পাকিস্তান সফরে গিয়ে টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের
পাকিস্তান সফরে গিয়ে টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের

বলছেন মাইকেল হোল্ডিং

পাকিস্তানকে ‘না’ বলা ইংল্যান্ডের পশ্চিমা দেমাগ, ভারত হলে বলত না

সিদ্ধান্তটার অনেক দিন হয়ে গেছে। পাকিস্তান এ নিয়ে প্রথমে ক্ষোভ ও পরে হতাশা জানিয়ে এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর সেটির প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত নিজেদের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের পাকিস্তান সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা এখনো থামছে না।

নতুন করে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) ধুয়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিং। গত শতকের সত্তর-আশির দশকে গতির ঝড় তোলা হোল্ডিংয়ের চোখে, পাকিস্তানে যেতে এভাবে অনিচ্ছা দেখানো আসলে আরেকবার ইংলিশদের ‘পশ্চিমা ঔদ্ধত্যের’ই প্রকাশ।

পাকিস্তানের বদলে একই পরিস্থিতিতে সফরটা ভারতের মাটিতে হলে ইংলিশরা এমন করত না বলেই মনে হচ্ছে ক্যারিবীয় কিংবদন্তির। কারণ? ভারত যে ক্রিকেটে ‘ধনী ও শক্তিশালী!’

মাইকেল হোল্ডিং ধুয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে

এ মাসেই ইংল্যান্ডের ছেলেদের ও মেয়েদের দলের সাদা বলের সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খেলোয়াড়দের ‘মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা’ আর নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়ে ইংল্যান্ড সফর বাতিল করে।

‘(পাকিস্তান সফরের কথা জানিয়ে) ইসিবি যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটা আমি মোটেও বিশ্বাস করি না। কোনো সারমর্মই নেই সেটার। কেউই সামনে আসছে না, কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। কারণ ওরা জানে, ওরা যা করেছে সেটা ভুল। সে কারণে ওরা একটা বিবৃতি দিয়ে সেটির পেছনে মুখ লুকিয়েছে,’ গতকাল মঙ্গলবার ক্রিকেট রাইটার্স ক্লাবের পিটার স্মিথ পুরস্কার পাওয়ার পর বিবিসি স্পোর্টে কথাগুলো বলেছেন হোল্ডিং।

গত দশকের প্রায় পুরো সময়ই নিজেদের মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেনি পাকিস্তান দল

ইংল্যান্ডের পাকিস্তান সফরের বাতিলের সঙ্গে বেশ আলোড়ন তোলা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর বেশ মিল পাচ্ছেন হোল্ডিং। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনটা শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে বেশ সরব ছিলেন ৬৭ বছর বয়সী ক্যারিবীয়।

সেখানেও পশ্চিমা ঔদ্ধত্য টের পাওয়া হোল্ডিং এবারও তা-ই দেখছেন, ‘এটা (যথাযথ কোনো কারণ না দেখিয়ে ইংল্যান্ডের সফর বাতিল করা) দেখে আমার ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের কথা মনে পড়ছে। সেটা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে যাব না। কারণ, অনেক বলেছি সেটা নিয়ে। তবে এবারের এই ঘটনাও আমাকে যে বার্তা দিচ্ছে, সেটা হলো, এটাও সেই একই পশ্চিমা ঔদ্ধত্য। ব্যাপারটা এমন, আমি আপনার সঙ্গে যেমন ইচ্ছা তেমন আচরণ করব, তাতে আপনি যা-ই মনে করুন না কেন। আমি যা ইচ্ছা তা-ই করব।’

নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড দল সফর না করায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পাকিস্তান

সফরটা হলে ২০০৫ সালের পর এই প্রথম পাকিস্তান সফরে যেত ইংল্যান্ডের কোনো দল। তাদের পাকিস্তান সফর বাতিল পাকিস্তানের জন্য ছিল দ্বিতীয় ধাক্কা। কারণ, এর তিন দিন আগেই নিরাপত্তা শঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে নিউজিল্যান্ড দল সফরে গিয়েও কোনো ম্যাচ না খেলে পাকিস্তান থেকে চলে যায়। নিউজিল্যান্ডও পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ১৮ বছর পর।

পাকিস্তানের জন্য তাই সহমর্মিতাই ঝরেছে হোল্ডিংয়ের কণ্ঠে, ‘(করোনার সময়ে) যখন টিকা দেওয়া শুরু হয়নি, তখনই ছয়-সাত সপ্তাহের জন্য ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল পাকিস্তান। সেখানে থেকেছে, ক্রিকেট খেলেছে, ইংল্যান্ড যে সহযোগিতা চেয়েছে, ওদের জন্য সেটা করেছে। কম করে বললেও বলতে হয়, ওরা ইংল্যান্ডকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে।’

সেই পাকিস্তানের প্রতিই ইংল্যান্ডের এমন আচরণ দেখে বিস্মিত হোল্ডিং বলছেন, পাকিস্তানের জায়গায় সফরটা ভারতে হলে ইংল্যান্ড এমন কিছুর সাহসই দেখাত না, ‘পাকিস্তানে ওদের মাত্র চার দিন থাকার কথা ছিল না? এ ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিঃসংশয় যে ভারতের ক্ষেত্রে ওরা এমনটা করত না। কারণ, ভারত ধনী ও শক্তিশালী।’