গ্রীষ্মটা স্বপ্নের মতো কেটেছে তাঁর। ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেকের কিছুদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ডকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেওয়া দলের অংশ হয়েছেন, তারপর আলো ছড়ালেন অ্যাশেজে। কিন্তু এরপর এত দিনে সংবাদমাধ্যমের সামনে আর আসা হয়নি জফরা আর্চারের। কাল এলেন যখন, একের পর এক অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখিই হতে হলো ইংল্যান্ডের ২৫ বছর বয়সী ফাস্ট বোলারকে।
ম্যানচেস্টারে সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের কাছে এখন পর্যন্ত দুই দিন শেষে পিছিয়ে আছে ইংল্যান্ড, আর্চারের কাল সংবাদ সম্মেলনের আবহটাই অপ্রিয় থাকার কথা। তার ওপর সেখানে প্রশ্ন হলো তাঁর অপ্রিয় সব প্রসঙ্গ নিয়ে। কখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সম্প্রতি শেষ হওয়া সিরিজে তাঁর কোয়ারেন্টিনের নিয়ম ভাঙা নিয়ে, তো কখনো পাকিস্তানের তরুণ ফাস্ট বোলার নাসিম শাহর কাছে গতির লড়াইয়ে তাঁর হেরে যাওয়া নিয়ে। আর্চার অবশ্য দুটিকেই তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। নাসিমের সঙ্গে লড়াই নিয়ে বললেন, ‘দেখা যাক আগামীকাল (আজ) সকালে বা বিকালে ও কেমন করে।'
গত বছরের মে মাসে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষিক্ত আর্চারকে ইংল্যান্ড দলে নেওয়ার পেছনেই সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে তাঁর বলের গতি, যা মধ্য আশি থেকে নব্বই মাইলের ঘরেই থাকে সব সময়। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, বলের গতিতে হেরফের করতে আর্চারের বোলিং অ্যাকশনে দৃশ্যত কোনো বদল আনতে হয় না, যা তাঁকে আরও রহস্যময় করে তোলে।
সেই আর্চারই কাল বল করে গেলেন কিছুটা ধীর গতিতে। ৯০ মাইলের নিচেই থাকল বেশি। অন্যদিকে পাকিস্তানের ১৭ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার নাসিম শাহ ছিলেন কাল দিনের দ্রুততম বোলার। ৯০ মাইলের ঘরেই থাকল তাঁর অধিকাংশ বলের গতি।
তাহলে কি পাকিস্তানি তরুণ ফাস্ট বোলারের কাছে গতির লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছেন আর্চার? এমন প্রশ্নে ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার অবশ্য ছিলেন ভাবলেশহীন। বললেন, গতি ইচ্ছে করেই কমিয়ে রেখেছেন, ‘ওটা ইচ্ছা করেই করেছি। প্রতিদিনই তো আর কেউ ৯০ মাইল গতিতে বল করবে না!'
বরং নাসিম শাহকে নিয়ে আর্চারের হুঁশিয়ারি, ‘শাহ ঘণ্টায় ৯০ মাইল গতিতে বল করছে, সেটা দেখেছি। দেখা যাক কাল (আজ) সকালে বা বিকালে ও কেমন গতিতে বল করে! কেউ তো আর রোবট নয়। আমি দেখতে চাই ম্যাচ আরও গড়ালে ও কী করতে পারে।’ কেন গতি কম রাখছেন, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আর্চার, ‘এটা এমন উইকেট নয় যেখানে আপনি গতি বাড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। দ্বিতীয় দিনেই উইকেটে স্পিন ধরেছে, এটাই অনেক কিছু বলে।’
স্পিন যে ধরছে, সেটা কাল ইয়াসির শাহর বোলিংয়ের সময়ই দেখা গেছে। ওলি পোপের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেওয়া জো রুটকে ফিরিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তান লেগ স্পিনার। পিচে যেভাবে স্পিন ধরছে, তাতে ম্যাচ যত গড়াবে, ইয়াসিরের দাপট আরও বাড়তে পারে।
ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে সব আশা-ভরসার কেন্দ্রে এখন ওলি পোপ। পাকিস্তানি পেসারদের দাপটে ইংল্যান্ডের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হলেও পাঁচে নামা পোপ এসে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। একটা সময় ১২ রানেই ৩ হারানো ইংল্যান্ড তাঁর ৬৭ বলে ৬ চারে অপরাজিত ৪৬ রানের সৌজন্যেই কাল দিন শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৯২ রান নিয়ে। ক্রিজে সঙ্গী জস বাটলারকে (১৫*) নিয়ে আজ দিন শুরু করবেন পোপ।
আর্চারের আশা এ দুজনকে ঘিরেই। টেস্টে উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে বাটলারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আর্চারের কথা, ‘জসকে আমার কাছে অনেক উঁচু মানের একজন বলে মনে হয়। সত্যিকারের প্রতিভাবান একজন ব্যাটসম্যান। কোনো সংশয় নেই ও আর পোপ... বলব না আমাদের খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলবে, কারণ আমরা খাদে পড়েছি বলে মনে করি না আমি - তবে বড় জুটি গড়ে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে।‘
পাকিস্তান আশায় থাকবে দিনের শুরু থেকেই দাপট দেখানোর। কাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে যে নাটাইটা মিসবাহ-উল হকের অধীন দলটার হাতেই। শান মাসুদের দুর্দান্ত ১৫৬ রানের ইনিংসে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে করে ৩২৬ রান। জবাবে নতুন বলে শুরুতেই বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। শাহীন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ আব্বাস মিলে ১২ রানের মধ্যেই দুই ইংলিশ ওপেনার ররি বার্নস ও ডম সিবলিকে ফেরান। এরপর আব্বাসের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড বেন স্টোকস। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫০ তম ইনিংসে এসে প্রথমবার শূন্য রানে আউট হলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ-নায়ক।
এরপর রুট-পোপের ৫০ রানের জুটি। রুট ফিরে গেলেও পোপ টিকে আছেন ইংল্যান্ডের ভরসা হয়ে। বাটলারের সঙ্গে তাঁর ৩০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিকে ঘিরেই ইংল্যান্ডের সব আশা।