ওয়ানডেতে চার নম্বরের অন্যতম সেরা মুশফিকুর রহিম।
ওয়ানডেতে চার নম্বরের অন্যতম সেরা মুশফিকুর রহিম।

‘পোলার্ড’ ‘রাসেল’ নন, মুশফিককেই বেশি দরকার যেখানে

কাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিম খেলেছেন ৮৭ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। যে ইনিংসটিই বাংলাদেশের ২৫৭ রান সংগ্রহের মেরুদণ্ড হয়ে আছে। তাঁর এই ইনিংস বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যে কারোরই চোখ আটকে যেতে পারে। মাত্র চারটি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি, ছক্কা একটি। স্ট্রাইকরেট ৯৬.৬৬। বাউন্ডারিতে এসেছে মাত্র ২২ রান। বাকি ৬২ রানই এক-দুইয়ে!

কাল কী রকম গরম ছিল, সবাই তা জানেন। এমন গরমে দৌড়ে দৌড়ে বেশির ভাগ রান নিয়েছেন মুশফিক। যেখানে ৮০ স্ট্রাইকরেট রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন সবাই, সেখানে মুশফিককে দেখে মনে হয়েছে, কী অবলীলাতেই না খেলে চলেছেন তিনি।

কাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের ৬২ রানই নিয়েছেন দৌড়ে

শেষ পর্যন্ত মুশফিকের ইনিংসটি ‘ম্যাচজয়ী’ হিসেবে প্রমাণিত। বাংলাদেশের ২৫৭ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ২২৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে হেরেছে ৩৩ রানে। ওয়ানডে লিগে এ জয়ে ১০টি মূল্যবান পয়েন্টও পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। মুশফিক তাঁর এ ইনিংসের বিশ্লেষণটা করেছেন নিজেই, ‘আমি বিশালদেহী কেউ না। পোলার্ড বা রাসেলও নই। সহজে বাউন্ডারি মারতে পারি না। নিজের শক্তির জায়গায় থাকার চেষ্টা করি। কন্ডিশনও সুযোগ দেয়নি খুব বেশি বাউন্ডারি মারার। তাই সময় নিয়েছি, আস্তে আস্তে রান বাড়িয়েছি।’

তাঁর শরীরে যে পোলার্ডের মতো জোর নেই, সেটি মানছেন মুশফিক।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ড কিংবা আন্দ্রে রাসেলের মতো বিশালদেহী কিংবা সহজে ছক্কা মারতে পারার ক্ষমতা না থাকলেও মুশফিকের রেকর্ড বলছে সবশেষ পাঁচ বছরে ওয়ানডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ওয়ানডেতে চার নম্বরে যে ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করতে নামেন, তাঁদের মধ্যে মুশফিক ‘তৃতীয় সেরা’। তাঁর আগের দুটি জায়গা নিউজিল্যান্ডের রস টেলর ও ইংল্যান্ডের সীমিত ওভার দলের অধিনায়ক এউইন মরগান। টেলর আছেন শীর্ষে, মরগান মুশফিকের ঠিক আগে। মুশফিক এ সময় ৫১.২৯ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৬১৬ রান, স্ট্রাইকরেট ৮৬.৬৭। টেলরের রান ৬০ গড়ে ৪ হাজার ১। মরগানের রান ৩ হাজার ১৬৪।

চার নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানদের নানামুখী দায়িত্ব সামলাতে হয়।

ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের চার নম্বর জায়গাটির দায়িত্ব একেক সময় একেক রকম। অননুমেয় এ দায়িত্ব পালন করতে হয় যাকে, তিনি কখনোই ঠাওর করতে পারেন না, তাঁকে কখন মাঠে নামতে হবে। অনেক সময় প্যাডট্যাড পরে ড্রেসিংরুমে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়, কখনো–বা আবার টপ অর্ডার ভেঙে পড়লে অনেক আগেই নেমে যেতে হয়। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনই আসলে চার নম্বর ব্যাটসম্যানের আসল পরীক্ষা। তাঁকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাটিংয়ে সামলাতে হয় শুরুর ধাক্কা। চোখ রাখতে হয় স্কোরবোর্ডের দিকেও। দলের সংগ্রহটাকে চলনসই করার দায়িত্বটাও যে তখন তাঁর।

একটা সময় ছিল মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের স্পিনের বিপক্ষে দুর্দান্ত হতে হতো। এখন তো ফাস্ট বোলারদের মাঝের ওভারগুলোতেও ব্যবহার করার চল শুরু হয়েছে। মোট কথা, এখন চার নম্বর ব্যাটসম্যানদের স্পিন-ফাস্ট বোলিং দুইয়ের বিপক্ষেই পটু হতে হয়। সাদা বলের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের ব্যবহারও বেড়েছে। মোট কথা ব্যাটিং অর্ডারের এ জায়গা অনেক গুরুদায়িত্বের।

এমন দায়িত্ব সামলাতে পোলার্ড-রাসেলরা নন, মুশফিকদেরই যে বেশি প্রয়োজন।