বাংলাদেশই বোধ হয় ব্যতিক্রম। না হলে ক্রিকেট বিশ্বে আর কোথাও উইকেট নিয়ে এত কথা হয় না। কথা অবশ্যই হয়, তবে এতটা নয়। কী ম্যাচের আগে, ম্যাচের দিন বা ম্যাচ শেষে। বাংলাদেশ একটু সাহস করে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে বড় বড় দলকে হারানো শুরু করতেই উইকেট নিয়ে কথা উঠতে শুরু করল। সাকিব আল হাসান আজ সোজা জানিয়ে দিলেন, সব দলই তাদের পছন্দমতো উইকেট বানায়। আর বাংলাদেশ দল কী রকম উইকেট চায়, এসব নিয়ে আলোচনাও তাঁর পছন্দ নয়। সাকিব মনে করেন, এসব কৌশলগত আলোচনা দলের গোপনীয় আলোচনা। সাকিবের ভাষায় 'প্রাইভেট'। আর এই 'প্রাইভেট' বিষয় নিয়ে আলোচনা না করলেই খুশি হবেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।
এই টেস্টে প্রতিপক্ষকে ১০০ ওভারও ব্যাটিং করতে দেয়নি বাংলাদেশ। বলের হিসাবে দ্রুততম সময়ে প্রতিপক্ষকে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য এটাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০ উইকেটের সবই নিয়েছেন স্পিনাররা, বাংলাদেশের স্পিনারদের এমন একতরফা দাপট ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই টেস্টে। সেবারও ২০ উইকেটের সবই নিয়েছিলেন স্পিনাররা।
সাকিব শুরুতে মানলেন, উইকেটের সাহায্য পেলে বাংলাদেশের স্পিনাররা ভয়ংকর হয়ে ওঠেন, 'আমাদের যে কজন স্পিনার আছে, সবাই খুবই মানসম্পন্ন, বিশেষ করে যদি উইকেটে একটু সাহায্য করে। উইকেটে একদমই সাহায্য না করলে আমাদের বল তেমন কার্যকর হয়তো মনে হবে না। কিন্তু একটু যদি উইকেটে সাহায্য পাই, তাহলে আমরা অনেক ভালো বোলার।'
আর খুলে বলেননি, তবে এটা তো সত্যি, গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ যে নাকানিচুবানি খেয়ে এল, এর মূল কারণ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ কন্ডিশনের পুরো সুবিধা নিয়েছে। পেস দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। এখন বাংলাদেশ কেন স্পিনের ঘূর্ণিতে খাবি খাওয়াবে না ক্যারিবীয়দের?
আর শুধু উইকেটই বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেয়, এমন তো নয়। একই উইকেট বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও পরীক্ষা তো নেয়। সাকিব তাই বলছেন, ‘দেখুন আমাদের হোমে যে ধরনের উইকেট হওয়া উচিত কিংবা দরকার, সেই ধরনের উইকেটই কিউরেটররা বানানোর চেষ্টা করেছেন। উইকেট যেমনই হোক, আমরা যদি ভালো জায়গায় বল না করি তাহলে কিছুই কাজে আসে না। এগুলো (টেস্ট জয়) আসলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।’
গতকাল এক দিনেই পড়েছে ১৭ উইকেট। আজ পড়ল ১৫টি। আড়াই দিনে উইকেট পড়েছে ৪০টি! সাকিব অবশ্য মনে করেন না, উইকেট এতটা কঠিন ছিল, যতটা মনে হচ্ছে, 'প্রতিটা উইকেটই আমার কাছে মনে হয় আলাদা। আর এই উইকেট আনপ্লেয়েবল বলব না, কারণ তা হলে তো নবম উইকেট জুটিতে ৫০-৬০ রানের হতো না। তাই উইকেট খেলা-অযোগ্য অবশ্যই ছিল না।'
সাকিব বলে না দিলেও চলছে, ঢাকার উইকেটও হবে স্পিন-বান্ধব। তবে এখানেও একটা কথা আছে। বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে চাইবে, নাকি ড্রয়ের নিরাপদ পথে হাঁটবে। ড্র হলেও তো সিরিজ জয়! ২০০৯ সালের আগে বা পরে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে যে স্বাদ বাংলাদেশ পায়নি। ফলে মিরপুর টেস্টের উইকেট নিয়ে কৌতূহল থাকবে।
সাকিব অবশ্য শুরুতেই সেই কৌতূহলকে নিরুৎসাহিত করলেন, 'উইকেট তৈরি করবেন কিউরেটর। আমরা কী প্রত্যাশা করি তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। এগুলো নিয়ে বেশি কথাও বলা উচিত নয়। সেটা আমাদের খুবই ভেতরের কথা, আর প্রাইভেট থাকলে আমি খুশি হব।'