধাই। স্বাগতিক হওয়ায় প্রত্যাশার চাপটা ইংল্যান্ডের ওপরেই বেশি।
আর ভুলে গেলে চলবে না এবার বিশ্বকাপে জঘন্যতম ওপেনিং জুটি নিউজিল্যান্ডের। প্রায় কোনো ম্যাচেই ভালো করতে পারেনি। লর্ডসে আজ নিউজিল্যান্ড আগে ব্যাট করলে দুই ওপেনার চাপ ছাড়া খেলার সুযোগ পাবেন। টস জিতে ইংল্যান্ডের দুই খুনে ওপেনার জেসন রয়-জনি বেয়ারস্টোকে চাপহীন ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেওয়ার চেয়ে অন্তত নিজেরা আগে ব্যাট করা ভালো—এ মতের পক্ষে যাবেন বেশির ভাগ অধিনায়ক। অতএব, টস জিতলে নিউজিল্যান্ডের আগে ব্যাট করাই ভালো।
আর এবার বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করা দলের জয়ের হার বেশি। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচগুলো বাদ দিলে এখন পর্যন্ত যে ৪৩ ম্যাচ হয়েছে, তার মধ্যে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে ২৮ ম্যাচ। সবশেষ ১১ ম্যাচের মধ্যে ৯ ম্যাচই জিতেছে আগে ব্যাট করা দল। আর লর্ডসে এবার বিশ্বকাপে অনুষ্ঠিত চার ম্যাচের মধ্যে আগে ব্যাট করা দল দুবারই তিনশোর্ধ্ব স্কোর গড়েছে। বাকি দুটি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া একবার ২৮৫ আরেকবার ২৪৩ রান তুলেও জিতেছে।
তা ছাড়া এর আগে যে ১১টি বিশ্বকাপ মাঠে গড়িয়েছে, তার মধ্যে ফাইনালে সাতবার জিতেছে আগে ব্যাট করা দল। সবশেষ দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে অবশ্য জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। কিন্তু ঠেকায় না পড়লে রান তাড়া করার চাপ নিতে চায় না কোনো দল, বিশেষ করে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো মঞ্চে।