ক্রুনাল পান্ডিয়ার বিপক্ষে বড় অভিযোগ তুলেছিলেন দীপক হুদা। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে বরোদা দলের হয়ে খেলার কথা ছিল এই অলরাউন্ডারের। দলের সহ–অধিনায়কও তিনি। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগের দিন হঠাৎ করে টিম হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ হিসেবে পান্ডিয়ার দুর্ব্যবহারের কথা জানিয়েছিলেন।
দীর্ঘ এক ই-মেইলে হুদা অভিযোগ করেছিলেন, নিয়মিত তাঁর সঙ্গে বাজে আচরণ করেন পান্ডিয়া। এমনকি অনুশীলনেও বাধা দেন। তাই দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে সবার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছিলেন।
হিতে বিপরীত হলো তাঁর। অভিযোগ পেয়ে প্রথমে দলের ম্যানেজারের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় ছিল বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ)। প্রতিবেদন পেয়ে উল্টো ধমক খেতে হলো হুদাকে। বিসিএর প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, এভাবে দলকে বিপদে ফেলায় হুদার বিপক্ষে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে অভিযোগ পাঠাবে তারা।
টুর্নামেন্ট উপলক্ষে জৈব নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে আছে ৩৮টি দল। হুদার এভাবে দল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ায় তাই বিপাকে পড়েছে বরোদা। বলয় ভেঙে এখন নতুন কোনো ক্রিকেটারকে ডেকে আনতে পারছে না। এমন অবস্থায় কাল মাঠে নেমেছিল বরোদা। উত্তরাখন্ডকে ৫ রানে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে তারা। হুদার বিপদ বাড়িয়েছে পান্ডিয়ার পারফরম্যান্স। ৪২ বলে ৭৬ রানের পর ৩৩ রানে ২ উইকেট পেয়ে অধিনায়কই জয় নিশ্চিত করেছেন।
বিসিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শিশির হট্টঙ্গডি এ ব্যাপারে কড়া এক ই-মেইল পাঠিয়েছেন দীপক হুদাকে। মেইলে বলা হয়েছে, নিজেকে দল–অন্তঃপ্রাণ বললেও আচরণে বিপরীত কিছুই প্রমাণ করেছেন, ‘এমন কোনো দল নেই যেখানে মতের অমিল নেই কিন্তু দল রেখে চলে যাওয়া এবং সংবাদমাধ্যমে শুধু নিজের দিকের গল্প বলাটা আসলে প্রচার পাওয়ার চেষ্টা। এটা খেলার আগে নিজেকে প্রাধান্য দেওয়াও প্রমাণ করছে।’
বিসিএর প্রধান নির্বাহী এটাও বলেছেন, আইপিএলে হুদার দল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সঙ্গেও তাঁর এ বিষয়ে কথা হয়েছে। এবং হুদার বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ পাঠাবেন তাঁরা, ‘আমি আপনার ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের সঙ্গে কথা বলেছি এবং যা বুঝতে পেরেছি তাতে বিসিসিআইয়ের কাছে আপনার অসদাচরণের ব্যাপারে অবশ্যই লিখব…দল ও অন্যদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে মতামত নেওয়ার পর আমরা বিশ্বাস করি এ বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। শুধু সংস্থাতেই (বিসিএ) নয়, বোর্ড এবং আইপিএল পরিচালনা কাউন্সিলেও।’
এরপরই হুদা ই-মেইলে যে দাবি করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হত্তনগড়ি, ‘সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে এবং মতানৈক্যের কারণে দল ছেড়ে চলে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি জানিয়ে দিয়েছেন দলের চেয়ে আপনি নিজেকেই বেশি গুরুত্ব দেন এবং এটাই দলের প্রতি আপনার নিবেদন ও আচরণ প্রকাশ করে দিয়েছে। একটা সংস্থা ও এই খেলার অভিভাবক হিসেবে আমরা এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না।’
গত পরশু বরোদা দল ও সংবাদমাধ্যমের কাছে একটি ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন হুদা। সেখানে লিখেছিলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি খুবই হতাশ, বিষণ্ন এবং চাপের মধ্যে আছি। কয়েক দিন ধরেই আমার দলের অধিনায়ক জনাব ক্রুনাল পান্ডিয়া সতীর্থদের সামনে আমাকে গালাগালি করেছেন। এমনকি ভাদোদারা রিলায়েন্স স্টেডিয়ামে খেলতে আসা অন্য সব রাজ্য দলের খেলোয়াড়দের সামনেও আমাকে অপমান করা হয়েছে। আজ আমি নেটে অনুশীলন করছিলাম এবং প্রধান কোচ জনাব প্রভাকরের অনুমতি নিয়ে আগামীকালের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। এরপর ক্রুনাল নেটে এলেন এবং আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করলেন। আমাকে বললেন, “আমিই অধিনায়ক, কোচ আবার কে? বরোদা দলের আমিই সর্বেসর্বা।” এরপর দাদাগিরি দেখিয়ে আমার অনুশীলন থামিয়ে দিলেন। আমি জীবনে কখনো কোনো অধিনায়কের কাছ থেকে এমন আচরণের শিকার হইনি। আমি দলের জন্য খেলি এবং সব সময় দলের ভালোটা দেখি।’
বরোদা দল যে তাঁর সঙ্গে একমত নয়, সেটা তো তাদের প্রধান নির্বাহীর মেইলেই স্পষ্ট। এবার দেখা যাক, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এ ব্যাপারে কী ধারণা পোষণ করে।