কিংসমিডে বাংলাদেশ দল নামছে অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়েই
কিংসমিডে বাংলাদেশ দল নামছে অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়েই

প্রেরণার নাম মাউন্ট মঙ্গানুই

দুঃসহ সেই স্মৃতিটা কি মনে আছে তাঁদের! ফিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে এক ইনিংসেই তাঁরা দেখেছিলেন চার–চারটি শতক। ডিন এলগার, এইডেন মার্করাম, হাশিম আমলা, ফাফ ডু প্লেসির ব্যাটে চাপা পড়ে ইনিংস ও ২৫৪ রানের বিশাল হার। ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনের সেই যন্ত্রণার স্মৃতিটাই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় লজ্জা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সর্বশেষ খেলা সেই টেস্টের চার ক্রিকেটার আছেন এবারের বাংলাদেশ দলেও—অধিনায়ক মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস আর তাইজুল ইসলাম। প্রায় সাড়ে চার বছর পর ডারবানে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরেকটি টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ব্লুমফন্টেইনের সেই টেস্টের কথা এই চারজনের তো একবারের জন্য হলেও মনে পড়ার কথা।

আসলেই কি মনে পড়ছে? দক্ষিণ আফ্রিকায় এবারের সফরের আবহে এমনই সুখের বাতাবরণ ছড়িয়ে যে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের প্রাচীরে ফাটল ধরাতে কোনো আঘাতই যেন যথেষ্ট নয়, এমনকি দুঃস্মৃতির আঘাতও নয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো টেস্ট জয় নেই। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠের দুই টেস্টের সিরিজ ০-০ ড্র করতে পারাটাই একমাত্র অর্জন, সেটিও বৃষ্টির আশীর্বাদে। কিন্তু এবার সেসব মনে করার সময় কোথায় বাংলাদেশের!

ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত ছিলেন তাসকিন আহমেদ

ওয়ানডে সিরিজে দাপুটে জয়ের সঙ্গে মিশে আছে গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের সৃখস্মৃতি। নিয়মিত ছয় টেস্ট ক্রিকেটারের আইপিএলে চলে যাওয়াতে এবার দক্ষিণ আফ্রিকাও পারছে না পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে। সব মিলিয়ে অতীতচারী ভয়কাতুরে বাংলাদেশ নয়, টেস্ট সিরিজের আগে ভবিষ্যৎ সুখকল্পনায় ভাসা নির্ভার এক বাংলাদেশ দলের ছবিই সামনে আসছে বারবার।

সেই ছবির একেবারে সামনের সারিতে আছেন পেসাররা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয় বলুন আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, পেস বোলারদের গর্ব করার মতো প্রতিনিধিত্ব সবখানে। কিংসমিডের সবুজ উইকেটেও বাংলাদেশ দল বোলিং আক্রমণ সাজাবে পেসারদের নিয়ে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের জয়ের নায়ক ইবাদত হোসেনের সঙ্গে তাসকিন আহমেদ আর শরীফুল ইসলাম। একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার কোটায় খেলার সম্ভাবনা মেহেদী হাসান মিরাজেরই বেশি।

তবে টেস্ট জিততে হলে বোলারদের যেমন ২০ উইকেট নিতেই হবে, স্কোরবোর্ডে বড় রানও থাকা চাই। আর ডারবানের উইকেট যতই সবুজ হোক, সেটি ততটা গতিময় হবে না বলেই অনুমান। সুষম বাউন্সের উইকেটে ব্যাটসম্যানরা চাইলে রান করতে পারবেন, উইকেট নিয়ে গত কয়েক দিনের গবেষণায় এ রকমই প্রতিবেদন মিলছে।

আমরা জানি, বাংলাদেশ আর আগের মতো নেই। দলটা ভিনদেশি কোচে ভরপুর
দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক ডিন এলগার

