দুর্দান্ত জয়ে জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই

>২৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এই মুহূর্তে সৌম্য আর ইমরুলের ব্যাটে খুঁজে পেয়েছে নির্ভরতা।

শেষ বিকেলে চট্টগ্রামে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে সবার মুখে শঙ্কা। জিম্বাবুয়ে স্কোরবোর্ডে ২৮৬ রান তুলে ফেলেছে। না জানি, আজ বাংলাদেশ কেমন করে! সেই শঙ্কাটা রীতিমতো ভীতিতে রূপ নিল বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম বলেই। কাইল জারভিসের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে ফিরলেন আগের ম্যাচেই ব্যাটে দাপট দেখানো লিটন দাস। স্কোরবোর্ডে কোনো রান নেই, আউট হয়ে গেছেন লিটনের মতো ব্যাটসম্যান। ২৮৭ রানকে তখন অনেক দূরের বিষয়ই মনে হচ্ছিল। হারের মানসিক প্রস্তুতি না নিলেও হারের ভয়টা ঠিকই কাজ করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সৌম্য সরকার ইমরুল কায়েসের সঙ্গে জুটি বেঁধে সব শঙ্কা-ভীতি দূর করে দিলেন দারুণভাবেই। বাংলাদেশ ৭ উইকেটের এক বিশাল জয়ে সিরিজটা নিজেদের করে নিল ৩-০ ব্যবধানে। ধবলধোলাই!

কী অসাধারণ এক জুটি! সৌম্য-ইমরুল দুজনেই পেয়েছেন সেঞ্চুরি। কত দিন পর একটা সেঞ্চুরি পেলেন সৌম্য। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম। মাঝের সময়টাতে তো নিজের মধ্যেই ছিলেন না তিনি। ভালো ব্যাটিং কাকে বলে সেটিই যেন ভুলতে বসেছিলেন। আত্মবিশ্বাস চলে গিয়েছিল তলানিতে। আজ চট্টগ্রামের উইকেটে সেই হারানো আত্মবিশ্বাসটাই ফিরে পেলেন কী রাজকীয় এক কেতায়!

সৌম্যর সঙ্গে ইমরুলের জুটিটা ২২০ রানের। দ্বিতীয় উইকেটে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেরও সর্বোচ্চ জুটি। ২৮৭ রানের লক্ষ্য ছুঁতে চট্টগ্রামের মাটিতেও রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ইমরুল সৌম্যকে কেবল সঙ্গই দিয়ে যাননি। এই সিরিজে যে দুর্দান্ত ফর্মে ইমরুল, সেই সঙ্গ দেওয়াটা হলো জিম্বাবুয়ের জন্য ভয়ংকরই। বাংলাদেশের পক্ষে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর ছিল ৩৬৫। বাংলাদেশের পক্ষে যেকোনো টুর্নামেন্টে সেটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তামিমের সংগ্রহ ছিল ৩১২ রান।

প্রথম বলেই ফিরেছেন লিটন। ছবি: শামসুল হক

সৌম্যর ব্যাট থেকে এসেছে ৯২ বলে ১১৭ রান। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বলে আউট হওয়ার আগে এমনভাবে খেলছিলেন, যেন চট্টগ্রামে রেল স্টেশনে ট্রেন অপেক্ষায় রয়েছে তাঁর জন্য। ৯টি বাউন্ডারির বিপরীতে সৌম্য ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৬টি। ইমরুল শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ১১৫ রানে, জয়টা তখন হাতের নাগালেই দেখছে বাংলাদেশ।

লক্ষ্যমাত্রাটা যথেষ্ট কঠিন ছিল। সৌম্য-ইমরুলের ব্যাটে সেটি সহজ হয়ে গেছে। শেষের দিকে মুশফিকুর রহিম ৩৯ বলে অপরাজিত ২৮ আর মোহাম্মদ মিঠুন ১১ বলে অপরাজিত ৭ করে বাংলাদেশকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। 
সাকিব-তামিমকে ছাড়া যে সিরিজটা শুরু হয়েছিল। সেই সিরিজ শেষে অনেকগুলো প্রাপ্তি বাংলাদেশের। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়টা তো বটেই, সৌম্য, ইমরুল, লিটনদের পাশাপাশি সাইফউদ্দিন, নাজমুল, আবু হায়দাররা যে মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে কিছু করার সুযোগই দিলেন না—বিশ্বকাপের কয়েক মাস বাকি থাকতে, সেই প্রাপ্তি তো অনেক বড়ই।