লর্ডসের সঙ্গে বার্ট সাটক্লিফ ওভালের যেমন তুলনাই চলে না, তেমনি ২০০৫ সালের মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ২০১৯ সালের মুশফিকুর রহিমেরও নয়। তবে একটা ছবিতে কাল যেন মিলে গেলেন প্রায় ১৪ বছর আগে–পরের মুশফিকুর রহিম। ২০০৫ সালে লর্ডসে সাড়াজাগানো সেই টেস্ট অভিষেকের আগে ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত মাঠে মুশফিকের দারুণ একটা ছবি আছে। পরনে ট্র্যাকস্যুট–ট্রাউজার, মাথায় কানটুপি। মুখে হাসি।
শুধু হাসিটাই মিলল না। মেলেনি আর একটা জিনিসও। লর্ডসের সেই মুশফিকুর রহিমের মুখে তখন দাড়ি–গোঁফ গজায়নি। এখন দুটিই আছে। কিন্তু ট্র্যাকস্যুট–ট্রাউজার–কানটুপি মিলিয়ে দুটি ছবিতে অদ্ভুত একটা মিল। সেটি বলাতে মুশফিক হাসলেন। সেই হাসিতে ঝরে পড়ল বিষণ্নতা। দুটি ছবিতে বড় অমিলটার কথাও যা বলে দিচ্ছে। লর্ডসের মুশফিকের চোখে–মুখে ছিল টেস্ট অভিষেকের রোমাঞ্চ। আর আজ বার্ট সাটক্লিফ ওভাল মাঠে মুশফিক ওই পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বিষণ্নতার প্রতিমূর্তি হয়ে। ডান হাতের বুড়ো আঙুল থেকে শুরু করে কবজি পর্যন্ত কালো রঙের একটা ব্যান্ডেজমতো। তৃতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের সময় বুড়ো আঙুলে বল লেগেছিল। আর কবজিতে ছিল আগের ব্যথা। দুটি মিলিয়ে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে তো খেলতে পারেনইনি, প্রথম টেস্ট ম্যাচে তাঁর খেলা নিয়েও এখন ঘোর সংশয়। অলৌকিক কিছু না ঘটলে ২৮ ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে শুরু প্রথম টেস্টে মুশফিক খেলছেন না বলেই ধরে নিতে পারেন।
বার্ট সাটক্লিফ ওভাল মাঠে সাংবাদিক বলতে বাংলাদেশের ছয়জন। নিউজিল্যান্ডের সাংবাদিকদের এসব ‘ফালতু’ ম্যাচ কাভার করার সময় নেই। ক্রিকেটার ও সাংবাদিকদের লাঞ্চের ব্যবস্থা একই সঙ্গে, একই জায়গায়। অস্থায়ী একটা তাঁবুর নিচে। সেখানে লাঞ্চ করতে আসার সময় মুশফিককে ‘আঙুলের অবস্থা কী’ জিজ্ঞেস করে জানা গেল, আঙুল যেমন–তেমন কবজির অবস্থা আরও খারাপ। বিষণ্ন মুখে তিনি জানালেন, ‘আগে থেকেই আমার কবজিতে সমস্যা ছিল। সেটি আরও বেড়েছে। আলট্রাসনোগ্রাম করিয়েছি। সেটির রিপোর্ট দেখার পর ফিজিও বলেছেন, দুই সপ্তাহ এই হাতে কিছু করা যাবে না।’
ঠিক দুই সপ্তাহে আঙুল এবং কবজি ঠিক হয়ে যাবে ধরলেও মার্চের প্রথম সপ্তাহের আগে ব্যাট হাতে নেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। প্রথম টেস্ট তো তাহলে খেলা হচ্ছে না? মুশফিক মুখে কিছু না বলে বিষণ্ন হাসিতেই বলে দিলেন যা বলার। এত দিন অনুশীলনের বাইরে থাকার পর ৮ মার্চ থেকে শুরু দ্বিতীয় টেস্টে তাঁকে পাওয়া নিয়েও তো সংশয় থাকার কথা। অন্য কোনো ক্রিকেটার হলে থাকত। তিনি মুশফিকুর রহিম বলেই ফিট হলেই নিশ্চিতভাবেই ঢুকে যাবেন দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে।
তা না হলে সেটি বড় দুঃখের ব্যাপার হবে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টটি ওয়েলিংটনে। বছর দুয়েক আগে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের গত সফরে যেখানে তাঁর আনন্দ–বেদনার মিশ্র স্মৃতি। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৩৫৯ রানের মহাকাব্যিক সেই জুটি। সেই ইনিংস খেলার সময়ই অবশ্য বল লেগে চিড় ধরেছিল বাঁহাতের বুড়ো আঙুলে। সেটি নিয়েই ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। আহত আঙুল লক্ষ্য করে কিউই বোলারদের একের পর এক বাউন্সার থেকে বাঁচতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হয়েছিলেন নিল ওয়াগনারের বাউন্সারে। মাঠ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। সেখান থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠে ফিরে এলেও আঙুলের ওই চোট মুশফিককে ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে দেয়নি। সেবার ছিল বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল। এবার ডান হাতের।
নিউজিল্যান্ড সফরে বুড়ো আঙুল একটা বিভীষিকার নামই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুশফিকুর রহিমের জন্য!