কালও মাঠে এসেই টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের সঙ্গে অধিনায়ক মুমিনুল চলে গেছেন উইকেট দেখতে। কাভার সরিয়ে দেখা সেই উইকেট নিয়ে অধিনায়ক পরে বলেছেন, ‘এই উইকেটে পেসাররাই বেশি সুবিধা পাবে বলে মনে হয়। তবে পেসবান্ধব উইকেট মানে এই নয় যে রান হবে না, গেলাম আর আউট হয়ে গেলাম। নিউজিল্যান্ড সিরিজেও কিন্তু রান হয়েছে।’

সেদিক দিয়ে টেস্টে তামিম ইকবালের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশ দলের জন্য স্বস্তির। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বোলিং-ব্যাটিং—দুটোই কিছুটা শক্তি হারালেও তামিম ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু এনে দেবেন বলে আশা। গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলে টেস্টে সর্বশেষ খেলার পর এই বাঁহাতি ওপেনার লাল বলের ক্রিকেটে ছিলেন না প্রায় ১১ মাস। ডারবান টেস্ট দিয়ে তাঁর ফেরাটা বাড়তি জ্বালানি হবে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।

ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গে যে মাহমুদুল হাসানই জুটি বাঁধতে যাচ্ছেন, সেটি কাল সিরিজ–পূর্ব অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। তামিম না থাকলেও গত জানুয়ারির নিউজিল্যান্ড সিরিজে ছিলেন মাহমুদুল। প্রথম টেস্টের জয়ে ভূমিকা ছিল তাঁর ৭৮ রানেরও। তবে চোটের কারণে খেলতে পারেননি ক্রাইস্টচার্চের পরের টেস্টে। সাদমান ইসলামের সঙ্গে ওপেনিংয়ে সেই ম্যাচে জুটি বেঁধেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম। সাদমান থাকলেও নাঈম সুযোগ পাননি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দলে।

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের সুখস্মৃতি বাংলাদেশকে প্রেরণা জোগাবে

দক্ষিণ আফ্রিকায় এবার বাংলাদেশের বড় শক্তি ড্রেসিংরুমে এই দেশের কোচদের উপস্থিতি। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। ওয়ানডে সিরিজের আগে দিন তিনেকের জন্য ব্যাটসম্যানদের পাওয়ার হিটিংয়ের কলাকৌশল দেখিয়ে গেছেন আরেক স্থানীয় কোচ অ্যালবি মরকেল।

বিদেশে খেলতে এসে ড্রেসিংরুমে সেই দেশেরই কোচদের সান্নিধ্য পাওয়াটা যে দলের জন্য বাড়তি কিছু হয়ে দাঁড়ায়, সেটি কালও বলেছেন মুমিনুল, ‘একটা দেশের বিপক্ষে যখন ওই দেশে খেলবেন এবং দলে যদি ওই দেশের কোচিং স্টাফ থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা ইতিবাচক দিক।’ মুমিনুলের বাকি কথাটা খুঁজে পাওয়া গেল দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগারের কণ্ঠে, ‘আমরা জানি, বাংলাদেশ আর আগের মতো নেই। দলটা ভিনদেশি কোচে ভরপুর। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার ব্যাপারে নিশ্চয়ই দলের চিন্তাভাবনা বদলে দিয়েছেন তাঁরা।’

ডারবানে এসে বাংলাদেশ দল শুরুতে বৃষ্টির দেখা পেলেও কয়েক দিন ধরে এখানে ঝলমলে রোদ। তাপমাত্রা হয়তো এই সময়ের বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা কম, সেটিও অনুশীলনে পানির চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সমুদ্রপারের শহরে টেস্টের মধ্যেই ফিরতে পারে বৃষ্টি।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলের চেনা মাঠের অভ্যস্ততা আর বাংলাদেশের মাউন্ট মঙ্গানুই জয়ের স্মৃতির সঙ্গে আবহাওয়াও ডারবান টেস্টের প্রভাবক হয়ে উঠলে তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।