>বাংলাদেশ দল ভাবতেই প্রথমেই যে কজনের ছবি মনের পর্দায় স্লাইড করে যায়, সেই চেনামুখগুলো তিনটাই থাকছে না কাল। মাশরাফি বিন মুর্তজা টেস্ট খেলছেন না দশ বছর হচ্ছে। সাকিব-তামিমকে ছাড়াও বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে গত বছর ব্লুমফন্টেইন টেস্টে...
পঞ্চপাণ্ডবের তিনই নেই! মাশরাফি বিন মুর্তজার থাকার তো প্রশ্নই আসে না, চোট তাঁকে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় বলে দিয়েছে। এই সিরিজে সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের না থাকা আগেই নিশ্চিত ছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাঁচ মহীরূহের তিনজনকে ছাড়াই যে কালকের একাদশটাকে দেখতে হবে, এ তো আর অজানা কিছু নয়। প্রথম বাক্যে তাই বিস্ময়চিহ্নটা একটু বাড়াবাড়িই লাগতে পারে। সাকিব-তামিম-মাশরাফিকে ছাড়া টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি দিন আগের কথাও নয়। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই দ্বিতীয় টেস্টেই এমন ঘটেছে।
কিন্তু তবু ভাবতেই কেমন যেন লাগে! বাংলাদেশ দল ভাবতেই প্রথমেই যে কজনের ছবি মনের পর্দায় স্লাইড করে যায়, সেই চেনামুখগুলো থাকছে না। সিলেটের জন্য এটা সবচেয়ে হতাশার। কালকের টেস্ট দিয়ে সিলেটের এই প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো ভেন্যুটা নতুন যুগে পা রাখতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অষ্টম ভেন্যু হিসেবে টেস্ট অভিষেক হচ্ছে সিলেটের। আর সেই ম্যাচে কি না নিয়মিত টেস্ট অধিনায়কই নেই!
সাকিব আল হাসানের না থাকা দলের জন্যই বিরাট এক সমস্যা। সাকিব একের মধ্যে দুই (ব্যাটিং-বোলিং), কখনো তিন (দুর্দান্ত ফিল্ডিং), কখনো চারও (অধিনায়কত্ব)। তামিম ইকবাল তো আশ্চর্য জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে গিয়ে ওপেনিংয়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক হয়ে উঠেছেন। তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান নিঃসন্দেহে তিনিই। তামিম-সাকিবকে সিলেট কতটা মিস করবে, সেটা কাল টসের পর বোঝা যাবে। তবে বাংলাদেশ দলের মধ্যে এই দুজনের না-থাকাটা একই সঙ্গে শূন্যতা এবং সুযোগ নামের দুটি শব্দের অনুরণন তৈরি করছে।
ওয়ানডে সিরিজের আগের কথাগুলোই টেস্ট সিরিজ শুরুর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এল। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের না-থাকা দলের জন্য সংকটের, আবার সম্ভাবনারও। সম্ভাবনা নতুনদের নিজেদের প্রমাণের। এমনিতেই ১৫ জনের এই স্কোয়াডের ১০ জনের সম্মিলিত টেস্ট খেলার সংখ্যা এক মুশফিকের মোট টেস্টেরও ১৪ ম্যাচ কম। ওই ১০ জন মিলে যে খেলেছেন ৪৮ টেস্ট, মুশফিক একাই ৬২। চারজন টেস্ট স্কোয়াডে ডাকই পেলেন প্রথমবার। নাজমুল হোসেন, আবু জায়েদ দুজন মিলে খেলেছেন তিন টেস্ট। মোস্তাফিজেরও টেস্ট সংখ্যা ১০ পার হয়নি। লিটনও তা-ই। মিরাজ একটু এগিয়ে, খেলেছেন ১৪ টেস্ট।
আজ সংবাদ সম্মেলনেও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ঘুরেফিরে সে-ই কথাই বললেন। সাকিব না থাকায় অধিনায়কত্বই শুধু পাননি, উপজাত হিসেবে এই ভাবনাও যোগ হয়েছে সাকিব-ঘাটতি পূরণে টিম কম্বিনেশন কেমন হবে। মাহমুদউল্লাহ তাই এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতেই প্রথমে ভূমিকায় বলে নিলেন, ‘সাকিব সব সময় আপনাকে ওই ভারসাম্যটা এনে দেয়। সাকিব যেহেতু নেই তাই আমাদের অতিরিক্ত একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার নিয়ে খেলতে হবে। সাকিব থাকলে দলের ভারসাম্য নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হয় না।’
এরপরই আশার দিকটা দেখাতে চাইলেন, ‘এখন যেটা সব থেকে বড় সুযোগ, বারবার এ কথাটা বলি; এটা তরুণদের জন্য এবং আমাদের সবার জন্য দারুণ একটা সুযোগ। যেন আমরা ভালো পারফর্ম করতে পারি। তামিম-সাকিব যেহেতু নেই সবার জন্য এটা সমান সুযোগ। আমার জন্যও তা-ই। আমরা ওই সুযোগটিকে কীভাবে দেখছি, কতটুকু উদ্গ্রীব হয়ে আছি পারফর্ম করার জন্য...এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের নিতে হবে। খেলোয়াড়রা সবাই সুযোগের অপেক্ষা আছে, সবাই ভালো পারফরম্যান্সের জন্য অপেক্ষায় আছে।’
এই তরুণদের উদাহরণ দিতেই টানলেন মোহাম্মদ মিঠুন ও নাজমুল ইসলামের প্রসঙ্গ। কাল এই দুজনের একজনের অভিষেক হয়ে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে। মাহমুদউল্লাহ বললেন, ‘আমার মনে হয় ওরা যেভাবে খেলছে, টেস্ট স্কোয়াডে তাদের একটা সুযোগ প্রাপ্য। অপু-মিঠুন দুজনই সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো ফর্মে আছে। ওই আত্মবিশ্বাসটা যদি টেস্ট ক্রিকেটে নিয়ে আসতে পারে, তাহলে ভালো পারফর্ম করবে।’