প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতাই পোড়াচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে

>হ্যামিল্টন টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতাই আক্ষেপ বাড়াচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এ নিয়ে আট টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। এর মধ্যে চার টেস্টেই হারতে হয়েছে ইনিংস ব্যবধানে। অধিনায়ক হিসেবে এমন হারের সবশেষ অভিজ্ঞতা পেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থায় লড়াই করেও ইনিংস ব্যবধানের হার; প্রাপ্য কিছু প্রশংসা তো পাচ্ছেই মাহমুদউল্লাহর দল। বিশেষ করে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে লড়ার পরই প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতাই বেশি করে পোড়াচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে।

সৌম্যর ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন মাহমুদউল্লাহ। কাল সৌম্য যখন ব্যাট করতে নামলেন, ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে বাংলাদেশ তখনো ৩৭১ রানের দূরত্বে। মাহমুদউল্লাহ মনে করেন সৌম্যর ব্যাটিংয়ের সময়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাঁচে নেমে কিউইদের ভালো বোলিংয়ের মধ্যেও সাবলীল ব্যাট করে প্রথম সেঞ্চুরির মুখ দেখেছেন সৌম্য। তাঁকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘সৌম্যর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সৌম্য অনেক সাবলীল ব্যাটিং করছিল। সুযোগ গুলো ঠিকঠাক মতো কাজে লাগাচ্ছিল। আপনি যদি দেখেন যে হ্যাঁ একটা বোলার ভালো বোলিং করছে, ভালো বাউন্সার দিতে পারছে, ওই পরিস্থিতিতে যদি আপনি ওভারে চার-পাঁচ করে নিতে পারেন, তখন বোলার হতাশ হয়ে যায়। সে কাজটা সৌম্য বেশ ভালোভাবে করছিল।’

পঞ্চম উইকেটে ২৩৫ রানের জুটি গড়েন সৌম্য-মাহমুদউল্লাহ। তাঁদের এই জুটিতে ভর করেই মূলত খেলাটা শেষ সেশনে টানতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল ছাড়া দলের আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে না পারায় হতাশাও ঝরেছে মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠে, ‘আমাদের ব্যাটিং পার্টনারশিপ ভালোই যাচ্ছিল। তাও, আমার মনে হয় প্রথম ইনিংসে একটু বাজে খেলেছি। প্রথম ইনিংসে আর কেউ যদি ভালো ইনিংস খেলতে পারত তাহলে আজ হয়তো ভিন্ন কোনো ফল আনা যেত।’

মাহমুদউল্লাহ মনে করেন হ্যামিল্টনে হারলেও এখান থেকে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ভালো কিছু নিয়ে যেতে পারছেন ব্যাটসম্যানেরা। বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘সাউদি-বোল্ট নতুন বলে সুইং করাতে চাইছিল বারবার। নতুন বলের সুবিধা নিতে চাচ্ছিল। এই জিনিসগুলোর ব্যাপারে আমাদের ব্যাটসম্যানদের একটা ধারণা হয়ে গেছে। আশা করি এই জিনিসগুলো চিন্তা করে আমরা সামনের টেস্ট খেলতে পারব।’

মাহমুদউল্লাহ। ছবি: এএফপি

টেস্ট ক্রিকেট এমনিতেই বাকি দুটি সংস্করণের চেয়ে কঠিন। মানসিক খাটুনির সঙ্গে শারীরিক সহ্যক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয়। মাহমুদউল্লাহ মনে করিয়ে দিলেন, ভালো ব্যাটিংয়ের জন্য খাটুনির বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে একটু টাফ (কঠিন) খেলাই লাগবে। কখনো কখনো দেখা যায় দুই দিক থেকেই ভালো বল হচ্ছে, ভালো স্পেল হচ্ছে। পরিস্থিতি বোঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ইনিংসে দেখা গেছে আমরা মারতে গিয়ে আউট হয়েছি। দ্বিতীয় ইনিংসে তাই এই চিন্তাটা ছিল যে আর যাই হোক না কেন, আমি সহজে ছাড় দেব না। দরকার হলে একটু বেশি সময় নিই, একটু কষ্ট করি, দরকার হলে গায়ে বল লাগুক সমস্যা নেই। অন্তত সেই কষ্টটুকু করি আমি। মুশি সব সময় এই কথাটা বলে, টেস্ট ক্রিকেটে যদি আপনি একটু নিজের গর্ব আর কলিজা নিয়ে খেলেন তাহলে কাজটা একটু সহজ হয়ে যায়। আপনাকে প্রথম দিকে একটু কষ্ট করা লাগতে পারে, কিন্তু সেই কষ্টের ফল আপনি একটু পরে পাওয়া শুরু করবেন।’

মাহমুদউল্লাহ এমন কষ্টের ফল হিসেবেই ২২৯ বলের ইনিংসে ১৪৬ রান তুলে নিয়েছেন। নয় বছর আগে এই হ্যামিল্টনেই টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তিনি। মাঝে আরও দুটি সেঞ্চুরির পর সেই হ্যামিল্টনে এসেই পেলেন চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা। মাহমুদউল্লাহ কি এজন্য-ই হ্যামিল্টনকে ভালোবেসে ফেলেছেন? সংবাদ সম্মেলনে তো বলে গেলেন, ‘হ্যামিল্টন শহরটা অনেক সুন্দর, মাঠটা অনেক সুন্দর। আমি ভালোবাসি হ্যামিল্টনকে।’