গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণ থেকে অবসর নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির। ২৯ বছর বয়সী এ পেসার অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছিলেন, মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই তাঁর জাতীয় দল ছেড়ে দেওয়া। এর পেছনে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), প্রধান কোচ মিসবাহ–উল–হক এবং বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনিসের প্রতি অভিযোগের তির ছুড়েছিলেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার। এবার পাকিস্তানের এক ওয়েবসাইটকে আমির বলেছেন, প্রাপ্য সম্মানটুকু না পাওয়াতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন তিনি।
পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার আমির। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটানো এ পেসার পাকিস্তানের হয়ে ৩৬ টেস্টে ১১৯ উইকেট এবং ৬১ ওয়ানডেতে ৮১ উইকেট নিয়েছেন। টি–টোয়েন্টি সংস্করণে নিয়েছেন ৫০ ম্যাচে ৫৯ উইকেট। পাকপ্যাশনডটনেটকে আমির বলেন, ‘ভালোবাসার দেশের হয়ে খেলা থেকে অবসর নেওয়া মোটেও সহজ ছিল না। অনেক ভেবে এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলার পরই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। যদি পুরোনো সেসব প্রসঙ্গ এবং কথা তুলি তাহলে বিষয়টি খুব কুৎসিত দেখাবে।’
স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ধূমকেতু থেকে প্রায় মিলিয়ে যাওয়ার পথে ছিলেন আমির। সাজা খেটে আবারও ফিরেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তত দিনে আমিরের বোলিংয়ে গতি ও ধার বেশ কমে যায়। তবে আমির মনে করেন, পাকিস্তানের হয়ে খেলায় তিনি যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, তরুণদের যেন তার মুখোমুখি হতে না হয়, ‘আশা করি আমাদের খেলোয়াড়েরা, বিশেষ করে তরুণেরা যেন আমি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম তার সম্মুখীন না হয়। তারা যেন হতাশ হয়ে আমার মতো ক্যারিয়ারকে ছুড়ে না ফেলে।’
আমির এরপর সরাসরি বলেছেন, ‘আমার কাছে সম্মানটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মনে হচ্ছিল, প্রাপ্য সম্মানটা পাচ্ছি না, তাই অবসরের সিদ্ধান্ত নিই। পাকিস্তান ক্রিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের তো নিজেদের কাজটা করতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে আর আমাকেও নিজের ক্যারিয়ার চালিয়ে নিতে হবে। তাই সেসব বিষয় নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো। এ মুহূর্তে নিজের জীবন নিয়ে আমি ভালো আছি।’
গত ডিসেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে আমিরকে বলতে দেখা গেছে, ‘সত্যি বলছি, আমার মনে হয় না এই প্রশাসনের অধীনে আমি ক্রিকেট খেলতে পারব। আমি ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে, আমি আর নিতে পারছি না। ২০১০-১৫ সময়টায় আমি যথেষ্ট দেখেছি। বারবার বলা হয়েছে, বোর্ড আমার ওপর অনেক বিনিয়োগ করেছে। আমি শহীদ আফ্রিদির কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, নিষেধাজ্ঞার পর তিনিই আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন।’
ওই ভিডিওতে আমির দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের হর্তাকর্তারা, ‘সবাই দেশের হয়ে খেলতে চায়। তারা বলেই যাচ্ছিল, আমি টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছি বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার জন্য। আমি কিন্তু বিপিএল দিয়ে ফেরত এসেছিলাম। যদি লিগে খেলার জন্য এতটাই মরিয়া থাকতাম তখনই বলতাম পাকিস্তানের হয়ে খেলব না। প্রতি মাসেই কেউ না কেউ বলছে, আমির আমাদের বিপদে ফেলে গেছে।’