>বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সামর্থ্য অনুযায়ী খেললে আফগানিস্তানকে হারানো কোনো সমস্যা নয়। তিনি আশা করেন, রশিদ, মুজিবদের মতো স্পিনারদের সামলাতে বাংলাদেশের নিশ্চয়ই দারুণ কোনো পরিকল্পনা আছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য একটু অন্য রকম। এই ম্যাচে জিতলে কেউ খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখাবে না, কিন্তু হারলেই সবাই সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠবে। সে কারণে সাউদাম্পটনের এই ম্যাচ আমাদের ক্রিকেটারদের ওপর একধরনের বাড়তি চাপ তৈরি করবে। তবে এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে আজকের ম্যাচটি খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়।
ভারতের বিপক্ষে আফগানিস্তান খুব ভালো খেলেছে—এটা একটা চিন্তার বিষয়। তবে দিন শেষে তারা হেরেছে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা দেখিয়ে দিয়েছে অভিজ্ঞতার মূল্য কত! বাংলাদেশ আফগানিস্তানের চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ দল। আমি আশা করি, আজ অভিজ্ঞতা দিয়েই আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলবে মাশরাফি-সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা। দল হিসেবে আমরা এরই মধ্যে নিজেদের প্রমাণ করেছি। বিশ্বসেরা বেশ কয়েকজন বোলারকেই আমরা ভালোভাবে সামলেছি। হ্যাঁ, আজ আফগানিস্তানের হয়ে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাবে রশিদ খান ও মুজিব-উর-রহমান কিংবা মোহাম্মদ নবীর মতো স্পিনাররা। তবে আমি মনে করি রশিদ, মুজিবদের মতো বোলারদের নিয়ে এরই মধ্যে খুব ভালো পরিকল্পনা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট করে ফেলেছে। আমি সব সময়ই একটা কথা বলি, আজও বলব। আমাদের ক্রিকেটাররা যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী মাঠে খেলতে পারে, তাহলে কোনো সমস্যাই সমস্যা নয়। সে হিসাবে রশিদ-মুজিব-নবীদের মতো স্পিনারদের মোকাবিলা করার জন্যও নিজেদের খেলাটা খেললেই হবে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারা এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল।
আফগানদের শক্তি নিঃসন্দেহে তাদের বোলিং লাইনআপ। সেটি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বোঝা গেছে। কী অবলীলায় রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো ব্যাটসম্যানদের তারা বিপাকে ফেলেছে। তবে আমার কেন যেন মনে হয়, সেদিন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের একটা বাজে দিন গেছে। এমনটা প্রতিদিন করা সম্ভব নয়। ভারতের বিপক্ষে আফগানিস্তান কী খেলেছে, সেটি মাথা থেকে পুরোপুরি দূর করে বাংলাদেশ যদি আজ মাঠে নামে, সেটিই ভালো হবে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই আমরা প্রথম ১০ ওভারে ভালো বোলিং করেছি। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে শেষ ১৫ ওভার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ১৫ ওভারই খেলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এদিকটাতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট আমি নিশ্চিত শেষ ১৫ ওভারের ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কাজ করে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ব্যাটিংয়ে আমরা খুব ভালো করেছি। ৩৮৪ রানের জবাবে ৩৩৩ রানে থামা যেকোনো বিচারেই দুর্দান্ত। কিন্তু আমার মনে হয়, সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৩৮৪ রান করে ফেলার পরপরই বাংলাদেশ হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু মাঠে ভালো ব্যাটিংয়ের পর যখন সম্ভাবনা জাগে, ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে। মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিক সেটি গ্যাপটা পূরণ করার চেষ্টা করেছে। আমার মনে হয় শুরুতে সৌম্য সরকারের ওই রান আউটটি আমাদের বেশ পিছিয়ে দিয়েছে। সৌম্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমাদের রান তাড়া অনেকটাই এগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সে আরও কিছুক্ষণ থাকলে আমাদের লাভ হতো। তামিম ভালো খেলছিল। কিন্তু সেট হয়ে যাওয়ার পর ওভাবে আউট হওয়াটা ওর উচিত হয়নি।
যা–ই হোক, আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে দল ভালো করবে—এ প্রত্যাশাটা রাখছি। আমি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাইফউদ্দিনকে বেশ মিস করেছি। ওকে নিয়ে কিছুটা বিতর্ক হচ্ছে, সেটি কাম্য নয়। আমি চাই বিশ্বকাপের মধ্যে এসব বিতর্ক বন্ধ হবে। তবে আমি চাই, সাইফ চোট কাটিয়ে আবার দলে ফিরুক।
সেমির সম্ভাবনা এখনো আছে। কিন্তু আমি খেলোয়াড়দের বলব, সেমিটেমি নিয়ে ভেবে চাপ বাড়িয়ে কাজ নেই। নিজেদের কাজটা করে যাক দল। হাতে তিনটি ম্যাচ আছে। এখনই তিনটি ম্যাচ নিয়ে ভাবার কিছু নেই। আগে আফগানিস্তানকে হারাই, পরে দেখা যাবে। আমি নিশ্চিত, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জেতার পর পরের দুটি ম্যাচে (ভারত-পাকিস্তান) বাংলাদেশ দল সামর্থ্যের চেয়েও বেশি দিয়ে লড়বে এবং দেশের মানুষকে গর্বিত করবে।