>সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে অনুশীলনে নেমেই পেলেন পায়ে চোট। মিরপুরে সিরিজ বাঁচানোর টি-টোয়েন্টির আরও এক দুঃসংবাদ, সাকিব জ্বরে ভুগছেন। কাশি আছে। সঙ্গে পেটের পীড়া। আরও একবার কঠিন পরিস্থিতিতে দুর্দান্ত সাকিবেরই দেখা মিলল।
সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে অনুশীলনে নেমেই পেলেন পায়ে চোট। খেলবেন কি খেলবেন না, এটা নিয়ে ছিল সংশয়। সাকিব খেললেন। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে করলেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ রান।
মিরপুরে সিরিজ বাঁচানোর টি-টোয়েন্টির আরও এক দুঃসংবাদ, সাকিব জ্বরে ভুগছেন। কাশি আছে। সঙ্গে পেটের পীড়া। আবারও সাকিবের খেলা নিয়ে সংশয়। এর মধ্যে যোগ হয়েছে মাঠের বাইরের কিছু ঘটনা। সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সতীর্থদের ব্যর্থতা নিয়ে বলা ‘বাকি ব্যাটসম্যানদের জিজ্ঞেস করুন, কেন তারা ভালো ব্যাট করতে পারল না’ কথাটা নিয়ে হলো বেশ আলোচনা-সমালোচনা। সিরিজ বাঁচানোর তাগিদ, নিজের অসুস্থতা আর চারপাশে চলতে থাকা নানা কথা, আবারও কঠিন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হলো সাকিবকে।
পরিস্থিতি যত কঠিন, সাকিব তত দুর্দান্ত, অতীতে অনেকবার দেখা গেছে। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে—২০১১ সালের আগস্টে বিতর্কিতভাবে অধিনায়কত্ব হারানোর কয়েক মাসের মধ্যেই প্রথমবারের মতো হয়েছিলেন টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। ওই বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা।
২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ দিকে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার নিয়ে যখন চারদিকে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা, তখনই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললেন ৬৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। একই বছরের জুনে বিসিবি আরোপিত ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে ফিরলেন, সেটিতেও দেখা গেল দুর্দান্ত সাকিবকে। এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নিয়ে নাম লিখে ফেললেন ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের পাশে।
সাকিব ব্যাটিং করতে ভুলে গেছেন, এই আলোচনা যখন ক্রমই জোরালো হচ্ছে, তখনই সাকিব নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে কিউইদের বিপক্ষে খেললেন ২১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। গত মাসে মুশফিক রেকর্ডটা ভেঙে দেওয়ার আগেই সেটাই ছিল টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালের মার্চে কলম্বোয় বাংলাদেশের শততম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেই এলোপাতাড়ি শট খেলায় কড়া প্রতিক্রিয়া এল টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে। সেই সাকিব পরের দিন সেঞ্চুরি করে ফিরলেন। এমনকি সিরিজসেরাও হলেন। গত বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স নিয়ে যখন মৃদু সমালোচনা শুরু হয়েছে, তখনই কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভীষণ চাপের মধ্যে খেললেন ১১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ২২৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জেতালেন। বাংলাদেশ চলে গেল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে।
কাল সিরিজে ফেরার ম্যাচে যে খেলাটা খেললেন, শুধু দুর্দান্ত বললেও যেন কম বলা হয়! অপরাজিত ৪২ রানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট। ৪২ রানের চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তাঁর ৫ উইকেট পাওয়াটা। নিশ্চয়ই জানেন, শিশিরে স্পিনারদের বল গ্রিপ করা কতটা কঠিন। শিশিরভেজা মাঠে বোলারদের কাজটা এমনি কঠিন। বোলাররা যদিও-বা সফল হন, পেসারদের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অথচ কাল সবচেয়ে সফল বাংলাদেশের স্পিনাররা। বাংলাদেশের স্পিনাররা না বলে বলা উচিত সাকিব আল হাসান।
কঠিন পরিস্থিতিতে, ভীষণ চাপে ভালো খেলার রহস্যটা কাল জানতে চাইলে মুখে হাসি ছড়িয়ে সাকিব বলেন, 'চ্যালেঞ্জ থাকলে চ্যালেঞ্জটা নিতে ভালো লাগে। চেষ্টা থাকে দলে অবদান রাখার। যদি হয় ভালো, না হলে অনেক সময় দেখতে খারাপ লাগে, তবে সব সময় চেষ্টা থাকে।'
তাঁর অনেক বিষয় নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, এই একটা জায়গায় সাকিবকে নিয়ে বিতর্ক হওয়ার সুযোগ নেই। বাইরে যা-ই হোক, মাঠে যখন তিনি খেলতে নামেন, স্পর্শ করে না কিছুই। সেখানে তিনি ভীষণ নিবেদিত, মস্তিষ্কের ব্যবহারে, স্কিলের সর্বোচ্চ প্রদর্শনীতে তিনি সব সময়ই সিদ্ধহস্ত। আর এ কারণেই তিনি বছরের পর বছর ‘নাম্বার ওয়ান’!